
ছবি সংগৃহীত
সমাজের দিকেই ছিল তাঁর তীক্ষ্ণদৃষ্টিপাত...
আপডেট: ০৪ জানুয়ারি ২০১৬, ১৫:৪০
গ্রাফিক্স: আকরাম হোসেন।
(প্রিয়.কম) জীবনের বাহ্যিকতার বাইরেও রয়েছে আরেক গভীরতম জীবন। সেখানেও আছে আরেক দেখার জগৎ। সমাজের অন্তরালেও উঁৎপেতে থাকে আরও এক বাস্তবতা।তীক্ষ্ণ দৃষ্টিমেলে সেসব পরখ করতেন যিনি তিনি আখতারুজ্জামান ইলিয়াস। সমাজ বাস্তবতার সেসব কঠিনতর বিষয়াদি তুলে ধরেছেন তাঁর রচনায়। ইলিয়াস নিজেকে চব্বিশ ঘণ্টার লেখক বলে দাবী করতেন। আর বাংলা সাহিত্যের মনোযোগী পাঠক তাঁকে মনে করতেন সিরিয়াস একজন সাহিত্যিক হিসেবেই। এই অমর সাহিত্যিক তাঁর চব্বিশ ঘণ্টার দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি নিয়েছিলেন ১৯৯৭ সালের ৪ জানুয়ারি। আজ থেকে বিশ বছর আগে চলে গেলেও মনোযোগী পাঠক তাঁকে ভুলেনি। বরং দিন যত যাচ্ছে ততই বাংলা সাহিত্যে তাঁর অনিবার্যতা প্রকট হয়ে উঠছে।তাঁর উপন্যাস, গল্প, প্রবন্ধ আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে পাঠকদের কাছে। মুক্তিযুদ্ধ ও পরবর্তী সময়ের যে বীক্ষণ তিনি তাঁর লেখায় উপস্থাপন করে গেছেন তা সত্যিই গবেষণার দাবী রাখে।
আখতারুজ্জামান ইলিয়াস শহুরে জীবনের গল্প বললেও তাঁর লেখায় উঠে এসেছে পুরো বাংলাদেশের সমাজ বাস্তবতা। শহরের অলিগলিতে প্রবেশ করা গ্রামের একজন মানুষের সঙ্কটময় পৃথিবীকে তিনি অঙ্কন করেন। আর জীবনের তাগিদে পৃথিবীর বিরাট আকাশের নিচে যে মানুষটি পথে প্রান্তরে ঘুরে বেড়াচ্ছে ভাগ্যের নির্মম চক্রে সেই মানুষটিই তাঁর গল্পে উঠে এসে কথা বলে পাঠকের সঙ্গে। ইলিয়াস খুব বেশি লিখেননি। তবে যা লিখেছেন তাই পাঠকদের কাছে হয়ে অাছে মূল্যবান। দুইটি উপন্যাস, গোটা পাঁচেক গল্পগ্রন্থ আর একটি প্রবন্ধ সংকলন-এই নিয়েই আখতারুজ্জামান ইলিয়াস। বাস্তবতার নিপুণ চিত্রায়ণ, ইতিহাস ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের আলোকে সমাজ মানুষকে বিশ্লেষণ, সেই মানুষের সঙ্কটকে তুলে ধরেছেন তাঁর গল্পে তাঁর উপন্যাসে। সমাজের প্রতি তাঁর তীক্ষ্ণদৃষ্টিপাতই তাঁকে আলাদা করে তোলে অপরাপর সাহিত্যিকদের থেকে। এই অমর সাত্যিকের প্রয়াণ দিবসে তাঁর প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা।
১৯৪৩ সালের ১২ই ফেব্রুয়ারি জন্ম করেন আখতারুজ্জামান ইলিয়াস। তাঁর পৈতৃক বাড়ি বগুড়া জেলায় হলেও তিনি জন্মগ্রহণ করেন গাইবান্ধা জেলার গোটিয়া গ্রামে মামার বাড়িতে।তাঁর ডাক নাম মঞ্জু। তাঁর বাবা বদিউজ্জামান মোহাম্মদ ইলিয়াস পূর্ব বাংলা প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য (১৯৪৭-১৯৫৩) এবং মুসলিম লীগে পার্লামেন্টারী সেক্রেটারী ছিলেন।তাঁর মায়ের নাম বেগম মরিয়ম ইলিয়াস। বগুড়া জিলা স্কুল থেকে ১৯৫৮ সালে ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষা এবং ঢাকা কলেজ থেকে ১৯৬০ সালে ইন্টারমিডিয়েট পাস করেন। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় অনার্স ও মাস্টার্স পাস করেন ১৯৬৪ সালে। এরপর শিক্ষকতা পেশাকেই বেছে নেন ইলিয়াস।কর্মজীবন শুরু হয় জগন্নাথ কলেজে প্রভাষক পদে যোগদানের মাধ্যমে। ১৯৭৩ সালে তিনি বিয়ে করেন। তাঁর স্ত্রীর নাম সুরাইয়া তুতুল।
সাহিত্যে অবদান রাখার জন্য ১৯৮৩ সালে বাংলা একাডেমি পুরস্কার পান। ১৯৯৬ সালে ভূষিত হন ভারতের আনন্দবাজারের ‘আনন্দ পুরস্কারে’।রোগ-ব্যাধির সঙ্গে লড়াই করেই কাটিয়েছেন সারা জীবন। ডায়াবেটিস, জন্ডিস-সহ নানাবিধ রোগ ভর করেছিল তার শরীরে।১৯৯৭ সালের ৪ঠা জানুয়ারি ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে ঢাকা কম্যুনিটি হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন।
আখতারুজ্জামান ইলিয়াস দুটি উপন্যাস, কয়েকটি গল্প সংকলন ও একটি প্রবন্ধ সংকলন জীবদ্দশায় প্রকাশ করেন।এগুলো হচ্ছে উপন্যাস: ‘চিলেকোঠার সেপাই’ (১৯৮৭), ‘খোয়াবনামা’ (১৯৯৬); ছোট গল্প সংকলন: ‘অন্য ঘরে অন্য স্বর’ (১৯৭৬), ‘খোঁয়ারি’ (১৯৮২), ‘দুধভাতে উৎপাত’ (১৯৮৫), ‘দোজখের ওম’ (১৯৮৯), ‘জাল স্বপ্ন, স্বপ্নের জাল’ (১৯৯৭), প্রবন্ধ সংকলন: সংস্কৃতির ভাঙ্গা সেতু (২২টি প্রবন্ধ)। এ ছাড়া এর বাইরে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকার পাতায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে তাঁর অসংখ্য রচনা।
সাহিত্যে অবদান রাখার জন্য ইলিয়াস পেয়েছেন বেশকিছু পুরস্কার। এগুলো হলো হুমায়ুন কবির স্মৃতি পুরস্কার (১৯৭৭), বাংলা একাডেমী পুরস্কার (১৯৮৩), আলাওল সাহিত্য পুরস্কার (১৯৮৭), আনন্দ পুরস্কার (১৯৯৬), সাদাত আলী আখন্দ পুরস্কার (১৯৯৬), কাজী মাহবুবুল্লাহ স্বর্ণপদক (১৯৯৬), একুশে পদক (মরণোত্তর) (১৯৯৯)।
তথ্যসূত্র: উইকিপিডিয়া।
- ট্যাগ:
- সাহিত্য
- গল্প
- আখতারুজ্জামান ইলিয়াস