আমরা দৈনন্দিন যে কাজ করি তার জন্য প্রয়োজন শক্তি। এ জন্য আমাদের খাদ্য গ্রহণ করতে হয়। খাদ্য হজম হয়ে দরকারি অংশটুকু চলে যায় দেহের কোষে। নিঃশ্বাসের সাথে শরীরে যে অক্সিজেন প্রবেশ করে তা খাদ্যকে দহন করে তৈরি করে শক্তি। আর এই শক্তির পরিমাপের একককে বলা হয় ক্যালোরি। আমরা যদি প্রয়োজনের তুলনায় বেশি ক্যালোরি যুক্ত খাবার গ্রহণ করি তাহলে তা আমাদের দেহে তা মেদ হিসেবে সঞ্চিত থাকবে। আবার দেহের প্রয়োজনের তুলনায় কম ক্যালোরি গ্রহণ করাও উচিত নয়। প্রয়োজনের তুলনায় কম ক্যালোরি যুক্ত খাবার গ্রহণ করলে স্বাস্থ্য হানি ঘটতে পারে।
একজন সুস্থ মানুষের দৈনন্দিন ক্যালোরির চাহিদাঃ
একজন সুস্থ ও কর্মক্ষম ১১০ পাউন্ড ওজনের যুবকের (২৫ বছর) দৈনিক প্রয়োজন ২৫০০ ক্যালোরির খাবার। একই ওজনের একজন প্রৌঢ়ের প্রয়োজন ২৩৫০ ক্যালোরির খাবার এবং একজন বৃদ্ধের প্রয়োজন ১৯৫০ ক্যালোরির খাবার। আবার মেয়েদের ক্ষেত্রে ১১০ পাউন্ড ওজনের একজন যুবতীর (২৫ বছর) দৈনিক প্রয়োজন ২০৫০ ক্যালোরির খাবার। একই ওজনের একজন প্রৌঢ়ার প্রয়োজন ১৯৫০ ক্যালোরির খাবার এবং একজন বৃদ্ধার প্রয়োজন ১৬০০ ক্যালোরির খাবার। পুরুষদের তুলনায় মেয়েদের ক্যালোরি কম প্রয়োজন হয়।
জেনে রাখুন যে এক গ্রাম কার্বোহাইড্রেট দহন করে পাওয়া যায় ৪ ক্যালোরি, এক গ্রাম প্রোটিন দহন করে পাওয়া যায় ৪ ক্যালোরি এবং এক গ্রাম ফ্যাট দহন করে পাওয়া যায় ৯ ক্যালোরি। অল্প পরিমাণ ফ্যাট যুক্ত খাবার গ্রহণ করলে প্রচুর ক্যালোরি পাওয়া যায়।
কোন খাবারে কত ক্যালোরিঃ
চালের রুটি একটিতে ১০৫ ক্যালোরি, পরোটা তেলে ভাজা একটিতে ২৪৩-২৯০ ক্যালোরি, এক কাপ সাদা চালের ভাতে ২০০-২৪২ ক্যালোরি, এক কাপ পোলাওয়ে ২৫৮ ক্যালোরি, এক কাপ দুধে ১৪৬ ক্যালোরি, এক কাপ সিদ্ধ নুডুলসে ২২০ ক্যালোরি, একটি ডিম সিদ্ধ ৭৫(৬০ কুসুম +১৫ সাদা অংশ) ক্যালোরি, একটি ডিম ভাজি ৯২-১৭৫ ক্যালোরি, একটি ডিম পোচ ২০২ ক্যালোরি।
একটি চিকেন ফ্রাইতে ১২৮ গ্রামে ৩৯০ ক্যালোরি, মুরগি ভুনা ১০০ গ্রাম/আধা কাপে ১৩২—৩২৩ ক্যালোরি, খাসির রেজালা ১০০ গ্রামে ৩২৩ ক্যালোরি, একটি গরুর শিক কাবাবে ১৬০ ক্যালোরি, মিক্সড সবজি সিদ্ধ ১ কাপে ৫০ ক্যালোরি, মিক্সড সবজি ভাজি ১ কাপে ১১০ ক্যালোরি, ফ্রাইড রাইস এক কাপে ২০-৩৯০ ক্যালোরি, চিকেন বিরিয়ানি এক কাপে ৪১৮ ক্যালোরি, গরু ভুনা এক কাপে ৪৩৪ ক্যালোরি, চিকেন কাটলেট একটিতে ৩৭৫ ক্যালোরি। মাছ কারি ১০০ গ্রামে ৩২৩-৫00 ক্যালোরি, কোমল পানীয় এক বোতল/ ক্যানে ১৫০ ক্যালোরি, চকলেট মিল্ক শেক এক গ্লাসে ৯০০ ক্যালোরি, মিষ্টি দই আধা কাপে ২০০ ক্যালোরি, ছানার সন্দেশ একটিতে ১২০ ক্যালোরি, রসমালাই ৪ টিতে ২৫০ ক্যালোরি, গরুর কলিজা কারি ১০০ গ্রামে ১৩৫ ক্যালোরি, জিলাপি বড় একটিতে ২০০ ক্যালোরি, ফালুদা এক গ্লাসে ৩০০ ক্যালোরি, সিঙ্গারা একটিতে ২০০ ক্যালোরি, সমুসা একটি ১০৩-২৫৬ ক্যালোরি, আলুর চপ একটিতে ১৫০-২৭৫ ক্যালোরি।
আমরা অনেকেই ওজন বা মেদ কামানোর চেষ্টা করি। সেক্ষেত্রে কম ক্যালোরি যুক্ত খাবার গ্রহণ করতে হবে। আর চেষ্টা করতে হবে যেন বেশি পরিমাণ ক্যালোরি খরচ হয়। কাজ করতে যেহেতু ক্যালরির প্রয়োজন হয় তাই বেশি পরিমাণ কাজ করলে বেশি পরিমাণ ক্যালোরি খরচ হয়। কোন কাজ করতে বেশি ক্যালোরি খরচ হয় আবার কোন কাজ করতে কম। আবার কেউ যদি প্রতিদিন প্রয়োজনের অতিরিক্ত মাত্র ১০০ ক্যালোরি করে বেশি খায়, বছর শেষে দেখা যাবে তার ওজন বেড়ে গেছে চার থেকে পাঁচ কেজি!
কি ধরনের কাজে প্রতি ঘণ্টায় কি পরিমাণ ক্যালোরি খরচ হয়ঃ
ফুটবল খেলতে ৬০০ ক্যালোরি, স্নান করতে ১০০ ক্যালোরি, পোশাক পরতে ৫০ ক্যালোরি, টেলিফোনে কথা বলতে ৫০ ক্যালোরি, আস্তে সাঁতার কাটা ৪০০ ক্যালোরি এবং দ্রুত সাঁতার কাটা ৮০০ ক্যালোরি, ছবি আঁকতে ১৫০ ক্যালোরি, গল্প লিখতে ২৫০ ক্যালোরি, ঘোড়া দৌড়লে ২৫০ ক্যালোরি, কাপড় ইস্ত্রি করতে ১০০ ক্যালোরি, পিয়ানো বাজাতে ৭৫ ক্যালোরি, দ্রুত দৌড়াতে ৯০০ ক্যালোরি, গান গাইলে ৫০ ক্যালোরি, অফিসে কাজ করতে ২০০ ক্যালোরি, বাগানে কাজ করতে ২৫০ ক্যালোরি, দাঁত মাজতে ১০০ ক্যালোরি, চুল আঁচড়াতে ১০০ ক্যালোরি, খাদ্য গ্রহণ করতে ৫০ ক্যালোরি।
তাস খেলতে ২৫ ক্যালোরি, নৌকা বাইচ দিতে ৪০০ ক্যালোরি, বাস্কেট বল খেলতে ৫৫০ ক্যালোরি, ব্যাডমিন্টন খেলতে ৪০০ ক্যালোরি, টেবিল টেনিস খেলতে সিংগল ৪৫০ ক্যালোরি এবং ডাবল ৩৫০ ক্যালোরি, মাছ ধরতে ১৫০ ক্যালোরি, নৃত্য করলে আস্তে ৩৫০ ক্যালোরি এবং দ্রুত ৬০০ ক্যালোরি, আস্তে সাইকেল চালাতে ৩০০ ক্যালোরি এবং দ্রুত সাইকেল চালাতে ৬০০ ক্যালোরি, আস্তে হাঁটতে ২০০ ক্যালোরি এবং দ্রুত হাটতে ৩০০ ক্যালোরি, খাবার তৈরি করতে ১০০ ক্যালোরি, সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতে ৮০০ ক্যালোরি, টাইপ করতে ৫০ ক্যালোরি, সেলাই করতে ৫০০ ক্যালোরি এবং পড়াশোনা করতে ২৫ ক্যালোরি খরচ হয়।