
শ্রমিকের সংখ্যা দিন দিন কমায় কৃষিতে যান্ত্রিকীকরণের বিকল্প নেই
আমি একটু ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে এ কৃষিবিষয়ক সম্মেলনে বক্তব্য রাখতে চাই। সেটি হচ্ছে আমাদের গ্রামাঞ্চলে আর্থসামাজিক পরিবর্তনের ফলে কৃষি উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার একটা বড় সম্ভাবনা রয়েছে। তবে আশাব্যঞ্জক খবর হচ্ছে আমাদের গ্রামাঞ্চলেও শিক্ষিত মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। সমস্যা হচ্ছে এসব শিক্ষিত ছেলে গ্রামে থাকতে চাচ্ছে না। পারিবারিকভাবে ফার্মিং বা কৃষি পেশায় তারা যুক্ত থাকতে চাচ্ছে না। অর্থাৎ এ প্রজন্মের কৃষকের পর পরবর্তী প্রজন্মে কৃষকের সংখ্যা কমে যাবে। এটা স্বাভাবিক। অন্যান্য দেশেও এ রকম হয়েছে। আরেকটি বিষয় বলা দরকার। কৃষি শ্রমিক এখন আর সহজলভ্য নেই। শুধু তাদের মজুরি বেড়েছে তা নয়। শ্রমিকের সরবরাহ কমে গেছে। কারণ তাদের এখন বিকল্প অনেক পেশা আছে। দেশে নানা উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের কারণে তাদের অনেক বিকল্প পেশার উদ্ভব হয়েছে।
আরেকটা দিক হচ্ছে গ্রামের জমির মালিকদের একটি বড় অংশ থাকেন শহরে, চাকরি করেন। তারা কিন্তু গ্রামে ফিরে যাবেন না। ছুটিতে গিয়ে কিছুদিন সময় কাটিয়ে আসবেন। তাদের জমির একটা বৃহৎ অংশই চাষ হচ্ছে না। আগের দিনে বর্গা চাষের প্রথা ছিল। তখন যাদের জমি নেই বা কম জমি, তারা অন্যদের কাছে জমি বর্গা নিয়ে চাষাবাদ করতে পারতেন। বেশ কয়েক বছর আগেও আমরা শুনেছি, এ ধরনের বর্গাচাষীরা জমির জন্য মালিকের বাড়ি এসে যোগাযোগ করছেন এবং জমির বন্দোবস্ত নিতে চাচ্ছেন। এখন সেই সংখ্যা অনেক কমে গেছে।
আমাদের দেশে মুনাফাভিত্তিক কৃষি শুরু হয়ে গেছে। যেমন আমাদের কিছু কিছু তরুণ মাছ চাষ ও সবজি চাষ শুরু করেছেন। সফলও হয়েছেন। প্রকৃতপক্ষে কিছুদিন পর দেখা যাবে, ফার্মিং বা কৃষিপণ্য উৎপাদন বা অন্যান্য কৃষিপণ্য উৎপাদনও এভাবে ব্যবসায়িক প্রচেষ্টা হিসেবেই শুরু হবে। তবে আরো বড় আকারে করতে হবে। তা না হলে জমি চাষ হবে না, উৎপাদনও বাড়বে না। তবে সামাজিক পরিবর্তন স্বাভাবিক। আমাদের সমস্যা কীভাবে সমাধান করতে পারি, সেটি নিয়ে ভাবতে হবে।
আরেকটা বিষয় হচ্ছে যেহেতু কৃষি শ্রমিকের সংখ্যা দিন দিন কমতেই থাকবে সুতরাং যান্ত্রিকীকরণ ছাড়া আমাদের কোনো বিকল্প নেই। কৃষিতে যান্ত্রিকীকরণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কৃষিতে শিক্ষিত ছাত্ররা গ্রামে ফিরে গিয়ে কৃষিকে একটা ব্যবসা হিসেবে গ্রহণ করতে পারে, তাহলে সেটি তাদের জন্য একটা বড় সুযোগ তৈরি করবে। চাকরির পেছনে না দৌড়ে তরুণরা কৃষি খাত থেকে অনেক বেশি আয় করতে পারে। যদিও এটা আমাদের মনে রাখা দরকার, ব্যবসায় কিছুটা ঝুঁকি থাকবেই। কেউ কেউ হয়তো ব্যর্থ হবে আবার কেউ কেউ সফল হবে। এজন্য আমাদের বিদ্যালয়, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে কৃষি উদ্যোক্তা সৃষ্টির প্রচেষ্টা নিতে হবে। কোর্স থাকতে হবে। অনেকেই হয়তো আশ্চর্য হবেন শুধু কৃষির ছাত্ররাই নয়, অন্য বিষয়ের স্নাতকধারীরাও এখন কৃষিতে আসছে।
- ট্যাগ:
- মতামত
- কৃষিকাজ
- যান্ত্রিকীকরণ