ছবি সংগৃহীত

ময়মনসিংহের লোকখাদ্য

প্রিয় লাইফ
লেখক
প্রকাশিত: ১০ জুলাই ২০১৪, ০৪:১৫
আপডেট: ১০ জুলাই ২০১৪, ০৪:১৫

(প্রিয়.কম) একটা শিল্লুক দেই ভাঙ্গাইতারবাইন? ‘উপরে ঠনঠন বিত্তে পেক, বুদ্ধি থাকলে খুইল্যা দেক।’ কইতারবাইন জিনিসডা কী? আর একটা দেই তাইলে – ‘একই গেলাসে দুইরম পানি, না ভাঙ্গাইতারলে বেক্কল জানি।’ জ্বি, এইগুলো ময়মনসিংহ অঞ্চলের ধাঁধা। কথায় বলে ‘হাওর-বাওর-মইষের শিং, এই তিন লইয়া মৈমনসিং’। উর্বর জমি নিয়ে সহজ-সরল মানুষের ভূমি ময়মনসিংহ লোকজ শিল্প-সাহিত্যের জন্য প্রসিদ্ধ। ময়মনসিংহের মানুষ তুলনামূলক কিছুটা অলস এবং রসপ্রিয়। বিশ্বাস না করলে, ফেইসবুকের ‘আমরা ময়মনসিং এর লুক। উস্তাদি আলাপ আংগর লগে করলে মাইরা হুতাইয়ালবাম’ পেইজটা দেখতে পারেন। পেইজের পোস্টগুলো পড়লে হাসতে হাসতে আপনার পেটে খিল ধরে যাবে। যাইহোক শুধুমাত্র লোকজ শিল্প-সাহিত্য আর রস বোধের জন্যই প্রসিদ্ধ নয়, ময়মনসিংহের রয়েছে ঐতিহ্যবাহী কিছু খাবার। আজ আপনাদের পরিচয় করিয়ে দেবো ময়মনসিংহের তিনটি লোকখাদ্যের সাথে।

১। খুদির পিঠা:

ঢেঁকিতে ধান ভানার পর যে চালগুলো ভেঙে যায় সেই ভাঙাচালগুলোকে বলা হয় খুদি। বৃষ্টির দিনে বিকালে যখন কাজকর্ম থাকে না কারো। তখন কৃষাণবৌ বেশি বেশি পেঁয়াজ-মরিচ দিয়ে তৈরি করে খুদির পিঠা। খুদিটা ভিজিয়ে রেখে প্রথমে আধা বাটা করে নিতে হয়| তারপর খুদি, পেঁয়াজ, মরিচ, লবণ আর সামান্য জিরাগুঁড়া দিয়ে মাখিয়ে কিছুক্ষণ ভিজিয়ে রাখা হয়। তারপর একটা চুলার উপর মাটির পাত্রে কলাপাতা বিছিয়ে তাতে মেশানো উপকরণগুলো ঢেলে দিয়ে আর একটা কলাপাতা উপরে দিয়ে ঢাকনা দিয়ে ঢেকে দেয়া হয় পাত্রটির মুখ আর মৃদু আঁচে দেয়া হয় চুলার তাপ। কিছুক্ষণ পর হয়ে আসে খুদির পিঠা। পিঠা ভেঙ্গে ভেঙ্গে দেয়া হয় বাড়ির সকলের হাতে হাতে।

২। গৌরিপুরের কাবক:

গৌরিপুরের কাবক এক অসাধারণ স্বাদের খাবার। যারা খেয়েছেন তাদের জিভে জল চলে আসার কথা। কাবকের জন্য প্রয়োজন দেশি মোরগ, প্রয়োজন মতো আদা, পিঁয়াজ, কাঁচামরিচ, লবণ ও সরিষার তেল। মোরগ জবাই দিয়ে ভালোভাবে শরীর থেকে চামড়া ও লোম ছড়িয়ে নিয়ে মোরগের শরীরের বিভিন্ন অংশ লোহার শিকের ভিতর ঢুকিয়ে আগুনে পোড়াতে হয়। তারপর ঢেঁকিঘরে গিয়ে ঢেঁকিতে কুটতে হয় মোরগ, কাঁচামরিচ, আদা ও পিঁয়াজ। এইভাবে মণ্ড তৈরি করে সরিষার তেল মাখতে হয়। এইভাবে তৈরি হয় মজাদার কাবক বা মোরগ ভর্তা। কবাক সাধারণত উঠানে চুলার আগুনে পুড়ানো চৈ-পিঠার সাথে খাওয়া হয়। চৈত্রসংক্রান্তিতে বা মেহমানের জন্য এই আয়োজন করা হয়।

৩। হালুয়াঘাটের চু:

গারোদের জীবন প্রক্রিয়ায় চু-এর প্রভাব ব্যাপক। জন্ম-মৃত্যু-উৎসব যে কোন অনুষ্ঠানে চু ঐতিহ্যবাহী পানীয়। শিশুর জন্ম উপলক্ষ্যে একপ্রকার চু তৈরি করে থাকে যার নাম চু জাঙ্গি। যে কোন সামাজিক অনুষ্ঠানে খাবার-দাবারের পর চু পানের রীতি গারো সমাজে প্রচলন রয়েছে। সামাজিক ভাবে স্বীকৃত বলে এটিকে তথাকথিত মদের সাথে তুলনা করা চলে না। আতপ বা বিন্নি ধানের চাল থেকে উৎকৃষ্ট চু তৈরি করা হয়। প্রথমে ভাত রান্না করে ঠাণ্ডা করে নেয়া হয়। তারপর সেই ভাতের সাথে বিভিন্ন প্রকার ওষধি দিয়ে তৈরি চুমান্থি মিশিয়ে রেখে দিতে হয়। একেক জনের তৈরি পদ্ধতি ও ওষধি একেক রকম। এর সাথে পবিত্রতার সম্পর্ক জড়িয়ে রয়েছে এবং সচরাচর চু তৈরির প্রক্রিয়াটি থাকে গোপন। যাইহোক, শেষে বলে দিচ্ছি উপরের ধাঁধার উত্তর। প্রথমটি হচ্ছে বেল। বেলের উপরের দিক শক্ত। কিন্তু ভেতরে কাদা বা প্যাকের মতো নরোম। আর দ্বিতীয়টি হচ্ছে....। থাক! দ্বিতীয়টা খুবি সহজ। আপনারাই বলুন। *তথ্যসূত্র: বাংলাদেশের লোকজ সংস্কৃতি গ্রন্থমালা ময়মনসিংহ, বাংলা একাডেমী। *ছবিঋণ: সাহাদাত উদরাজী ও ইন্টারনেট।