ছবি সংগৃহীত
ব্রাজিল থেকে পচা গম আমদানি: কালের কণ্ঠ
আপডেট: ১৬ জুন ২০১৫, ২১:২৯
(কালের কণ্ঠ) ব্রাজিল থেকে আমদানি করা দুই লাখ টন গম নিয়ে বিপদে পড়েছে খাদ্য মন্ত্রণালয়। পুলিশসহ ব্যবহারকারী বিভিন্ন সংস্থা সরাসরি অভিযোগ করে বলেছে, এসব গম খাওয়ার অযোগ্য। প্রথমে এসব গম ফেরত নেওয়ার জন্য পুলিশের পক্ষ থেকে খাদ্য মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করা হয়। কিন্তু মন্ত্রণালয় যথাযথ সাড়া না দেওয়ায় পুলিশ বিষয়টি জানায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়কে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে আমদানি করা গম পচা কি না তা পরীক্ষা করার জন্য খাদ্য মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দেওয়া হয়। খাদ্য মন্ত্রণালয় দেশের সব জেলা প্রশাসককে (ডিসি) গুদাম থেকে গমের নমুনা সংগ্রহ করে ঢাকায় পাঠানোর নির্দেশনা দেয়। একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে গুদাম থেকে কমপক্ষে এক কেজি পরিমাণ গম সংগ্রহের পর সিলগালা করে বিশেষ বাহকের মাধ্যমে ঢাকায় পাঠানোর কথা বলা হয়েছে। গোপালগঞ্জের জেলা প্রশাসক মো. খলিলুর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, 'সরকারের এ ধরনের নির্দেশনা আমরা পেয়েছি। এখনো গমের নমুনা সংগ্রহ করা হয়নি। তবে শিগগিরই তা সংগ্রহ করে পাঠানো হবে।' খাদ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ব্রাজিল থেকে ৪০০ কোটি টাকা দামের দুই লাখ টন গম আমদানির কার্যাদেশ পায় ইমপেক্স ইন্টারন্যাশনাল ও ওলাম ইন্টারন্যাশনাল নামের দুটি প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে ইমপেক্স দেড় লাখ ও ওলাম ইন্টারন্যাশনাল পায় ৫০ হাজার টন। গম আমদানির পর চট্টগ্রাম বন্দরে পরীক্ষার সময়ই গলদ ধরা পড়ায় তা আটকে যায়। কিন্তু বিষয়টিতে হস্তক্ষেপ করেন খাদ্য অধিদপ্তরের নীতিনির্ধারকরা। তাঁরা সরাসরি পচা গমের পক্ষে অবস্থান নিলে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে গম ছাড় করা হয় বলে জানা যায়। সরকার সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ, বিজিবি, পুলিশ, আনসার, কোস্টগার্ড, ফায়ার সার্ভিসসহ অন্যান্য সংস্থার সদস্যদের মধ্যে রেশন হিসেবে যে আটা সরবরাহ করে তা অভ্যন্তরীণ ও বিদেশ থেকে সংগ্রহ করা গম থেকে তৈরি করা হয়। এসব গম দিয়ে টিআর-কাবিখার প্রকল্পও চালানো হয়। এসব প্রকল্পের গম উন্মুক্ত বাজারে বিক্রি করা হয়। তা ছাড়া এসব গমের আটা ওএমএস কর্মসূচিতে বিক্রি করা হয়। ব্রাজিল থেকে নিম্নমানের গম আমদানির পর তা পুলিশের কাছে গেলে বিপত্তি সৃষ্টি হয়। পচা গমের আটা পুলিশ সদস্যদের মধ্যে দেওয়া হলে বিরূপ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। ব্রাজিলের গম কেমন জানতে চাইলে একজন ডিসি (ফুড) নাম প্রকাশ না করার শর্তে কালের কণ্ঠকে বলেন, ব্রাজিল থেকে যে গম এসেছে তা অত্যন্ত নিম্নমানের। এসব গম থেকে আটা করা হলে তা থেকে দুর্গন্ধ বের হয়। তা ছাড়া ব্রাজিলের গমের আপেক্ষিক ওজন কম। চড়া দামে কেনা এসব গম এতটাই খারাপ যে আটা ও ময়দা কলগুলো তা গ্রহণ করতে রাজি হচ্ছে না। বাংলাদেশ সাধারণত ইউক্রেন থেকে গম আমদানি করে। কিন্তু সরকারি পর্যায়ে গম আমদানি করতে গিয়ে দীর্ঘ সময় লেগে যায়। সরকারি পর্যায়ে গম আমদানি করার কাজেও দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। নানা কারণে গম আমদানি করতে বিলম্ব হওয়ায় সরকারের কাছে গমের মজুদ দ্রুত ফুরিয়ে আসে। এই পর্যায়ে খাদ্য অধিদপ্তর ও খাদ্য মন্ত্রণালয় বাধ্য হয় আন্তর্জাতিক দরপত্র দিতে। সেই দরপত্রের গম সরবরাহ করতে গিয়েই বিপত্তি সৃষ্টি হয়। নিম্নমানের গম হওয়ায় খাদ্য অধিদপ্তর গম গ্রহণে আপত্তি জানায়। কিন্তু নীতিনির্ধারকরা পচা গমের পক্ষে অবস্থান নেওয়ায় গম গ্রহণ করতে বাধ্য হয় অধিদপ্তর। তবে একটি জাহাজের গম বেশি খারাপ থাকায় তা আটকে যায়। শেষ পর্যন্ত সেই জাহাজের গম ব্রাজিলে ফেরত পাঠানো হয়েছে বলে জানা গেছে। খাদ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ব্রাজিল থেকে আরো কিছু গম আমদানির প্রক্রিয়ায় রয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দরেও কয়েকটি জাহাজ রয়েছে যেগুলোতে ব্রাজিলের গম রয়েছে। সৌজন্যে: কালের কণ্ঠ