ছবি সংগৃহীত

নতুন মায়ের খাবার দাবার

sabrina aman reevy
লেখক
প্রকাশিত: ২৪ এপ্রিল ২০১৩, ০৭:০৭
আপডেট: ২৪ এপ্রিল ২০১৩, ০৭:০৭

দীর্ঘ ৯ মাস সময় গর্ভধারণ এর পরে একজন মা যখন তার সন্তানকে কলে তুলে নেন তখন তার সব কষ্ট এক মুহূর্তেই দূর হয়ে যায়। সন্তানের ভাল মন্দ নিয়েই ব্যাস্ত হয়ে পড়েন নতুন মা সেই সাথে তার পরিবারের আরও সবাই। কিন্তু এসবের মাঝে নতুন মায়ের কথা সবাই প্রায় ভুলেই যায় বলতে গেলে। অথচ অন্য সব সময়ের থেকে এই সময়ে সবথেকে বেশি খেয়াল রাখা উচিৎ নতুন মা'এর। কারণ নতুন মা কে শারীরিক ধকল কাটিয়ে উঠে নিজেকে আগের অবস্থায় নিয়ে যেতে না পারলে সন্তানের ঠিক মত দেখাশোনা করা সম্ভব হবেনা। সেই সাথে প্রসুতি নারীরও দীর্ঘমেয়াদী কোন সমস্যা তৈরি হতে পারে। একজন প্রসুতি নারীকে অন্যান্য নারীদের তুলনায় বেশি করে খেতে হয়। এমনকি একজন গর্ভবতী নারীর তুলনায়ও তার খাবারের চাহিদা বেশি হবে। কারণ নিজেকে সুস্থ করে তোলার পাশাপাশি সন্তানকেও বুকের দুধ খাওয়াতে হয়। মা যদি এই সময় স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি পরিমাণে সুষম খাবার গ্রহন করে তবে তবে তিনি নিজের স্বাস্থ্য অটুট রেখে নিজের সন্তানকে পর্যাপ্ত পরিমান দুধ খাওয়াতে পারবেন। আর যদি মা কম খাবার গ্রহন করেন তবে তার শরীর সুস্থ হতে সময় তো লাগবেই, সেই সাথে সন্তানের জন্য পর্যাপ্ত পরিমানে দুধ উৎপাদন করতে সক্ষম হবেন না। ফলে জীবনের শুরুতেই সন্তান অপুষ্টির শিকার হতে পারে। তাই যে কোন প্রসুতি মা কে তার নিজের চাহিদার তুলনায় প্রায় এক চতুর্থাংশ পরিমাণ বেশি খাবার খেতে হবে। নতুন মা কে তার দৈনিক প্রয়োজনীয় শক্তি ছাড়াও সন্তানের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ দুধ উৎপাদনের জন্য প্রায় ৭৫০ কিলো ক্যালরি বেশি পরিমাণে খাবার খেতে হবে। আর এ জন্য মা কে খেতে হবে অতিরিক্ত শর্করা ও তেল জাতীয় খাবার। তবে ভাজা পোড়া খাওয়া পরিহার করতে হবে। সেই সাথে খেতে হবে বেশি আমিষ জাতীয় খাবার দাবার। কারণ আমিষ বেশি খেলে বাচ্চা দুধের মাধ্যমে তার প্রয়োজনীয় আমিষ পাবে। যেহেতু সন্তানকে একটু পরপর বুকের দুধ খাওয়াতে হয় তাই এ সময় যেকোনো মায়ের জন্য নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে ঘুমানো বা খাবার খাওয়া করা হয়ে উঠে না। বলা হয়ে থাকে বাচ্চা যখন ঘুমাবে সাথে সাথে মাকেও বিশ্রাম করে নিতে হবে। তারপরও সাধারন একটি খাবারের তালিকা তৈরি করে নিতে হবে যেন পর্যাপ্ত পরিমাণ খাবার খাওয়া যেতে পারে। দুপুরে আর রাতে খাবারটা হতে হবে ভারি। অন্যান্য খাবার সময় বুঝে ও অবস্থা বুঝে খাওয়া যেতে পারে। প্রসুতি মা'দের সাহায্যের জন্য খাবারের একটি তালিকা দেয়া হল। সকালের প্রাতরাশঃ প্রায় সারারাত অভুক্ত থাকার পরে সকালে নাস্তা করা হয়। তাই বলে একবারে বেশি করে খেতে যাবেন না। সকালের নাস্তায় ৩টি রুটি খেতে পারেন, অথবা মাখন দেয়া ব্রেড খেতে পারেন ৪টি। তবে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা থাকলে ব্রেড এড়িয়ে চলার চেষ্টা করবেন। রুটির সাথে থাকতে পারে এক বাটি সবজি তরকারি। সাথে একটা সিদ্ধ বা পোঁচ করা ডিম। খাবার পরে খেতে পারেন এক কাপ চা। তবে দুধ চা এর থেকে লিকার চা খাওয়া সাস্থের জন্য ভাল হবে। ব্রাঞ্চঃ সকালের নাস্তা আর দুপুরের খাবারের মাঝের খাবারকে সাধারণত ব্রাঞ্চ বলা হয়ে থাকে। আপনি দশটা এগারটার দিকে খেতে পারেন একটি মৌসুমি ফল বা ফলের জুস। অথবা এক গ্লাস দুধ সাথে ২টি বিস্কিট নিয়ে খেতে পারেন। দুপুরের খাবারঃ দুপুরের খাবার হতে হবে একটু ভারি। দুপুরে ভরপেৎ খাওয়ার জন্য ভাত হবে সব থেকে ভাল। ভাত খেলে ১ বাটি পরিমাণ খেতে পারেন। ভাত খেতে না চাইলে খেতে পারেন ৫ থেকে ৬টি রুটি। সাথে থাকতে পারে ৬০ থেকে ৭০ গ্রামের এক টুকরো মাছ বা মাংস। সেই সাথে থাকবে বেশি পরিমাণে সবজি তরকারি, ডাল ও তাজা ফল ও সবজির সালাদ। খাবার পরে মিষ্টিমুখ করার জন্য দই খেতে পারেন। তবে তা যেন ঠাণ্ডা না হয় তা খেয়াল রাখবেন। বিকালের নাস্তায়ঃ বিকালের জন্য এক কাপ চা সাথে ২ থেকে ৩ টি বিস্কিট খেতে পারেন। কোন দিন এক টুকরো কেক, নুডলস, সবজির কাটলেট, ইত্যাদিও খেতে পারেন। চাইলে ফল ফলারিও খেতে পারেন। তবে তেল জাতীয় খাবার বেশি খাওয়া উচিত হবে না। রাতের খাবারঃ রাতের খাবারটাও ভারি হবে দুপুরের মতই। ভাত খাবেন এক বাটি সাথে সবজি, মাছ বা মাংস, ডাল ইত্যাদি। তবে রাত্রে খাবার পরে ফল ফলাদি না খাওয়াই ভাল হবে। সেই সাথে আঁশযুক্ত খাবার রাত্রে পরিহার করবেন। কারণ এটা হজম হতে সময় নেয়। শোবার আগেঃ শোবার আগে অবশ্যই এক গ্লাস দুধ খেতে ভুলবেন না। সাথে ৪ থেকে ৬টি বাদাম খেতে পারেন। প্রসুতি মায়েদের দৈনিক খাবারের চাহিদার কথা মাথায় রেখেই এই তালিকা তৈরি করা হয়েছে। তবে কোন খাবারে সমস্যা থাকলে বা কোন রোগের কারনে কোন খাবার খাওয়া নিষেধ থাকলে ডাক্তারের পরামর্শ মত খাদ্য তালিকা তৈরি করে নিন এবং সেটা মেনে চলুন। সন্তান জন্মদানের ধকল সামলে ও নতুন সন্তানকে সময় দিতে গিয়ে অনেক মা'ই পারেন না নিজের খাবারের দিকে যত্ন নিতে তারপরও এসবের মাঝেও একটু কষ্ট করে নিজের খেয়াল রাখতে শিখুন। কারণ আপনি সুস্থ না থাকলে আপনার যেমন কষ্ট বৃদ্ধি পাবে তেমনই আপনার ছোট সন্তানটিও কিন্তু পুষ্টির দিক থেকে বিরাট ঝুকির মাঝে পড়ে যাবে। তাই ঠিক মত খাওয়া দাওয়া করে নিজে সুস্থ থাকুন ও সন্তানকেও সুস্থ রাখুন।