ছবি সংগৃহীত

মিশরে নারীদের হয়রানি চরমে

monali khan
লেখক
প্রকাশিত: ২৪ মে ২০১৩, ১৭:৪০
আপডেট: ২৪ মে ২০১৩, ১৭:৪০

মিশরের তাহিরি স্কয়ার সারা বিশ্বে এখন একটি সুপরিচিত নাম। তাহিরি স্কয়ারে দিনের পর দিন লাখো মানুষের সোচ্চার কণ্ঠ গনজাগরনের নতুন যুগের সুচনা করেছে। সব চেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো এই গনজাগরনে অন্যতম ভুমিকা পালন করেছে সেই দেশের নারী সমাজও। মিশরীয় সমাজে ও রাজনৈতিক অঙ্গনে নারীদের এই ভুমিকা বিশ্বব্যাপী সমাদৃত হয়েছে, হয়েছে অনুসরনীয়। কিন্তু তিক্ত হলেও সত্য, এই তাহিরি স্কয়ারই অনেক ক্ষেত্রে হয়ে উঠেছিল নারীদের প্রতি অশোভন আচরণ আর যৌন হয়রানি ক্ষেত্রে একটি অন্যতম উল্লেখযোগ্য স্থান। আরব বসন্ত কেটে গেছে, মিশর এখন নতুন যাত্রা পথে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে এটাই সত্য যে মিশরে নারীদের প্রতি অশোভন আচরণ আর যৌন হয়রানি কমেনি, বরং দিন দিন তা বেড়েই চলেছে। এমনকি এই অবস্থা প্রতিরোধে একটি সেচ্ছাসেবক সংস্থা গড়ে উঠেছে। তারা শহরের একটি ম্যাপ প্রকাশ করে,যার অনুসরনে মেয়েরা নিজেদেরকে ঐসব এলাকা বা রাস্তা থেকে দূরে রাখে যেখানে হয়রানির আশংকা আছে। এবং বিকল্প পথে নিজেদের কাজ সেরে নিরাপদে ঘরে ফিরতে পারে। এবং এমন পরিস্থিতিতে সেদেশের মেয়েরাও এখন পথে নেমে এসেছে। তারা নিজেরাই নিজেদের নিরাপত্তা ও অধিকার রক্ষায় সোচ্চার হয়ে উঠেছে। এরই ধারাবাহিকতায় সেদেশের নারীরা মানববন্ধনসহ বিভিন্ন ধরনের প্রতিরোধমূলক কর্মকাণ্ডে নিজেদের সংশ্লিষ্ট করছে। গত অক্টোবরে ঈদের সময়ও তারা ‘যৌন হয়রানিকারি মুক্ত ঈদ’, এই স্লোগানকে সামনে রেখে রাস্তায় মৌন প্রতিবাদ করে। কিন্তু তবুও শহরটিতে নারীদের প্রতি থেমে নেই অশোভন আচরণ, কমেনি যৌন হয়রানির তিক্তকর অভিজ্ঞতা। সম্প্রতি মিশরের একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেল ‘অন টিভি’ ও একটি প্রযোজক সংস্থার যৌথ এক প্রজেক্টের অংশ হিসেবে মিশরের রাস্তায় গোপন ক্যামেরায় ধরা পরে দৈনন্দিন সব হয়রানিমুলক আচরনে অতিষ্ঠ নারীদের প্রকৃত অবস্থা।

একজন মিশরীয় অভিনেতাকে প্রায় ৪ ঘণ্টা ধরে মেকাপের পরে নারীবেশে মিশরের রাস্তায় হাঁটানো হয়।এমনকি তার পোশাককে আরও শালীন করতে হিজাবও পরানো হয়। তবে এর ফলাফল দাঁড়ায় অত্যন্ত হতাশাজনক এবং ভয়ানক। মাথায় হিজাব পরে শালীন পোশাকে ঘুরতে বের হওয়া এই নারীবেশী পুরুষ অভিনেতাকে যে সব আচরন আর হয়রানির সম্মুখীন হতে হয়, তা ভীতিকরই বটে। চলার পথে তাকে নানা ধরনের মন্তব্য শুনতে হয়, যার উদ্দেশ্য এক কথায় অশোভন আচরণ আর যৌন হয়রানিমুলক। এক পর্যায়ে দেখা যায় একজন লোক প্রায় ৪৫ মিনিট ধরে তাকে ফলো করে, এবং একটা সময় তার হাত ধরে টানাটানি করতে শুরু করে। এর সব কিছুই ঘটে রাতে নয়, বরং উজ্জ্বল দিনের আলোতেই। এই অভিজ্ঞতার পর ওয়ালিদ নামের এই তরুন অভিনেতার নিজ ভাষায় “পর আমি চিন্তাই করতে পারছি না কিভাবে আমাদের সমাজের নারীরা প্রতিদিন এই তিক্ত অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করে চলেছে, এবং এখনও সব কিছু এভাবেই চলছে।” এই প্রজেক্টের সাথে জড়িত টিভি উপস্থাপিকা বলেন “ আমরা আসলে পুরুষদের কে বুঝাতে চেয়েছিলাম এক জন নারীকে যখন তারা উত্ত্যক্ত করেন, তখন আসলে আমাদের কেমন লাগে। প্রতিদিন এইসব ভয় মনে নিয়েই আমরা ঘর থেকে রাস্তায় নেমে আসি, তাদের পাশাপাশি কাজ করি”। উল্লেখ্য, মিশরীয় নারী অধিকার কেন্দ্র দ্বারা পরিচালিত ২০০৮ সালে দেশী বিদেশী মোট ১০১০ জন নারীর উপরে চালানো জরিপ অনুযায়ী বিদেশি মহিলাদের ৯৮% এবং মিশরীয় নারীদের মধ্যে ৮৩% যৌন হয়রানির শিকার হয়েছে। এমনকি বিদেশি নারী সাংবাদিকরাও এর ব্যাতিক্রম নন।