অভয়নগরের ভয়, আমাদের পিছু ছাড়ছে না

বিডি নিউজ ২৪ এম আর খায়রুল উমাম প্রকাশিত: ২৮ মে ২০২৫, ০৯:৩৩

চাঁপাতলা থেকে ডহরমশিয়াহাটি গ্রামের বাড়েদাপাড়া। ২০১৪ কিংবা ২০২৫। অভয়নগরের সংখ্যালঘু বাসিন্দাদের ভয় কাটেনি আজও। ২০১৪-এর কথা হয়তো নিকট অতীতের সংবেদনশীল ঘটনা হিসেবেই উল্লেখ করছি। কিন্তু ২০১৪ কিংবা ২০২৫ নয়, বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর অত্যাচার, নির্যাতনের ঘটনা ধারাবাহিকভাবেই চলমান। বাংলাদেশের প্রসবযন্ত্রণার সঙ্গে বোধ করি এ বেদনার নাড়ির যোগ। বিজয়ের ৫৪ বছর পার করেছি। স্বজাতির শাসনের এ সময়কালেও আমরা আমাদের নৃশংস, অমানবিক থেকে বেরিয়ে আসতে পারিনি এতটুকুও। সেকারণেই পাহাড় থেকে সমতলে সংখ্যাগুরুর কিংবা বলা চলে ক্ষমতার আস্ফালনের পরিণতি মেনে নিতেই হচ্ছে সংখ্যালঘুদের বারবার, প্রতিদিন।


দেশের অনেক অঞ্চলের চাইতে যশোরে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের অবস্থা ও অবস্থান তুলনামূলক ভালো বলেই জানা ছিল। কিন্তু তারপরও যশোরের প্রত্যন্ত এলাকায় বিশেষত অভয়নগরে বিদ্বেষের আগুনে বারবার পোড়ে মালোপাড়ার বিপাশা আর সঞ্চিতা বর্মণের কিংবা মতুয়া সম্প্রদায়ের শংকরি আর স্মৃতি বিশ্বাসের আত্মবিশ্বাস আর লালিত স্বপ্ন।


পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদগুলো ব্যবচ্ছেদ করতে গিয়ে দেখি পার্থক্য খুব বেশি নেই। সবক্ষেত্রেই হিংস্রতার আগুনে পুড়েছে দেবালয়, বসতভিটা, গোয়ালঘর আর ধানের গোলা। চাঁপাতলার মতো বাড়েদাপাড়ার বাসিন্দারাও আশ্রয় নিয়েছিল পাশের বিলে, ঝোপঝাড়ে। দূর থেকে দেখতে পেয়েছে তাদের ঘরে আগুন জ্বলছে। আতঙ্কের রাত কাটিয়ে শুক্রবার সকালে বাড়ি ফিরে দেখেছে জিঘাংসার আগুনে পুড়েছে ধানের গোলা, বসতভিটা, রান্নাঘর, গোয়ালঘর, এমনকি ঠাকুরের আসনটুকুও।


হামলার পর পেরিয়ে গেছে সাত দিন। এখনও বেশির ভাগ বাড়ি পুরুষশূন্য। দূরদূরান্ত থেকে স্বজনরা খাবার নিয়ে এসেছে ক্ষতিগ্রস্তদের বাড়িতে। নিরাপত্তা দিতে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। মাঝেমধ্যে আসছে সেনাবাহিনীর সদস্যরাও। তারপরও আতঙ্ক কাটেনি মতুয়া পাড়ার ভুক্তভোগীদের। জানি না আমৃত্যু এই আগুনের লালিমা তাদের চোখ থেকে মুছবে কিনা। হয়তো স্মৃতি, চণ্ডিকা কিংবা পরিতোষদের জীবন এ ভাবনাতেই কেটে যাবে বসতিভিটা, ধানের গোলা, গোয়ালঘর, সহায়সম্পদ সবইতো দিলাম, আর কি করলে এই দেশের মাটিতে আমার পূর্ণ অধিকার জন্মাবে? আর কি করলে শুধুমাত্র নামের পাশে সংখ্যালঘুর তকমা থাকার কারণে এ দেশের মাটিতে জন্মেও আজন্ম পরবাসী, সংখ্যাগুরুদের আশ্রিত হিসেবেই থেকে যেতে হবে মানুষগুলোকে?


এসব ভাবনা ইদানিং খুব বিবশ করে তোলে। এবারের ঘটনায় বিবশতার মাত্রা বেড়েছে। তার প্রথম কারণ হিসেবে বলা যায়, জুলাই অভ্যুত্থানের এ পর্যায়ে ঘটনা ঘটবার পর বেশ কিছু সময় পেরিয়ে গেলেও স্থানীয় ও জাতীয় সংবাদমাধ্যমগুলোকে আগের মতো সোচ্চার ভূমিকায় দেখতে না পাওয়া। সংবাদমাধ্যমগুলোর যে প্রশংসনীয় ভূমিকা আমরা নাসিরনগর, রামু কিংবা চাঁপাতলায় হামলার ক্ষেত্রে দেখেছি এবারে সে ভূমিকা যেন অনেকটাই ম্রিয়মান। জাতীয় দৈনিকের তুলনায় স্থানীয় পত্র-পত্রিকাগুলোর নিশ্চুপ থাকবার মাত্রা যেন আরো প্রকট। আশঙ্কা করি সাম্প্রতিক সময়ের মৌলবাদী উত্থান এবং প্রশ্ন উত্থাপনের ফলে বিপদে পড়ার কারণে সংবাদমাধ্যমগুলো একপ্রকার নিস্পৃহ অবস্থায় রয়েছে। একই কারণে বোধকরি স্থানীয়, ও জাতীয় সামাজিক, সাংস্কৃতিক, মানবাধিকার সংগঠনগুলোও কোনো প্রকার কর্মসূচি দেওয়া তো দূরে থাক বিবৃতিটুকু পর্যন্ত দিতে কুণ্ঠিত। অথচ ইতোপূর্বে দেখেছি দেশের যে কোনো প্রান্তের মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় রুখে দাঁড়িয়েছে, প্রতিবাদ জানিয়েছে দেশের সকল প্রান্তের সামাজিক, সাংস্কৃতিক কর্মীবৃন্দ। আমাদের মতো আমজনতার মুখপাত্র হয়ে কাজ করেছে তারাই। কিন্তু এক্ষেত্রে সপ্তাহ অতিক্রান্ত হলেও তাদের নিস্ক্রিয়তা আমাকে বিবশ করছে।


সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চোখ রাখলে আরো একটি ঘটনা দেখছি, যা আমাকে আতঙ্কিতও করছে। এই ঘটনা সংঘটিত হবার পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঘটনার বিবরণ তুলে ধরে যে বার্তাই উপস্থাপন করা হয়েছে, সেখানেই ঘটনার সমর্থনে, ঘটনাকে জায়েজ করবার জন্য বেশ কিছু মানুষ পাল্টা যুক্তি উপস্থাপন করেছে। তারা বোঝাতে চাইছেন যেহেতু একজন মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষকে মতুয়াদের গ্রামে হত্যা করা হয়েছে অতএব এই স্পর্ধাকে দমিয়ে দিতে পাড়ার সকল ঘরে আগুন লাগানো তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া হিসেবে সঠিক। কি ভয়ঙ্কর মানসিকতা। এ মানসিকতার আরো প্রমাণ পাই যখন খবরে দেখি অগ্নিসংযোগ করবার পর দমকল বাহিনীর গাড়িকে আটকে দেওয়া হয়েছে যাতে করে তারা আগুন নেভাতে না পারে। চোখে ভেসে উঠে পত্রিকার পাতায় উঠে আসা ভুক্তভোগী চণ্ডিকার ভাষ্য–“ কিছু বলার নেই। কী বলব? যা যাওয়ার তো আমাদের চলে গেছে। আমরা কী অপরাধ করেছি? নিরীহ গরিব আমরা। যারা অপরাধ করেছে, তাদের শাস্তি দিক। আমরা তো কোনো অপরাধ করিনি। তাহলে আমাদের কেন পোড়াল?”

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে