ছবি সংগৃহীত

স্মৃতি কথা- "রাব্বির হাম হুমা কামা রাব্বায়ানি সাগীরা"

azmalamgir
লেখক
প্রকাশিত: ২৭ জুন ২০১৩, ১৬:০২
আপডেট: ২৭ জুন ২০১৩, ১৬:০২

“রাব্বির হাম হুমা কামা রাব্বায়ানি সাগীরা” “... My Lord! Have mercy on them both (parents) as they did care for me when I was little.” (Sura: Al-Isra, Ayat: 24) মা বাবার কথা মনে পড়ছে। বার বার মনে পড়ছে। জীবন চলার প্রতিটি পদক্ষেপে মনে পড়ছে। মনে হয় তাদের কাছে ক্ষমা চাই। তাদের পায়ে মাথা ঠুকে যন্ত্রনা লাঘব করি। লিখতে গিয়ে একটা বাংলা শব্দের বিকল্প শব্দ খুঁজে ফিরছি। মনে হলো একটা বাংলা থেকে বাংলা ডিকশনারী কিনতে হবে। আরোও কতগুলো বই হাতের কাছে প্রয়োজন। লিখার প্রয়োজনে বইগুলো সংগ্রহ করতেই হবে। অথচ এর প্রতিটি বই-ই এক সময় আব্বা তাঁর ব্যক্তিগত লাইব্রেরীর আলমারিতে সাজিয়ে সাজিয়ে রেখে বুঝিয়ে দিয়ে গিয়েছিল। অনেক কিছুই হারিয়ে ফেলেছি । আজ নিজের ছেলে বড় হয়েছে। বুঝাতে চাইলে বুঝতে চায় না। শুনাতে চাইলে শুনতে চায় না। রাগ করি না। সৃষ্টিকর্তা বিভিন্ন নিদর্শন আমাদের মাঝে তুলে ধরেন। তাই নিজেকে বুঝার মাধ্যমে স্রষ্টার বিবিধ বিষয়াবলীকে কিঞ্চিৎ অনুভব করার চেষ্টা করে যাই। স্রষ্টার একটি গুন- “আল-গাফফার” (The Repeatedly Forgiving)। গুনটির কিয়দাংশ নিজের মাঝে বিদ্যমান। এ গুনের বদৌলতে সন্তানের ভূল ত্রুটি বার বার ক্ষমা করে দেই। নিজে থেকে ভেবে চিন্তে ক্ষমা করতে হয় না। প্রকৃতপক্ষে আপনা থেকেই ক্ষমা পেয়ে যায়। ভিতরে যিনি বিরাজমান, তিনি মৃদু হেসে সব ক্ষমা করে দেন। নিজেকে কিছুই করতে হয় না। এতদিনের প্রেম-প্রীতি-ভালবাসার যত শাখা প্রশাখা, ভিতরটা তার সব যেন গুটিয়ে নিয়েছে। গুটানো সব ভালবাসা কেবল একটি চ্যানেল দিয়ে প্রবাহিত হয়ে সন্তানের উপর বর্ষিত হচ্ছে। যে ভালবাসাটুকু আজোও সবার প্রতি ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে - সেটা আসলে ভালবাসার প্রলেপ। সন্তানের কার্যকলাপ দেখে অতীত মনে পড়ে যায়। এ যেন একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি! মা-বাবার সাথে তাই করে এসেছি। যাই করি না কেন, জানতাম তাঁদের প্রতি শ্রদ্ধা-ভালবাসার বিন্দু পরিমান কমতি নেই। তথাপি আবদার। বয়সের প্রভাব। আজ সন্তান যা করে, বুঝতে পারি আমাদের প্রতি তারও শ্রদ্ধা-ভালবাসার কোন কমতি নেই। যাই করে মেনে নেই। মনে মনে হাসি। আর মা-বাবাকে স্মরন করি। সাথে সাথে অন্তর বলে উঠে- “রাব্বির হাম হুমা কামা রাব্বায়ানি সাগীরা” “... My Lord! Have mercy on them both (parents) as they did care for me when I was little.” (Sura: Al-Isra, Ayat: 24) নিজেকে কষ্ট করে কিছুই বলতে হয় না। করতেও হয় না। অন্তর বলে। আপনা থেকেই বলে। আজ একটা বাংলা শব্দের বিকল্প খুঁজতে গিয়ে কত কথাই মনে পড়ছে। মা-বাবা কোন্ কষ্টটা না করেছেন। নিজেরা না খেয়ে খাইয়েছেন। নিজেরা না পরে পরিয়েছেন। আমাদের মুখের হাসি তাদের বুকে আনন্দের বন্যা বইয়ে দিয়েছে। তখন সেটা দেখেছি, শুনেছি, পড়েছি। বুঝিনি। উপলব্ধি করিনি। নিজের সন্তানকে দিয়ে এখন মর্মে মর্মে উপলব্ধি করছি। আজ তাঁরা নেই। এ নতুন উপলব্ধির কথা তাদের জানাতে পারলাম না। ক্ষমা চাওয়া হলো না। আজকের নিজেকে দিয়ে যদিও বুঝি সব ক্ষমা হয়ে গিয়েছে। তাদের ভিতরে যার বসবাস তিনিই সব ক্ষমা করে দিয়েছেন। তিনি মহান দয়ালু ক্ষমাশীল। সন্তানের প্রতি মাতাপিতা, স্ত্রীর প্রতি স্বামী, স্বামীর প্রতি স্ত্রীর ক্ষেত্রে তিনি “আল-গাফফার", তবুও তাদের জীবন্ত চেহারায় সেই স্বীকৃতিটা দেখতে মন চায়। যা এখন আর সম্ভব নয়। তাদের দেবার মত এখন কিছুই নেই। কেবলি প্রার্থনা। “রাব্বির হাম হুমা কামা রাব্বায়ানি সাগীরা” “... My Lord! Have mercy on them both (parents) as they did care for me when I was little.” (Sura: Al-Isra, Ayat: 24) এটা পৃথিবীর তাবৎ পিতা মাতার জন্যে সন্তানদের পক্ষ থেকে এক শ্রেষ্ঠ প্রার্থনা। এটা আরবী না, এটা বাংলা না, এটা ইংরেজী না। এটা সন্তানদের অন্তরের কথা। হৃদয়ের কথা। এটা প্রকাশ করার জন্যে কোন নির্দিষ্ট ভাষা জানার প্রয়োজন নেই। এটা কোরানের কথা হোক, এটা গীতার কথা হোক, এটা বাইবেলের কথা হোক- এটা সকলের অন্তরের কথা। যারা প্রার্থনার এত সুন্দর পথ শিখিয়ে দিয়ে গিয়েছেন, তাঁদের শ্রদ্ধা জানাতেও ভিতরে কার্পন্য থাকা সঠিক নয়। প্রার্থনা তথা যোগাযোগের জন্যে নির্দিষ্ট কোন ভাষা জানার প্রয়োজন নেই। নির্দিষ্ট কোন ভাষা চাপিয়ে দেয়ারও প্রয়োজন নেই। ভাষার জন্যে এখানে প্রাণ দেয়ার প্রয়োজন নেই। এর জন্যে জোরে শব্দ করারও প্রয়োজন নেই। যদি পৃথিবীর তাবৎ ধর্মগ্রন্থ পুড়ে ছাইও হয়ে যায়, তবু তা রয়ে যাবে সহজ সরল সোজা পথে চলা বিশ্বাসী ও উপলব্ধিবোধ সমপন্ন মানবের হৃদয়ের আঁচড়ে। অন্তর কথা বলে। অন্তর যোগাযোগ স্থাপন করে। স্রষ্টার দেখিয়ে দেয়া পথ চলার নির্দেশনা বইয়ের পাতায় নয়, অন্তর ধারন করে। ঘাত প্রতিঘাতের পৃথিবীতে নিষ্পাপ যে শিশুটি একদিন পিতা মাতা হয়ে তার নিজের শারিরীক ও মানসিক ক্ষমতা অনুযায়ী চলতে পথে যতটুকু পূণ্য আর যতটুকু পাপ অর্জন করেছে- হে আল্লাহ, তাদের সে পাপটুকু ক্ষমা করে দাও।