ছবি সংগৃহীত

শাকের মধ্যে পুঁই

nusrat jahan champ
লেখক
প্রকাশিত: ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৩, ০৫:০৮
আপডেট: ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৩, ০৫:০৮

কথায় আছে - মাছের মধ্য রুই আর শাকের মধ্যে পুঁই! এখান থেকেই বোঝা যায় যে শাক হিসেবে পুঁইশাক কতটা উচ্চমানের! বাংলাদেশে পুঁইশাক খুবই জনপ্রিয় একটি শাক। পুঁইশাকের ভাজি তো বটেই এর ডাল, চচ্চড়ি ও মাছের তরকারিও সমান জনপ্রিয়। শুধু বাংলাদেশে নয় পৃথিবীর অনেক দেশেই এটি বেশ জনপ্রিয়! মালাবার উপকূলে স্যুপ ঘন করার কাজে পুঁইশাক ব্যবহার করা। চৈনিক অনেক খাবারে পুঁই পাতার ব্যবহার রয়েছে। আফ্রিকায় অড়হড়ের ডালের সাথে পুঁই পাতা মিশিয়ে একটি বিশেষ খাবার রান্না করা হয়। পুঁইশাকের আদি নিবাস পারস্য অর্থাত্‍ বর্তমান ইরানে। সেখানে এর তত্‍কালীন নাম ছিল এসপানাক। সাত দশকের শুরুর দিকে নেপালের রাজা উপহার হিসেবে পুঁইশাক চীনে পাঠান! চীনে একে ডাকা হতো 'হার্ব অব পারসিয়া'! চীনে আগমনের পর থেকেই পুঁইশাকের বানিজ্যিকভাবে চাষ করা শুরু হয়।

এগারো দশকের শুরুর দিকে মুসলমানরা স্পেনে পুঁইশাক পাতা নিয়ে আসে এবং সেখানে তা খাবার হিসেবে খুবই জনপ্রিয়তা পায়। ব্রিটিশদের কাছে পুঁইশাক স্প্যানিশ শাক হিসেবে পরিচিতি পায়। ষোলো দশকের শুরুতে ইতালিতে পুঁইশাক পাতার ঔষধি ব্যবহার প্রচলিত হয়। উনিশ শতকের শুরুতে আমেরিকায় প্রথম পুঁইশাক বানিজ্যিকভাবে চাষ করা শুরু হয়। বর্তমানে বিশ্বের অনেক দেশেই পুঁইশাক বানিজ্যিকভাবে চাষ হয়। পুঁইশাকের ইংরেজি নাম Malabar Nightshade। একে Malabar spinach বা Vinespinach নামেও ডাকা হয়। পুঁইশাক সাধারণত দু ধরনের হয়ে থাকে। একটি লালচে অপরটি সবুজ। লালটির বৈজ্ঞানিক নাম Basella rubra Linn এবং সবুজটির বৈজ্ঞানিক নাম Basella alba Linn। পুঁইশাক উষ্ণমণ্ডলীয় বহুবর্ষজীবী লতানো উদ্ভিদ। এটি খুব দ্রুত বাড়ে। পুঁইশাক কোনো কিছুতে লতিয়ে প্রায় ১০ মিটার পর্যন্ত বাড়তে পারে। পুঁইশাকের পাতা এবং ডাঁটা দুটোই খাওয়া হয়। পুঁইয়ের পাতা নরম, পুরু ও রসালো। পাতা মসৃণ হয় এবং পিচ্ছিল ভাব থাকে। পুঁইশাকের ফুল সাদা অথবা লাল হয়। ফল মটরদানার মতো সবুজ রঙের, পাকলে কালচে বেগুনি রং ধারণ করে। পুঁইশাকের পাকা ফল রঞ্জক হিসেবে ব্যবহার করা হয়। পুঁইশাক বারোমাসই হয় তবে চাষ করার জন্য সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাস উপযুক্ত সময়।
পুঁইশাক খেতে যেমন চমত্‍কার, তেমনি এর পুষ্টিগুণ প্রচুর! প্রতি ১০০ গ্রাম টাটকা পুঁই পাতায় রয়েছে - খাদ্যশক্তি- ১৯ কিলোক্যালরি শর্করা- ৩.৪ গ্রাম চর্বি- ০.৩ গ্রাম আমিষ- ১.৮ গ্রাম খাদ্যআঁশ- ২.২ গ্রাম ভিটামিন এ- ৪০০ আইইউ থায়ামিন- ০.০৫ মিলিগ্রাম রিবোফ্লেভিন- ০.১৫৫ মিলিগ্রাম নিয়াসিন- ০.৫ মিলিগ্রাম ভিটামিন বি৬- ০.২৪ মিলিগ্রাম ফোলেট- ১৪০ আইইউ ভিটামিন সি- ১০২ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম- ১০৯ মিলিগ্রাম আয়রন- ১.২ মিলিগ্রাম ম্যাগনেসিয়াম- ৬৫ মিলিগ্রাম ম্যাংগানিজ- ০.৭৩৫ মিলিগ্রাম ফসফরাস- ৫২ মিলিগ্রাম পটাশিয়াম- ৫১০ মিলিগ্রাম জিংক- ০.৪৩ মিলিগ্রাম পুষ্টিগুণ ছাড়াও পুঁইশাকে রয়েছে কার্যকরি আরো অনেক গুণ! যেমন -
  • পুঁইশাকের রয়েছে অ্যান্টি-ইনফ্লামেটরি গুণ। শরীরের কোনো অংশ আঘাত পেয়ে ফুলে গেলে সেখানে পুঁইগাছের শেকড় বেটে লাগালে খুব তাড়াতাড়ি উপশম হয়।
  • পুঁইশাকে রয়েছে স্যাপোনিন নামক এক বিশেষ উপাদান যা ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়তা করে।
  • ব্রণের সমস্যায় পুঁইশাক বিশেষভাবে উপকারী। শাক হিসেবে খেলে তো বটেই বেটে ব্রণে লাগালেও উপকার হয়।
  • অতিরিক্ত ঠান্ডায় নাক ও গলায় সংক্রমণ হলে পুঁই পাতার রস করে চিনি মিশিয়ে খেলে দ্রুত উপশম হয়।
  • পাইলস, ফেস্টুলা, হেমোরয়েড ইত্যাদি বিভিন্ন পায়ুপথের রোগে পুঁইশাক উপকারী।