এ মুহূর্তে সুষ্ঠু নির্বাচন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ

যুগান্তর অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ প্রকাশিত: ০৬ আগস্ট ২০২৫, ১০:১২

৫ আগস্ট বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা একটি দিন। গত বছর ছাত্র-জনতার মাসাধিককাল চলা সরকারবিরোধী আন্দোলনের সফল পরিণতি ঘটে শেখ হাসিনার সাড়ে ১৫ বছরের একটানা শাসনের সমাপ্তির মধ্য দিয়ে। গত বছরের শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ছিল বিস্ময়কর এবং নবচেতনায় উদ্দীপ্ত। ছাত্ররা সরকারি চাকরিতে বিদ্যমান কোটা সুবিধা সংস্কারের দাবিতে প্রাথমিকভাবে আন্দোলন শুরু করে। পর্যায়ক্রমে সেই আন্দোলন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে রূপ নেয়। পরবর্তীকালে সরকারের অসহিষ্ণু আচরণ ও নির্মম নির্যাতনের কারণে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন বেগবান হয় এবং একপর্যায়ে তা সরকার পতনের চূড়ান্ত আন্দোলনে পরিণত হয়। সরকার যদি শিক্ষার্থীদের আলোচনায় ডেকে তাদের যৌক্তিক দাবি মেনে নিত, তাহলে হয়তো শিক্ষার্থীদের আন্দোলন এতটা তীব্র আকার ধারণ করত না। সরকারের শীর্ষপর্যায় থেকে শিক্ষার্থীদের দাবি উপেক্ষা করা হয়। ফলে একপর্যায়ে তারা সরকার পতনের একদফা আন্দোলন গড়ে তোলে।


আমাদের দেশে সাধারণত রাজনৈতিক দলগুলোই সরকার পতনের আন্দোলন করে। কিন্তু গত বছর জুলাই-আগস্টে সরকার পতনের যে আন্দোলন হয়েছিল, তার সূচনা হয়েছিল ছাত্রদের মাধ্যমেই। পরবর্তী সময়ে রাজনৈতিক দলগুলো সেই আন্দোলনে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে যুক্ত হয়। সরকার আন্দোলন দমনের নামে যতই নির্যাতন চালাতে শুরু করে, আন্দোলন ততই বেগবান হয়। একপর্যায়ে সরকারের পতন ঘটে। শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশত্যাগে বাধ্য হন। গত বছরের শিক্ষার্থী আন্দোলনের একটি বৈশিষ্ট্য ছিল এতে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও ব্যাপকভাবে অংশগ্রহণ করে। এমনকি কলেজের শিক্ষার্থীরাও আন্দোলনে যুক্তি হয়েছিল।


প্রতিবার গণ-আন্দোলনের মাধ্যমে সরকার পরিবর্তিত হলে একধরনের প্রত্যাশা সৃষ্টি হয়। মানুষ মনে করে, তাদের সমস্যা সম্ভবত এবার নিরসন হবে। গত বছরের আন্দোলনের মাধ্যমে শেখ হাসিনার সাড়ে ১৫ বছরের নির্মম শাসনের অবসান হলে সব শ্রেণির মানুষের মনে উচ্চ প্রত্যাশা সৃষ্টি হয়; কিন্তু সেই প্রত্যাশা ইতোমধ্যেই ফিকে হতে শুরু করেছে। অন্তর্বর্তী সরকার মানুষের প্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থ হয়েছে। কোনো ক্ষেত্রেই দৃশ্যমান অগ্রগতি হয়নি। প্রতিবার আন্দোলনের মাধ্যমে সরকার পতন হলে কয়েকদিন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটলেও অতি দ্রুত স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসে। কিন্তু এবার এর ব্যত্যয় লক্ষ করা যাচ্ছে। দেশব্যাপী সন্ত্রাস-নৈরাজ্য চলছে। বিশেষ করে মব সন্ত্রাস অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে বেড়েছে। সেনাবাহিনীকে ম্যাজিস্ট্রেসি পাওয়ার দিয়ে অপারেশন ডেভিল হান্ট পরিচালনা করা হয়েছে। কিন্তু এরপরও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে না। মানুষ ঘর থেকে বের হতে সাহস পাচ্ছে না।


দেশের মানুষের মাঝে বিভাজন ও বৈষম্য সৃষ্টির কারণে শেখ হাসিনার পতন হয়েছে। কিন্তু আমরা কি এখন বিভাজনের রাজনীতি থেকে বেরিয়ে আসতে পেরেছি? রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে জুলাই আন্দোলনের মাধ্যমে যে দৃঢ় ঐক্য গড়ে উঠেছিল, তা শিথিল হয়ে গেছে। মনে হচ্ছে, দেশ আবারও আগের মতো নৈরাজ্যজনক অবস্থার দিকে ধাবিত হচ্ছে। শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে সব শ্রেণি-পেশার মানুষ ঐক্যবদ্ধ হয়ে জীবনবাজি রেখে মাঠে নেমেছিল। এমন বিজয় আমরা অতীতেও বারবার দেখেছি। কিন্তু বিশ্বাসঘাতকতার কারণে বারবার বিজয় ব্যর্থ হয়েছে। দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যেভাবে বিভেদ সৃষ্টি হচ্ছে, তার কারণে জুলাই বিপ্লবের উদ্দেশ্যও ব্যর্থ হতে পারে।


অন্তর্বর্তী সরকারের বিভিন্ন অসংগতি নিয়ে কথা বললেই বলা হয় সবকিছু রাতারাতি পরিবর্তন করা সম্ভব নয়। আমরাও জানি সবকিছু রাতারাতি পরিবর্তন করা সম্ভব নয়। কিন্তু আমরা পরিবর্তনের সূচনা দেখতে চাই। কিন্তু সবকিছু আগের মতোই গতানুগতিক ধারায় চলছে। পাহাড় ও সমতলের মানুষ সমানভাবে আক্রান্ত হচ্ছে। কারও নিরাপত্তা নেই। চব্বিশের আন্দোলন হয়েছিল কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে বৈষম্য দূরীকরণের জন্য; কিন্তু এ সরকারের আমলে কোনো ক্ষেত্রেই বৈষম্য দূর হচ্ছে না। ছাত্র-জনতা শুধু এক সরকারের পরিবর্তে আরেক সরকারকে ক্ষমতায় বসানোর জন্য আন্দোলন করেনি। রাজনৈতিক দলগুলো এখনো সংস্কার প্রশ্নে একমত হতে পারেনি। সরকার মব সন্ত্রাস দমন করতে পারছে না। সরকারের কোনো কোনো কর্তাব্যক্তি মব সন্ত্রাসের পক্ষে সাফাই গাইছেন।


আমাদের দেশে দেখা যায়, যারা বিভিন্ন সময় আন্দোলনে গিয়ে প্রাণ হারায়, তাদের পরিববার পরবর্তীকালে নিঃস্ব হয়ে পড়ে। এবারও এর লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। যারা জুলাই আন্দোলনে শহীদ হয়েছেন, তাদের সঠিক ও পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রণয়ন করতে হবে। যারা আহত হয়েছেন, তাদের সুচিকিৎসা দিতে হবে। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী এবং যেসব পুলিশ সদস্য নিহত হয়েছেন, তাদের নিহত হওয়ার প্রেক্ষাপটসহ আহত ও নিহতদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রণয়ন করতে হবে।


বাংলাদেশের মানুষের অতীতের সব লড়াইকে গুরুত্ব দিতে হবে এবং একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধকে সবার উপরে রাখতে হবে। যারা একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধকে ছোট করে দেখাতে চায়, তারা গণ-অভ্যুত্থানের প্রতিপক্ষ শক্তি। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ আওয়ামী লীগের সম্পত্তি নয়। তাদের কবল থেকে মুক্তিযুদ্ধকে উদ্ধার করে জনগণের মালিকানায় নিয়ে আসতে হবে।


চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থানকেও নতুন ধরনের চাঁদাবাজ, দখলদার, সাম্প্রদায়িক ও ধর্মীয় ফ্যাসিবাদী শক্তি অপব্যবহার করা শুরু করেছে। তাদের কাছ থেকেও এ অভ্যুত্থানকে জনগণের মালিকানায় নিয়ে আসতে হবে। এ অভ্যুত্থানের কোনো নির্দিষ্ট বা একক মালিক নেই। গণ-অভ্যুত্থানের মালিক হচ্ছে জনগণ।


দ্রোহযাত্রা থেকে চলমান আটক ও গ্রেফতার-বাণিজ্য, চাঁদাবাজি, মব সন্ত্রাস, পাইকারি মামলা বন্ধের দাবি জানাই। বাংলাদেশে সব শহীদ ও আহতদের পূর্ণ দায়িত্ব রাষ্ট্রকে নিতে হবে এবং জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচার যথাযথভাবে করতে হবে।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও