ঢাকা-বেনাপোল ট্রেন সার্ভিস শুরু ১৭ই জুলাই
প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে চালু হচ্ছে ঢাকা-বেনাপোল সরাসরি রেল সার্ভিস। অবশেষে রাজধানী ঢাকার সঙ্গে দেশের বৃহত্তম স্থলবন্দর বেনাপোলকে সরাসরি রেল যোগাযোগের আওতায় আনা হচ্ছে। এই জন্য চালু করা হচ্ছে একটি বিলাসবহুল বিরতিহীন ট্রেন সার্ভিস। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী ১৭ই জুলাই ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এই ট্রেন সার্ভিসের উদ্বোধন করবেন। ইতিমধ্যে রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন বেনাপোল স্থলবন্দর ও যশোর রেলস্টেশন পরিদর্শন করে এ সংক্রান্ত খুঁটিনাটি বিষয়ে খোঁজখবর নেন। এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে বাংলাদেশ রেলওয়ের পশ্চিম জোনের চিফ কমার্শিয়াল অফিসার শাহনেওয়াজ বলেন, প্রথম পর্যায়ে ঢাকা-বেনাপোল বিরতিহীন ট্রেন সার্ভিসটি ২৫শে জুলাই উদ্বোধন করা হবে বলে রেলমন্ত্রী নিশ্চিত করেছিলেন। কিন্তু পরবর্তীতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সম্মতি সাপেক্ষে তা এগিয়ে এনে ১৭ই জুলাই সকাল ১০টায় করা হয়েছে। এদিন গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এই ট্রেন সার্ভিসটি উদ্বোধন করবেন বলে আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা নিশ্চিত করেছেন। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য দুই স্টেশনের কর্মকর্তাসহ দায়িত্বশীল ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে বেনাপোল রেলস্টেশন মাস্টার সাইদুজ্জামান বলেন, আগামী ১৭ই জুলাই বেনাপোল-ঢাকা সরাসরি রেল চলাচল উদ্বোধনের দিনক্ষণ ঠিক হয়েছে। ওইদিন সকাল ১০টায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এই রেল চলাচল উদ্বোধন করবেন। এই লক্ষ্যে আগামী ১১ই ও ১৩ই জুলাই রেলওয়ের দুটি ঊর্ধ্বতন অগ্রগামী দল বেনাপোল ও যশোর রেলস্টেশন পরিদর্শন করবেন। ১৩ই জুলাই বিকালে রেলওয়ের মহাপরিচালক শামসুজ্জামান যশোর যাবেন। ইতিমধ্যে এ সংক্রান্ত কার্যক্রম শুরু হয়ে গেছে। ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন রেলের পশ্চিমাঞ্চলীয় কর্মকর্তারা। এ বিষয়ে ইন্দো-বাংলা চেম্বারের সভাপতি, বিশিষ্ট সিএন্ডএফ ব্যবসায়ী মতিয়ার রহমান জানান, এ বিষয়ে রেলওয়ের মহাপরিচালকের সঙ্গে কথা হয়েছে। তিনি ঢাকা-বেনাপোল রেল সার্ভিস উদ্বোধনের বিষয়ে সবিশেষ খবরাখবর দিয়েছেন। ১৭ই জুলাই সকাল ১০টায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এই সরাসরি ট্রেন সার্ভিসের উদ্বোধন করবেন। উল্লেখ্য, বেনাপোল স্থলবন্দর থেকে ভারতের কোলকাতা শহরের দূরত্ব মাত্র ৮০ কিলোমিটার। ভারতের বনগাঁ রেলস্টেশন দিয়ে বেনাপোলের সঙ্গে বর্তমানে সরাসরি মালবাহী ট্রেন ও খুলনা থেকে সরাসরি কোলকাতার হাওড়া স্টেশনের মধ্যে যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল সার্ভিস চালু রয়েছে। এ ছাড়া খুলনার সঙ্গে ঢাকার সরাসরি রেল সার্ভিস চালু রয়েছে গত কয়েক বছর ধরেই। কিন্তু দেশের বৃহত্তম স্থলবন্দর বেনাপোলের সঙ্গে ঢাকার সরাসরি কোনো ট্রেন সার্ভিস না থাকার কারণে বেনাপোল বন্দর দিয়ে কোলকাতাগামী যাত্রীদের ট্রেন সেবা নিতে বেশ বিড়ম্বনার শিকার হতে হচ্ছিল। যাত্রীদের এসব সমস্যার কথা মাথায় রেখে গত বছরই ঢাকা-বেনাপোল সরাসরি রেল সার্ভিস চালুর উদ্যোগ গ্রহণ করে রেল মন্ত্রণালয়। কয়েক দফা সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের পর অবশেষে চালু হচ্ছে বহু প্রতীক্ষিত ঢাকা- বেনাপোল ও বেনাপোল-ঢাকা সরাসরি রেল সার্ভিস। এই জন্য ইতিমধ্যে ইন্দোনেশিয়া থেকে উন্নতমানের কোচও আমদানি করেছেন রেল কর্তৃপক্ষ। এই রেলে ১০টি বগি থাকবে। দুটি এসি কেবিন ও দুটি এসি সেলুন কোচ ছাড়াও ৬টি নন এসি চেয়ার কোচ থাকছে। থাকছে খাবার বগিসহ নামাজের সুব্যবস্থা। এ ছাড়া এই ট্রেনে বিমানের আদলে থাকছে বায়োটয়লেট। ঢাকার কমলাপুর থেকে ট্রেনটি সপ্তাহে ৬ দিন রাতে ছেড়ে সকালে বেনাপোল বন্দরে পৌঁছাবে। একই ভাবে প্রতি সপ্তাহে ৬দিন সকালে অপর একটি ট্রেন বেনাপোল বন্দর থেকে ছেড়ে বিকেলে কমলাপুর স্টেশনে পৌঁছাবে। বিরতিহীন এই ট্রেনটি যাত্রাপথে ঈশ্বরদী ও যশোর জংশনে ৫ মিনিট করে যাত্রা বিরতিসহ চলাচলের সময় নির্ধারণ করা হয়েছে ৭ ঘণ্টা। ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে এসি কেবিন ১২শ’ টাকা, এসি চেয়ার ১ হাজার টাকা ও নন এসি চেয়ার ৫শ’ টাকা। স্টেশন মাস্টার সাইদুজ্জামান বলেন, এই সার্ভিসটি চালু হলে দেশের দক্ষিণাঞ্চলে রেল যোগাযোগে বিপ্লব ঘটবে। বর্তমানে সপ্তাহে ৬ দিন খুলনা ও ঢাকার মধ্যে রেল চলাচল করছে। এরপর বেনাপোল-ঢাকা রেল যোগাযোগ স্থাপন হলে সপ্তাহে প্রতিদিন গড়ে ২টি করে ট্রেন ঢাকা-যশোর ভায়া বেনাপোল-খুলনার মধ্যে চলাচল করবে। ফলে ঢাকা, খুলনা ও বেনাপোলগামী যাত্রী সাধারণের ভোগান্তি প্রায় শতভাগ দূর হবে। তবে এ বিষয়ে রেল ব্যবহারকারী একাধিক যাত্রীর প্রত্যাশা হচ্ছে রেলের শিডিউল বিপর্যয় রোধ করতে হবে। সেবার মান বাড়াতে হবে। তাহলে যাত্রীরা যেমন উপকৃত হবেন। তেমনি সড়কের নৈরাজ্য কিছুটা কমবে।
- ট্যাগ:
- বাংলাদেশ
- ডেমু ট্রেন সার্ভিস
- খুলনা
- ঢাকা
- যশোর