ছবি সংগৃহীত

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত রাজধানীর ৭ কলেজ: ইতিবাচক না নেতিবাচক?

মিজানুর রহমান
সহ-সম্পাদক
প্রকাশিত: ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ১৪:৫৮
আপডেট: ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ১৪:৫৮

রাজধানীর সাতটি সরকারি কলেজের অধ্যক্ষদের সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক ও উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) নাসরীন আহমাদ। ছবি: সংগৃহীত

(প্রিয়.কম) রাজধানী ঢাকার জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত সাতটি সরকারি কলেজকে আবারও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করা হয়েছে। ১৯৯২ সালে এক আইনের মাধ্যমে এ কলেজগুলোকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্তমুক্ত করা হয়। এরপর থেকে কলেজগুলো জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ন্ত্রণে থাকলেও ২৪ বছর পর আবারও একই পুরানো অবস্থানেই ফিরে গেল সরকার।

২০১৪ সালের শেষ দিকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পরিদর্শনে গিয়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত ২৭৯টি সরকারি কলেজকে বিভাগীয় পর্যায়ের পুরানো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করার নির্দেশনা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরের বছরের ৫ আগস্ট বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সঙ্গে এক বৈঠকে একই বিষয়ে পুনরায় তাগাদা দেন প্রধানমন্ত্রী।

সর্বশেষ ১৬ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত রাজধানীর কলেজগুলোকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধিভুক্ত করার কথা জানায়।

কলেজগুলো হলো- ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, কবি নজরুল সরকারি কলেজ, বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ, সরকারি বাঙলা কলেজ ও সরকারি তিতুমীর কলেজ।

এখন থেকে এ কলেজগুলোতে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে বর্তমানে অধ্যয়নরত এক লাখ ৬৭ হাজার ২৩৬ জন শিক্ষার্থী এবং এক হাজার ১৪৯ জন শিক্ষক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত হিসেবে গণ্য হবেন।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, প্রথমে ঢাকার কলেজগুলোর ক্ষেত্রে এ ব্যবস্থা নেওয়া হলেও আস্তে আস্তে দেশের বাকি সরকারি কলেজগুলোর ক্ষেত্রেও একই নীতি গ্রহণ করা হবে।

১৯৯২ সালের আগে ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী ও কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় বিভাগীয় সরকারি কলেজগুলোর তদারকির দায়িত্বে ছিল। সেসময় বাড়তি চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছিল বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। সেই চাপ কমাতে ও অধিভুক্ত কলেজগুলোর মান উন্নয়নে ১৯৯২ সালে সংসদে ‘জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ১৯৯২’ নামের আইন পাসের মাধ্যমে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়।

বৃহস্পতিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য দফতর সংলগ্ন লাউঞ্জে উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকের সভাপতিত্বে সাতটি সরকারি কলেজের অধ্যক্ষদের নিয়ে যে সভা অনুষ্ঠিত হয়, সেখানে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক নাসরীন আহমাদ। 

তিনি প্রিয়.কমকে বলেন, ‘জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়কে বিশালসংখ্যক কলেজের তত্ত্বাবধান করতে হয় বলে পুরো ব্যবস্থাটি মুখ থুবড়ে পড়েছিল। এখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আধিভুক্ত হওয়ার ফলে এ কলেজগুলোর শিক্ষা কার্যক্রম আরও সুন্দরভাবে পরিচালিত হবে।’ 

নতুন করে অতিরিক্ত চাপ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কীভাবে সামাল দেবে, এ প্রশ্নের জবাবে অধ্যাপক নাসরীন আহমাদ বলেন, ‘কাউকে না কাউকে তো দায়িত্ব নিতেই হবে’। 

দীর্ঘদিন ধরে বিকেন্দ্রীকরণের জন্য জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর যে চাপ ছিল, এ সিদ্ধান্তের ফলে সেটি বাস্তবায়িত হবে বলেও দাবি করেন অধ্যাপক নাসরীন। 

এ অধিভুক্তির সমর্থন করে শিক্ষাবিদ ড. কায়কোবাদ প্রিয়.কমকে বলেন, ‘জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেক সেশনজট। মানসম্মত শিক্ষার জন্য অনার্স ও মাস্টার্স শিক্ষার্থীদের উচ্চ পর্যায়ের টিচিংয়ের সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে হবে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে থাকাকালীন শিক্ষার্থীরা এ সুযোগ পেতেন না। অধিভুক্তির ফলে শিক্ষার মান বাড়বে।’

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন সেশনজট প্রায় নেই জানানোর পর তিনি বলেন, ‘ক্লাস না নিয়ে সেশনজট কমিয়ে কোনো লাভ হবে না’।

নতুন ব্যবস্থায় সেশনজট সৃষ্টি হতে পারে কিনা, এ প্রশ্নের জবাবে ড. কায়কোবাদ বলেন, ‘সেশনজট নিরসনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টা থাকবে’। 

তবে ঢাকা কলেজের ইংরেজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক পুরঞ্জয় বিশ্বাস এর ভালো মন্দ দু’দিকই দেখছেন।

প্রিয়.কম’র সঙ্গে আলাপকালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত হওয়ার ফলে কলেজগুলোতে শিক্ষার গুণগত পরিবর্তনের সম্ভাবনা, শিক্ষার্থীদের মধ্যে উদ্দীপনা, কলেজ শিক্ষকদের মানোন্নয়ন ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভার লাঘব হওয়ার মতো বিষয়গুলোকে ইতিবাচক হিসেবে উল্লেখ করেন।

একইসঙ্গে সিলেবাস সমন্বয়ে বৈষম্যের ফলে ভারসাম্যহীনতার সম্ভাবনা, প্রশাসনিক দ্বৈত শাসনের জটিলতার সম্ভাবনার দিকটিও উল্লেখ করেছেন তিনি। তিনি বলেন, ‘আন্তরিকতা ও উদারতার মনোভাব না থাকলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বৈষম্যমূলক আচরণের সম্ভাবনা রয়েছে, যা হিতে-বিপরীত হতে পারে।’

প্রয়োজনীয় সমন্বয়ের অভাব হলে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরাতন সেশনজট নতুন করে দেখা দিতে পারে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন তিনি। 

তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্তমুক্ত করার ২৪ বছর পর আবারও কেন অধিভুক্ত করা হচ্ছে কলেজগুলোকে? এমন প্রশ্নের উত্তর কেউ-ই দেননি। সবাই প্রশ্নটি এড়িয়ে গিয়ে জানিয়েছেন, শিক্ষার মান বাড়াতেই এই উদ্যোগ।

অধিভুক্তি নিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যেও মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। অনেক শিক্ষার্থী যেমন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্টিফিকেটের জন্য উচ্ছ্বসিত মনোভাব পোষণ করেছেন; অনেকে আবার বলেছেন, অধিভুক্ত না থেকে তারা স্বাধীন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী হতে চান।

তবে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. হারুন অর রশীদ বিষয়টি নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। এ নিয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক মোয়াজ্জেম হোসেন মোল্লাহও।

প্রিয় সংবাদ/সোহেল/রিমন