
ছবি সংগৃহীত
আমার বন্ধু রাশেদ
আপডেট: ২২ মে ২০১৩, ১৭:১৩
লেখকঃ মুহম্মদ জাফর ইকবাল প্রচ্ছদঃ ধ্রুব এষ প্রকাশকালঃ ফেব্রুয়ারী ১৯৯৪ “আমার বন্ধু রাশেদ” কিশোর মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে লেখা উপন্যাস। মুহম্মদ জাফর ইকবাল এর লেখা এই উপন্যাসের পটভূমি হল ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে আমাদের দেশের কিশোরেরা কি ভাবে অংশ গ্রহন করেছিল। আর তাদের অবদান কেমন ছিল। অসম্ভব সুন্দর এই উপন্যাস নিয়ে চলচিত্রও নির্মিত হয়। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের অনুদানে নির্মিত এই চলচিত্রটি পরিচালনা করেন শিশুতোষ চলচিত্র নির্মাতা মোরশেদুল ইসলাম। আর এই চলচিত্রটিতে অভিনয় করেন কিছু স্কুল পড়ুয়া ছাত্র। ইমপ্রেস টেলিফিল্ম এর ব্যানারে নির্মিত অসম্ভব সুন্দর এই মুভিটা যারা দেখেননি তারা অবশ্যই দেখবেন। ১৯৭০ সালের ঘটনা লাড্ডু নামে একটি ছেলে ইবুদের ক্লাশে আসে। লাড্ডু নামটি সারের পছন্দ না হওয়াই, সব ছাত্রকে লাড্ডুর জন্য সুন্দর একটি নাম লিখে আনতে বলেন। এই ভাবে লাড্ডুর নাম হয়ে যায় রাশেদ হাসান। আর এই রাশেদ হাসান কে নিয়েই এই উপন্যাস “আমার বন্ধু রাশেদ”। রাশেদের বাবা একটু "পাগলা কিসিমের", তার ছেলের সাথে বসে তিনি রাজনীতি নিয়ে কথা বলেন। দেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলেন। পাকিস্থান সরকার পূর্ব পাকিস্তানের লোকজনের সাথে কি ভাবে অবিচার করেছে, বঙ্গবন্ধু কে তারা ক্ষমতায় যেতে দিবে না,এসব তার নখ দর্পণে। রাশেদ ইদানিং আবার মশাল মিছিলে যায়। একদিন ইবুদের পাড়াতে বেড়াতে যায় রাশেদ।সেখানেই পরিচয় ঘটে শফিক ভাই এর সাথে। ইবুর ধারনা এমন কিছু নেই যা শফিক ভাই জানেন না । তাই তারা শফিক ভাইয়ের কাছে যায় কি ভাবে ঔষধ বানানো যায় । এই ভাবেই শফিক ভাই এবং অরু আপুর সাথে পরিচয় হয় রাশেদের। অরু আপু শফিক ভাইয়ের প্রেমিকা। তারপর অনেক সময় পেরিয়ে যায় রাশেদ অনেক কিছু শেখায় ইবু,আশরাফ, ফজলুকে। ১৯৭১ সাল মার্চ মাসের ২৫ তারিখ ঢাকাতে যুদ্ধ শুরু হয়েছে। পাকিস্থানি সেনাবাহিনীরা নির্বিচারে মেরে ফেলছে বাঙ্গালিদের। ছোট শহর দিনাজপুর থেকেও খবর পায় রাশেদেরা। হিন্দুদেরকে যে ভাবে মারা হচ্ছে তাতে মনে হয়, আমরা এই দেশে থাকতে পারবনা- দিলিপ এই কথা গুলো বলে ইবুকে। তারপর তার একদিন দিনাজপুর ছেড়ে ভারতের দিকে যাত্রা শুরু। দিনাজপুর শহরে পাক বাহিনী আক্রমণ করে এপ্রিলের ত্রিশ তারিখে। এসময় সেনাবাহিনীর বিভিন্ন অপারেশনের কথা বন্ধুদেরকে জানায় রাশেদ। দেশে মুক্তিবাহিনী পাকবাহিনীদের সাথে লড়ছে। রাজাকারেরা কি ভাবে মিলিটারিদের সাহায্য করছে তা নিজ চোখে দেখে রাশেদ। এর মধ্য শফিক ভাই মুক্তিবাহিনীতে যোগ দেয়,আর এই খবরটা প্রথম পায় ইবু। তারপর একে একে সবাই। শান্তি বাহিনীর লোক আজরফ আলীকেকে ভয়ও দেখায় রাশেদ। এই ভাবেই যুদ্ধের সময় কঠিন সময় পার করে দিনাজপুর শহরবাসী। পাকিস্তানি মিলিটারিরা ওদের স্কুলে ঘাঁটি করেছে। আর এই স্কুলের একটি ম্যাপ করা ছিল আশরাফের কাছে । আর এই ম্যাপটি মুক্তি বাহিনীর হাতে পৌঁছে দেয় রাশেদ বাহিনী। এতে করে মুক্তি বাহিনীদের সুবিধা হয়, কোথায় পাহারাদার কোথায় অস্ত্রাগার সেসব তারা বুঝে নেয়। শহরের বিভিন্ন খবরা- খবর মুক্তিবাহিনীর কাছে পৌঁছে দেয় রাশেদ,ইবু। একদিন ইবু অরু আপুদের বাসাতে থাকার নাম করে ইবু ও রাশেদ মুক্তিবাহিনীদের সাথে দেখা করতে যায় । আর সেখানে যেয়ে দেখা পায় শফিক ভাই এবং ওদের বন্ধু কাদেরের সাথে। মিলিটারি ঘাটিতে আক্রমণ করবে মুক্তিবাহিনী। আর এর জন্য নিজেদের জীবন বাজি রেখে মুক্তিবাহিনীর কাছে গুলি পৌঁছে দেয় রাশেদ,ইবু,আশরাফ ও ফজলু। এর এই মিলিটারি ঘাঁটি আক্রমনে মুক্তিবাহিনীদের সাথে সম্মুখ যুদ্ধে অংশ গ্রহন করে ইবু ও রাশেদ। এই সময়টাতে গুলি চালায় রাশেদ। শফিক ভাইয়ের কাঁধে গুলা লাগাটা কাছে থেকে দেখে ওরা দু’জন। শফিক ভাইকে কাছে একটা হাসপাতালে ভর্তি করে মিলিটারিরা। এই বাচ্চা ছেলেগুলো ভেবে চিন্তে একটা প্ল্যান কররে শফিক ভাইকে হাসপাতাল থেকে বের করে নিয়ে আসে রাশেদ বাহিনী। পুরো প্ল্যানটা ছিল রাশেদের আর এতে অংশ নেয় ইবু,ফজলু, আশরাফ আর রাশেদ। অবস্থা বেগতিক দেখে ইবুর বাবা শহর থেকে গ্রামে চলে যান সবাইকে নিয়ে। ফজলু ও আশরাফের বাবা–মাও আর থাকেনি। যাবার দিন সবাই খুব কেঁদেছিল। রাশেদ শেষে বলেই ফেলে ,আমাকে একা রেখে তোরা চলে যাবি? যাবার সময় নৌকাতে অরু আপাকে তাদের সব অপারেশনের কথা বলে ইবু। তাদের সব প্ল্যান যে রাশেদের মাথা থেকে বের হতো তাও বলে সে। অতপরঃ নয় মাস যুদ্ধের পর দেশ স্বাধীন হল। ইবুরা জানুয়ারি মাসের ২৯ তারিখে দুপুর বেলা শহরে পৌছায়। সব কিছু ভাঙ্গা কোন কিছু চিন্তে পারে না ইবু। সে ফজলু আর আশরাফের সাথে দেখা করে এবং রাশেদের কথা জানতে চায়। ফজলু আর আশরাফ চমকে ওঠে ,তুই কিছু জানিস না। শোন ডিসেম্বর মাসের ২ তারিখে আজরফ আলী রাজাকার রাশেদ কে নদীর ধারে দাঁড় করিয়ে...... বলতেই কেঁদে ফেলে আশরাফ। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে কিশোরেরা কি ভাবে যেন শৈশবকে বিদায় জানিয়ে বড় হয়ে গিয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধে তাদের ও অবদান কোন অংশে কম নয়। কি হয়ে ছিল রাশেদের জানতে পড়ে ফেলুন অসম্ভব সুন্দর এই উপন্যাস আমার বন্ধু রাশেদ। সংগ্রহ করে দেখে নিন ইমপ্রেস টেলিফিল্ম এর ব্যানারে নির্মিত “আমার বন্ধু রাশেদ” চলচিত্রটি ।