
ছবি সংগৃহীত
প্রাথমিক চিকিৎসায় করণীয়
আপডেট: ১৫ এপ্রিল ২০১৩, ১১:২৮
ঘরের মধ্যে ছোটখাটো ইমার্জেন্সির মধ্যে কেটে বা ছিলে যাওয়া, পুড়ে যাওয়া, পোকামাকড়ের কামড়, স্ট্রেইন বা মচকে যাওয়া ইত্যাদি অন্যতম। এ ছাড়া সাধারণ রোগের মধ্যে জ্বর, সর্দি-কাশি, ডায়রিয়া, অ্যালার্জি ইত্যাদির প্রাথমিক চিকিৎসা শুরু করা যায় বাড়িতেই। এমন সব বিপদের সময় কিংকর্তব্যবিমূঢ় না হয়ে মাথা ঠাণ্ডা রেখে সামলানো যায় ছোটখাটো মেডিক্যাল ইমার্জেন্সি। বিজ্ঞানসম্মতভাবে ফার্স্ট এইড বা প্রাথমিক চিকিৎসা করতে পারলে বহুক্ষেত্রে জীবন বাঁচানো সম্ভব হয়। এ জন্য আমাদের জানতে হবে কোন দুর্ঘটনার চিকিৎসা কি এবং কিভাবে দিতে হবে। আহত ব্যক্তিকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার সময় তিনটি বিষয় অবশ্যই মনে রাখবেন- ব্যাক্তি কি কারণে আহত হয়েছে, কতটুকু প্রাথমিক চিকিৎসা তার প্রয়োজন এবং দ্রুত নিরাপদ স্থানে নিয়ে যাওয়া। কেটে বা ছিলে গেলে- ঘরের কাজ করার সময় সবচেয়ে বেশি ঘটে এ বিপদটি। এ ক্ষেত্রে রক্তক্ষরণ বন্ধ করা বা রক্তপাত কমানোই প্রধান উদ্দেশ্য হওয়া দরকার। - ক্ষতস্থান ধুয়ে নিন। প্রয়োজনে সাবান পানি দিয়ে যত্নের সঙ্গে ক্ষতস্থানে ময়লা পরিষ্কার করুন। পরিষ্কার সুতি কাপড় দিয়ে সাবধানে ক্ষতস্থানে পানি মুছে ফেলুন। - পরিষ্কার গজ বা ব্যান্ডেজ দিয়ে ক্ষতস্থান চেপে ধরুন। - হাতে কেটে গেলে হাত কিছুক্ষণ উঁচু করে ধরুন। এতে রক্তক্ষরণ কিছুক্ষণের মধ্যেই বন্ধ হয়ে আসবে। - তারপর বিটাডিন বা এন্টিসেপটিক দিয়ে ওই স্থান পরিষ্কার করে এন্টিবায়োটিক ক্রিম লাগিয়ে ড্রেসিং করুন। - রক্ত বন্ধ না হলে বা সেলাই প্রয়োজন হলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হোন। ড্রেসিং এ কাজ হলে একদিন পরপর ওষুধ নতুন করে লাগান। পুড়ে গেলে- বাসা বাড়িতে বিভিন্ন কারনে আগুন দিয়ে দূর্ঘটনা ঘটতে পারে। সাধারনত গরম পানি, গরম জিনিস-পত্র (পাতিল, খুন্তি, কড়াই ইত্যাদি), রাসায়নিক পদার্থ (এসিড) বা কারেন্টের তার জ্বলে যাওয়া জায়গায় হাত লেগে ইত্যাদি কারনেই সাধারণত হাত-পা পুড়ে যেতে পারে। এক্ষেত্রে যা করতে হবে- - আগুনে বা গরম পানিতে পুড়ে গেলে দ্রুত আক্রান্ত স্থানটি পরিষ্কার ঠাণ্ডা পানির নিচে ধরুন। - আক্রান্ত স্থানে সিল্কক্রিম লাগালে উপকার পাওয়া যায়। এ ক্ষেত্রে এন্টিবায়োটিক ক্রিম লাগানো যেতে পারে। - পোড়ার পরিমাণ বেশি হলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। ভাঙলে বা মচকালে- রিকশা থেকে বেকায়দা অবস্থায় পরে গিয়ে বা কোন উঁচু স্থান থেকে পরে গিয়ে বা খেলাধুলা করার সময় আমাদের হাত-পা মচকে যেতে পারে এমনকি ভেঙেও যেতে পারে। এই অবস্থায় যা করবেন- - আঘাতের স্থান ও পরিমাণ নিরূপণ করুন। - হাতে বা পায়ে ফুলে গেলে সেখানে বরফ সেঁক দিন। - ডাইক্লোফেনাক জেল হালকা করে লাগিয়ে দেওয়া যেতে পারে। - তবে কোথাও কেটে গেলে ওই ক্ষতের ওপর সরাসরি এ রকম ক্রিম লাগাবেন না। - আক্রান্ত স্থান ম্যাসাজ করবেন না। আক্রান্ত স্থান বিশ্রামে রাখুন। - ক্রেপ ব্যান্ডেজ দিয়ে মুড়িয়ে রাখুন। - তবে অতিরিক্ত ফুলে গেলে বা চামড়ার নিচে কালো হয়ে গেলে হাড়টি ভেঙেছে ধরে নেয়া যায়। সে ক্ষেত্রে চিকিৎসকের কাছে গিয়ে এক্স-রে করে নিশ্চিত হোন ও যথাযথ চিকিৎসা নিন। মাথায় আঘাত পেলে- আঘাত যদি মাথায় হয় তাহলে সতর্ক থাকা উচিত। মাথার আঘাত পাওয়া বলতে গেলে আমরা সাধারণত মাথার ভেতরে মস্তিষ্কে আঘাত পাওয়াকে বুঝে থাকি।মাথায় আঘাত কতটা গুরুতর সেটা বুঝতে হলে রোগীকে ভালোভাবে নিরীক্ষণ করতে হবে। - মুখে কিছু খেতে দেয়া যাবে না। - আঘাতের পর বমি, অতিরিক্ত ঘুম ঘুম ভাব, প্রচণ্ড মাথাব্যথা ইত্যাদি উপসর্গ থাকলে হাসপাতাল বা চিকিৎসকের সাহায্য নিতে হবে। - রোগীকে যত দ্রুত সম্ভব উন্নত এমন কোনো হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে যেখানে ব্রেইনের সিটি স্ক্যান বা এমআরআই করার সুযোগ আছে। পরিবারের সচেতনতা- পরিবারের সব সদস্যের কথা বিবেচনা করে স্বাস্থ্য পরিকল্পনা করা উচিত। ছোটখাটো দুর্ঘটনা এড়ানোর জন্য সতর্কতার পাশাপাশি ফার্স্ট এইড কিট বা প্রাথমিক চিকিৎসার সরঞ্জাম, হাসপাতালের জরুরি বিভাগের নম্বর, জরুরি অ্যাম্বুলেন্স নম্বর, পারিবারিক চিকিৎসকের ফোন ও সেলফোন নম্বর রাখা দরকার। এছাড়াও পরিবারের মাসিক বাজেটে স্বাস্থ্য খাতে কিছু টাকা বরাদ্দ থাকা উচিত। এগুলি বিপদকালে অনেক কাজে লাগে। ফার্স্ট এইড বক্সে যা থাকবে- - ড্রেসিংয়ের ব্যান্ডেজ - ২০-২৫টি অ্যাডহেসিভ ব্যান্ডেজ (বিভিন্ন সাইজের), যা ব্যান্ড এইড নামে পরিচিত। - পাঁচটি স্টেরাইল (জীবাণূমুক্ত) গজ প্যাড এবং গজ রোল তুলা - মাইক্রোপোর, রোল লিউকোপ্লাস্ট (ব্যান্ডেজে আঠা লাগানোর জন্য) - ইলাস্টিক ব্যান্ডেজ (স্ক্রেপ ব্যান্ডেজ)_হাঁটু, কনুই বা গোড়ালির আঘাতের ক্ষেত্রে পেঁচিয়ে এই ব্যান্ডেজ দিতে হয়। - দুটি ত্রিকোণাকৃতি ব্যান্ডেজ- আর্ম সিলিং তৈরির জন্য। আরো যা থাকবে * ২ জোড়া গ্লাভস * ৫টি সেফটিপিন * ছোট কাঁচি * টুইজার বা চিমটা * একটি থার্মোমিটার * পকেট মাস্ক (কৃত্রিম শ্বাস-প্রশ্বাস দেওয়ার জন্য) যে সব ওষুধ রাখতে হবে * এন্টিসেপটিক সল্যুশন (যেমন বিটাডিন,স্যাভলন বা ডেটল ইত্যাদি)। * এন্টিবায়োটিক ওয়েস্টম্যান (যেমন ব্যাকট্রোবেন)। * নরমাল স্যালাইন (ছোট বোতল)। * সিলভার সালফা ডায়াজিন (সিল্ক ক্রিম), পোড়া বা ক্ষতের জন্য। * হাইড্রোকর্টিসন ক্রিম- পোকায় কামড়ের চিকিৎসায় কাজে লাগে। * জ্বর ও মাথাব্যথার জন্য- প্যারাসিটামল সিরাপ, ট্যাবলেট ও সাপোজিটার। * এন্টিহিস্টামিন জাতীয় ওষুধ- ঠাণ্ডা, অ্যালার্জির জন্য (যেমন অ্যালাট্রল,এভিল,লরাটিডিন)। * বমিবমি ভাব বা বমি রোধের জন্য- ডমপেরিডন ট্যাবলেট, সিরাপ। * ডায়রিয়ার জন্য মুখে খাবার স্যালাইন। * এসিডিটি রোধের জন্য এন্টাসিড ট্যাবলেট, সিরাপ। * এ ছাড়াও পরিবারের সদস্যদের প্রয়োজনভিত্তিক কিছু ওষুধ যোগ করা যেতে পারে। যেমন তীব্র ব্যথানাশক হিসাবে আইবুপ্রোফেন রাখা যেতে পারে। কোনো মেডিক্যাল ইমার্জেন্সি হলে দিগ্বিদিক জ্ঞানশূন্য হয়ে ছোটাছুটি না করে যথাস্থানে সাহায্য চাওয়া উচিত। এ ক্ষেত্রে পারিবারিক চিকিৎসক, নিকটস্থ হাসপাতালের জরুরি বিভাগ ও অ্যাম্বুলেন্স নম্বর একটি কাগজে লিখে রাখুন এবং তা সংরক্ষণ করুন ফার্স্ট এইড বক্সের ভেতরে বা চোখে পড়ে এমন জায়গায়। কোন হাসপাতাল কোন বিষয়ের জন্য প্রয়োজনে তাও ছোট করে লিখে রাখুন।