বুদ্ধিজীবী হত্যার কারণ কি সবার জানা?

ঢাকা পোষ্ট আসিফ মুনীর প্রকাশিত: ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০:৪৮

১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস নিয়ে কখনোই জ্ঞানগর্ভ আলোচনা হয় না। এ সম্পর্কে লিখিত রূপ সীমিত, পাঠ্য পুস্তক এবং অনলাইনে অনুপস্থিত। ফলশ্রুতিতে দেখা যায় বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড নিয়ে সীমিত বা অস্বচ্ছ ধারণা সামগ্রিকভাবে বিভিন্ন পর্যায়ে বিদ্যমান।


শুধু তাই নয়, শহীদ বুদ্ধিজীবীদের ভূমিকা নিয়েও বিতর্ক সৃষ্টি করা হয়/হয়েছে, বুদ্ধিজীবীদের অবদান এবং বুদ্ধিবৃত্তিক সৃষ্টি (লেখা) না দেখা, না পড়ার কারণে। অথবা কেউ কেউ উদ্দেশ্য প্রণোদিত হয়েই এই সন্দেহ ও অপবাদ উসকে দিয়েছে। এমনকি কোনো কোনো সময় গণমাধ্যম বা বিভিন্ন সভায় আমরা এমন প্রশ্নেরও সম্মুখীন হয়ে থাকি যে মুক্তিযুদ্ধের সময় শহীদ বুদ্ধিজীবীদের অবদান কী? এরকম প্রশ্ন শুনে আমি আমার বাবা শহীদ বুদ্ধিজীবী মুনীর চৌধুরীর কথা বলি যে মুক্তিযুদ্ধের সময় আমার বাবার অবদান সবচেয়ে কম। প্রশ্নকর্তা হকচকিয়ে গেলে আমি আমার উত্তরের ব্যাখ্যা দেই। আমার বাবার সম্পর্কে সেই ব্যাখ্যা এই লেখার শেষ অংশেও দিয়েছি।


আপাতত প্রামাণ্য প্রকাশনা থেকে কিছু তথ্য আজকের দিনে পাঠকদের নজরে আনা সমীচীন মনে করছি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক এবং কবি কাজী নজরুল ইসলাম গবেষক প্রয়াত অধ্যাপক ফিকুল ইসলাম তার ‘গ্রন্থ বীরের এ রক্তস্রোত, মাতার এ অশ্রুধারা’ গ্রন্থে লিখেছেন, চট্টগ্রাম ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের প্রধান প্রধান শিক্ষকবৃন্দ মুক্তিযুদ্ধের সময় দেশত্যাগ করলেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগ ছিল ব্যতিক্রম। তারা ঢাকাতেই ছিলেন এবং সেজন্য তিন শিক্ষককে প্রাণ দিতে হয়েছে। দুজন পদচ্যুত হন, দুজনের নামে হুলিয়া থাকায় আত্মগোপনে ছিলেন, একজনকে টিক্কা খান সতর্ক করে দেন এবং এই অধ্যাপককে  পাকিস্তানি বন্দিশিবিরে আটকে রাখে।


অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম আরও লিখেছেন, এই শিক্ষকেরা মুক্তিযুদ্ধের সময় একযোগে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, মরতে হয় দেশে মরবেন, কিন্তু দেশের মাটি ছাড়বেন না। বাংলা বিভাগকে পাকিস্তান ও তাদের এদেশীয় দোসরদের হাতে ছেড়ে দিয়ে কলুষিত হতে দেবেন না। হতে দেননি।


বন্দিশিবিরে আটকে থাকার অভিজ্ঞতা সম্পর্কে অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম লিখেছেন, সেখানেই তিনি বুঝে গেছিলেন আমার বাবা মুনীর চৌধুরী পাকিস্তানিদের সবচেয়ে বড় শত্রু। অন্য আরেকটি গ্রন্থে, মেজর (অবসরপ্রাপ্ত) রফিকুল ইসলামের বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে গ্রন্থে অধ্যাপক রফিকুল ইসলামকে উদ্ধৃত করে লেখা আছে, একাত্তরের আগস্টে যখন পাকিস্তানিদের সহযোগীরা এই অধ্যাপককে ধরে নিয়ে যায়, তখন বিভিন্নভাবে নির্যাতনের সময় আমার বাবা মুনীর চৌধুরীসহ আরও কয়েকজন বুদ্ধিজীবী সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয় এবং তাদের বিরুদ্ধে জবানবন্দি দেওয়ার জন্য চাপ দেওয়া হয়।


নিজের গ্রন্থে অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম লিখেছেন, মুচলেকা দিয়ে মুক্ত হওয়ার পর সহকর্মীদের সতর্ক করে দিয়েছিলেন, বুঝতে পারছিলেন শিক্ষকদের ওপর এক সময় চরম আঘাত আসতে পারে। তারপরেও আমার বাবার মতো বাকিরা ঢাকাতেই প্রকাশ্য স্থানে থেকে গিয়েছিলেন, দেশ ছেড়ে পালাবেন না এই প্রত্যয়ে।


মেজর রফিকুল ইসলাম তার গ্রন্থে অনেক উদাহরণ দিয়েছেন ঘুরে ফিরে এক দল বুদ্ধিজীবী পাকিস্তানি নিপীড়ন ও প্রোপাগান্ডার বিরুদ্ধে পুরো ২৩ বছর বারবার বিভিন্নমুখী অবস্থান নিয়েছেন—একক বা সম্মিলিতভাবে। সেজন্য কখনো তাদের হুমকি দিয়েছে, কখনো কারাগারে নিক্ষেপ করেছে, কখনো প্রোপাগান্ডা মেশিনে জোর করে স্বাক্ষর করিয়েছে, কখনো পুরস্কার ও সরকারি চাকরির লোভ দেখিয়েছে, কখনো কিছুই করতে পারেনি।


এসবের কোনো কিছুতেই ২৩ বছরে আমাদের বাবারা দমে যাননি। এরাই ভবিষ্যতে দেশের সংস্কৃতি, শিক্ষা এমনকি রাজনীতি গড়ে তুলবে, এটা বুঝতে পাকিস্তানিরা ভুল করেনি। মেজর রফিকুল ইসলাম লিখেছেন, বুদ্ধিজীবীদের উসকানিতেই আমাদের দেশ স্বাধীন হতে চলেছে বলেই পাকিস্তানিদের ধারণা হয়েছিল। বুদ্ধিজীবীদের সতীর্থ, স্বজন এবং বিভিন্ন দেশি-বিদেশি পত্রিকার উদাহরণ দিয়ে তিনি প্রমাণ রাখার চেষ্টা করেছেন যে বিশেষ করে যুদ্ধের একটি কৌশল হিসেবে পাকিস্তানি ও তাদের এদেশীয় সমর্থকদের নেতারা বুদ্ধিজীবী হত্যা বিবেচনায় রেখেছিল এবং বিভিন্ন পদক্ষেপের প্রস্তুতি নিচ্ছিল।


যাই হোক, এই দুটি গ্রন্থ ছাড়াও আরও গ্রন্থ আছে যেখানে মুক্তিযুদ্ধে বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডর অনেক তথ্য সন্নিবেশিত আছে। এসব গ্রন্থ বিভিন্ন সংগ্রহশালায় এবং পুস্তক বিক্রয় কেন্দ্রে আছে। এগুলো অনলাইন বিভিন্ন মাধ্যমে আরও প্রচারিত-প্রকাশিত হলে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের ভূমিকা স্পষ্ট হবে এবং সত্য ন্যারেটিভ সুদৃঢ় হবে।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও