খাবার পানির জন্য হাহাকার। যেন কারবালার ময়দান। পানি থেকেও তা খাওয়ার অযোগ্য। দুর্গন্ধে বমি আসে। পানি ফুটিয়ে খেতেও ভয় জুরাইনবাসীর। এলাকাবাসী জানায়, ওয়াসার পানি মুখেই দেয়া যায় না। ফুটানোর পরেও থাকে অসহনীয় গন্ধ। পানি ফুটানোর পর ‘ফিটকিরি’ দিয়েও কাজ হয় না।ফলে বাধ্য হয়েই বাইরে থেকে পানি কিনতে হচ্ছে। সরজমিনে জুরাইন এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, এলাকাবাসীর উদ্যোগে বিভিন্ন মসজিদে ডিপটিউবওয়েল বসানো হয়েছে। এই পানি দিয়ে মসজিদের মুসল্লীরা ওজু করেন। আর এই টিউবওয়েল থেকে পাইপের মাধ্যমে জুরাইনের বিভিন্ন মোড়ে সংযোগ দেয়া হয়েছে। সেখান থেকে মানুষ খাবার পানি সংগ্রহ করে। বোতল প্রতি দুই টাকা করে মসজিদের ফান্ডে দেয়া হয়। আর এই পানি সংগ্রহের জন্য সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত রাস্তার মোড়ে মোড়ে থাকে মানুষের ভিড়। এলাকাবাসীর অভিযোগ, ওয়াসা থেকে হয়তো ভালো পানি আসে। কিন্তু যে পাইপ দিয়ে পানি আসে সেগুলোর একেবারেই বাজে অবস্থা। ৪০ বছর আগে যে ওয়াসার পাইপগুলো লাগানো হয়েছে এগুলো এখনো মেরামত হয়নি। অধিকাংশ জায়গায় পাইপগুলো ফেটে গেছে। ড্রেন এবং পাইপের আশে পাশে জমে থাকা ময়লা পানি ছিদ্র দিয়ে প্রবেশ করে পানি ময়লা হচ্ছে। অনেক সময় মটর দিয়ে পানি টানলেও পাইপে পানি পাওয়া যায় না। এই সব বিষয়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের বার বার অবহিত করা হলেও তারা এই বিষয়ে কোন কাজ করছেন না বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর। ওই এলাকার বাসিন্দা কাজী আলমগীর কামাল বলেন, ওইদিন ওয়াসার এমডি বলেছেন, তারা সব সময় তাদের পানি রাখার রিজার্ভ ট্যাংকগুলো পরিষ্কার করে রাখে। কিন্তু ওনারা ওয়াসা থেকে শতভাগ পিওর পানিও সরবরাহ করে থাকলেও আমরা বিশ্বাস করতে পারি না। কারণ আমরাতো ভালো পাানি পাচ্ছি না। এর একটাই কারণ, তাদের পানি সঞ্চালন পাইপগুলোতো ত্রুটিমুক্ত নয়। আর আমাদের জুরাইন এবং আশে পাশের এলাকায় প্রায় বাধ্য হয়েই মসজিদে ডিপকল বসানো হয়েছে। এই পানির জন্য আমরা দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন সংগ্রাম করে আসছি। কিন্তু এর কোন প্রতিকার পাচ্ছি না। ৬০ বছর বয়সি ভ্যান চালক মোশারফ হোসেন বলেন, আমি এখানে ছোট বেলা থেকেই থাকি। গত কয়েক বছর ধরে পানিতে এতোটা দুর্গন্ধ যে মুখে নিতে পারি না। তাই এলাকার মানুষ উদ্যোগ নিয়ে প্রায় সব মসজিদে ডিপকল বসিয়েছে। চাকুরীজীবী ছোটন দেবনাথ জানান, পানির সমস্যা নিয়ে কথা বলতে বলতে জীনটা শেষ করে দিচ্ছি। এই নিয়ে কতো আন্দোলন সংগ্রাম করছি। কিন্তু এর কোন প্রতিকার নেই। উল্টো আমাদের বিভিন্ন দিক থেকে হুমকি দেয়া হচ্ছে। এলাকার কোন জনপ্রতিনিধিই এই পানির সমস্যা সমাধানে এগিয়ে আসছে না। গৃহবধূ পারুল বেগম বলেন, বাসার পানিতে দুর্গন্ধ। খাওয়া যায় না। পানি ফুটানোর পরও গন্ধ থাকে। এ কারণে লাইনে দাঁড়িয়ে হলেও টিউবওয়েলের পানি নিয়ে যাই। কিন্তু অনেক সময় এতো ভিড় থাকে পানি নিতে দুই-তিন ঘন্টা লেগে যায়।আরিফুর রহমান নামে এক বাসিন্দা বলেন, ওয়াসার বাড়ি বাড়ি সরবরাহ করা পানি দুর্গন্ধ ও লালচে রঙের। এ পানি দিয়ে গোসল করলেও চর্মরোগ হচ্ছে। গৃহবধূ লাকি আক্তার জানান, গত কয়েক মাস ধরে ওয়াসার পানিতে মারাত্মক দুর্গন্ধ। সেই সঙ্গে পানিও ঘোলাটে। ময়লায় ভরা। অবস্থা এমন যে পানি ফুটিয়েও পান করা যাচ্ছে না। ফিটকিরি দিয়েও পানি পান করা যাচ্ছে না।ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৫৩ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও জুরাইন এলাকার বাসিন্দা নুর হোসেন বলেন, ওয়াসার পানি খারাপ না। কিন্তু এই পানিগুলো যে পাইপ দিয়ে আসে ওই পাইপগুলো একেবারেই খারাপ। এই এলাকায় পানির সমস্যার জন্য ওয়াসার কিছু কর্মকর্তার খামখেয়ালি ও অবহেলা দায়ি। তবে পানির এই সমস্যা সমাধানে আমার এবং সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে সব ধরণের পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।
সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন
We use cookies to ensure you get the best experience on our website.