
বিশ্বের মানচিত্রে স্থান করে নেওয়ার পর থেকে ভারত-পাকিস্তানের সম্পর্ক কোনোদিনই তেমন ভালো ছিল না। এটিকে এমনকি অম্লমধুর সম্পর্কও বলা যাবে না; বরং আদা-কাঁচকলায় সম্পর্ক বলাটা অধিক যুক্তিযুক্ত হবে। ৭৫ বছর আগে আলোচনার টেবিলে এ দুই দেশ স্বাধীনতা পাওয়ার পর এ পর্যন্ত তিনবার বড়সড় যুদ্ধে এবং অন্তত তিনবার ছোটখাটো যুদ্ধে জড়িয়েছে। কিন্তু যুদ্ধের মূল কারণ, অর্থাৎ পরস্পরের প্রতি অবিশ্বাস দূর করার কোনো কার্যকর পদক্ষেপ কখনো লক্ষ করা যায়নি। এমনকি সেদিন, গত ৭ মে এ দুই দেশ একটা বড়সড় যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ার ঝুঁকিতে পড়েছিল। কিন্তু শুভবুদ্ধির উদয় হওয়ায় এ যাত্রা বড় যুদ্ধটাকে এড়ানো গেছে। কিন্তু এর পরবর্তী সংঘাতটাই যে বড় কোনো যুদ্ধে (এমনকি পারমাণবিক যুদ্ধে) রূপলাভ করবে না, তা বলা মুশকিল। যুদ্ধ আপাতত শেষ; কিন্তু এ অঞ্চলের মানুষের ভীতি ও আতঙ্ক শেষ হতে বহু বাকি।
গত ২২ এপ্রিল ভারতের দখলকৃত জম্মু-কাশ্মীরে একদল সন্ত্রাসী কাশ্মীরের ‘পেহেলগাম’ নামক স্থানে একটি জঙ্গি হামলা করে। এ জঙ্গি হামলায় ২৬ পর্যটক নিহত হয়। প্রথম থেকেই এ বিষয়ে ভারতের মনোভাব ও বক্তব্য ছিল এটি পাকিস্তানসমর্থিত ইসলামি জঙ্গিদের দ্বারা সংঘটিত হয়েছে। এর পক্ষে তারা The Resistance Front (TRF) নামক সংগঠনের দায়িত্ব স্বীকারের বিষয়টিকে সামনে নিয়ে আসে, যারা ‘লস্কর ই তাইয়েবার’ অনুসারী বলে প্রচারিত। যদিও পাকিস্তান এ ঘটনার নিন্দা জানিয়ে একটি নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি জানিয়েছিল; কিন্তু ভারত এর পেছনে পাকিস্তানের মদদের বিষয়টিকে সামনে এনে প্রচারণা চালাতে থাকে। তারা তাদের প্রচারমাধ্যমগুলোয় প্রচার করে, জঙ্গিরা আক্রান্ত পর্যটকদের হিন্দু পরিচয় নিশ্চিত করার পর হত্যা করে। এটি যে সর্বৈব মিথ্যা, তা পরবর্তীকালে ভারতের মিডিয়ায়ই প্রকাশিত হয়েছে। পরিসংখ্যান দেখা যায়, নিহত পর্যটকদের মধ্যে ১৫ মুসলিম এবং ১১ হিন্দু। পরবর্তীকালে আরও বেরিয়ে আসে স্থানীয় মুসলিম গাইড/ড্রাইভারদের বীরত্বগাথা। একজন গাড়িচালক তার গাড়ির যাত্রীদের রক্ষা করতে গিয়ে নিজের জীবন বিসর্জন দেন।