ছবি সংগৃহীত

আম গাছে যথেচ্ছ ব্যবহার হচ্ছে ক্ষতিকর হরমোন

priyo.com
লেখক
প্রকাশিত: ২৭ মার্চ ২০১৪, ০৫:২২
আপডেট: ২৭ মার্চ ২০১৪, ০৫:২২

(দৈনিক যুগান্তর) - আমের রাজধানীখ্যাত চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও রাজশাহীতে এবার নজর পড়েছে অধিক মুনাফালোভী ব্যবসায়ীদের। মালিকদের কাছ থেকে মৌসুমভিত্তিক আমবাগান কিনে তাতে ব্যবহার করছেন মাত্রাতিরিক্ত হরমোন। এ ধরনের হরমোন ভারত থেকে আসছে চোরাই পথে। সঠিক মাত্রায় এসব রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহার না করায় গাছ দিন দিন ফল ধারণের ক্ষমতা হারিয়ে ফেলছে বলে মনে করছেন গবেষকরা। তারা বলছেন- এতে ধীরে ধীরে আমগাছ মারাও যেতে পারে। এ অবস্থা চলতে থাকলে কয়েক বছরের মধ্যেই রাজশাহী অঞ্চলের আমবাগান উজাড় হয়ে যেতে পারে বলে আশংকাও প্রকাশ করেছেন তারা। সূত্র মতে, এক শ্রেণীর অতিরিক্ত মুনাফালোভী আম ব্যবসায়ী বাগান মালিকদের চোখে ফাঁকি দিয়ে কালটার নামক এক ধরনের ভারতীয় হরমোন আম গাছে ব্যবহার করছে। কীটনাশকের সঙ্গে অথবা রাসায়নিক সারের সঙ্গে মিশিয়ে আমগাছে কালটার ব্যবহার করা হচ্ছে। এর ফলে কয়েক মাস পর ধীরে ধীরে আমগাছের পাতা শুকিয়ে যায়। একপর্যায়ে গাছটি শুকিয়ে মারা যায়। চাঁপাইনবাবগঞ্জ এলাকায় ইতিমধ্যে অনেক গাছ মারা গেছে বলে জানা গেছে। মাঠ পর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তারা জানান, অবৈধ পথে আসা এই কালটার ভারতে বিভিন্ন এক বা দু ফসলি জমিতে অধিক ফলনের জন্য ব্যবহার করা হয়। বিশেষ করে বেগুন, টমেটো, মরিচ, সরিষা, মিষ্টি কুমড়া প্রভৃতি এক ফসলের ক্ষেতে ব্যবহৃত হয়। কিন্তু আম গাছের মতো বহু বছর ধরে ফল দেয় এমন গাছের জন্য এটি ভয়ানক ক্ষতিকর। সূত্র জানায়, গত ৪ থেকে ৫ বছর আগে সীমান্তবর্তী জেলা চাঁপাইনবাবগঞ্জ এলাকার একশ্রেণীর চোরাকারবারি কালটার বাংলাদেশে এনে আম ব্যবসায়ীদের মাঝে ছড়িয়ে দেয়। এরপর ব্যবসায়ীরা অতিরিক্ত লাভের আশায় ব্যাপক হারে এটি ব্যবহার করেন। এক লিটার ভারতীয় কালটার এর দাম ১০ হাজার টাকা। চাঁপাইনবাবগঞ্জ শিবগঞ্জের রানীহাটি এলাকার দোস্ত মোহাম্মদ বিশ্বাস ওয়াকফ স্টেটের মোতায়ালি রেজাউল আনাম রেজা বলেন, হরমোন জাতীয় কালটার নামক মেডিসিনটি দেয়ার কারণে তাদের বাগানের প্রায় ৫০টি আমগাছ মারা গেছে। আগামী দুএক বছরের মধ্যে অধিকাংশ গাছ মরে বাগান ধ্বংস হয়ে যেতে পারে বলে তার আশংকা। বিশেষজ্ঞরা জানান, প্রাকৃতিক নিয়মে এক বছর আমের বাম্পার ফলন হলে পরের বছর ফলন হয় কম। সে হিসাবে এ বছর আমের জন্য অফ ইয়ার। গত বছর ছিল আমের অন ইয়ার। তাই বলে ফলন বাড়ানোর জন্য আমের বাগানে ক্ষতিকর হরমোন ব্যবহার করা ঠিক নয়। এতে শুধু গাছের নয়, বরং ওইসব গাছের ফল খেলে মানুষেরও ক্ষতি হতে পারে। রাজশাহী ফল গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মোঃ আলীম উদ্দীন দিলেন ভয়ংকর তথ্য। তিনি জানান, আম বাগান মালিকরা নিজেরা আমের চাষ করেন না, তারা ব্যবসায়ীদের কাছে বাগান বিক্রি করে দেন। আর ব্যবসায়ীরা নিজেরা লাভবান হতে সঠিকমাত্রা ও সময় না জেনে ইচ্ছেমতো হরমোন ও ভিটামিন ব্যবহার করছে। নিয়ম হল, একবার যে বাগানে হরমোন স্প্র্রে করা হবে, সেই বাগানে পরবর্তী তিন বছর আর কোনো হরমোন স্প্রে করা যাবে না। যদি তা করা হয়, তাহলে দীর্ঘ মেয়াদে বাগান ক্ষতিগ্রস্ত হবে।