ব্যক্তিগত গোপনীয়তা কি থাকছে

www.ajkerpatrika.com রাজিউল হাসান প্রকাশিত: ০৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২:১৮

ঢাকাসহ দেশের বেশির ভাগ এলাকা গত ২১ নভেম্বর ভূমিকম্পে বেশ জোরেশোরে কেঁপে উঠেছিল। তারপর এক সপ্তাহের মধ্যে সাতবার কেঁপেছে দেশ। বাস্তবজীবনের এই কম্পনের ধাক্কা লেগেছিল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোয়ও। অনেকেই নিজের বাসা-অফিসের সিসিটিভি (ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরা) ফুটেজ শেয়ার করেছেন। কে কীভাবে দৌড়েছেন, কার পোষা প্রাণী (কুকুর-বিড়াল) কেমন আচরণ করেছে, কার বাড়ির সিসিটিভি ফুটেজে বাইরের কেমন দৃশ্য ধরা পড়েছে, সেসব ছবি-ভিডিওর বন্যায় ভেসে গিয়েছিল সামাজিকমাধ্যমগুলো।


শুধু ভূমিকম্পের পরপরই নয়, আমরা ছবি-ভিডিওর নেশায় এমন মেতে উঠেছি যে কোথাও একটু ভালো কিছু দেখলে, ভালো কিছু খেলে কিংবা ভালো কিছু ঘটলে চট করে তার ছবি-ভিডিও সামাজিকমাধ্যমে দিয়ে দিচ্ছি। এটা হয়তো আমাদের সবার সঙ্গে খুশি-আনন্দ ভাগাভাগি করে নেওয়ার সহজাত প্রবণতা। কিন্তু সেই প্রবণতাই দিনে দিনে হয়তো বিপদ ডেকে আনছে।

আধুনিক এই যুগে প্রায় সবার বাসায়ই সিসিটিভি ক্যামেরা আছে, ক্যামেরাযুক্ত অন্যান্য ডিভাইস আছে। এসব যে কেবল নিরাপত্তাই নিশ্চিত করছে, তা কিন্তু নয়। ঝুঁকিও তৈরি করছে, হুমকিতে ফেলছে ব্যক্তিগত গোপনীয়তাকে। এই প্রেক্ষাপটে ১ ডিসেম্বর বিবিসিতে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনের উল্লেখ না করলেই নয়। ওই প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, দক্ষিণ কোরিয়ায় বিভিন্ন বাসাবাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের ১ লাখ ২০ হাজার ক্যামেরা হ্যাকড হয়েছে। সেসব ক্যামেরায় চোখ রেখে ছবি-ভিডিও ধারণ করছিল দুষ্ট চক্র। চক্রটি এসব ছবি-ভিডিও ব্যবহার করে বিদেশি একটি ওয়েবসাইটের জন্য যৌন নিগ্রহমূলক (সেক্সুয়াল এক্সপ্লয়টেটিভ) কনটেন্ট তৈরি করত।

তবে চক্রটি পার পায়নি। দক্ষিণ কোরিয়ার কর্তৃপক্ষ চক্রের সঙ্গে জড়িত সন্দেহে চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে। পুলিশ বলেছে, ইন্টারনেটে যুক্ত ক্যামেরাগুলোর দুর্বল পাসওয়ার্ডসহ নানা ধরনের দুর্বল নিরাপত্তাব্যবস্থার সুযোগ নিয়েছিল হ্যাকাররা।


দক্ষিণ কোরিয়ার পুলিশ আরও বলেছে, যে চারজনকে তারা গ্রেপ্তার করেছে, তাঁরা কিন্তু একে অপরের সহযোগী নন। তাঁরা কেউই কাউকে আগে থেকে চেনেন না। একেবারে নিজের মতো করে কাজ করতেন তাঁরা। তাঁদের একজন ৬৩ হাজার ক্যামেরা হ্যাক করে ৫৪৫টি আপত্তিকর ভিডিও তৈরি করেছেন। সেসব ভিডিও তিনি সাড়ে ৩ কোটি উওন (১২ হাজার ২৩৫ মার্কিন ডলার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ১৪ লাখ ৯৩ হাজার টাকার কিছু বেশি) বিক্রি করেছেন। গ্রেপ্তার আরেকজন ৭০ হাজার ক্যামেরা হ্যাক করে ৬৪৮টি ভিডিও তৈরি করেছেন। তিনি এসব ভিডিও ১ কোটি ৮০ লাখ উওনে বিক্রি করেছেন। তাঁরা দুজনে মিলে যে ওয়েবসাইটের কাছে ভিডিওগুলো বিক্রি করেছেন, সেটি আইপি ক্যামেরায় ধারণকৃত ফুটেজ প্রকাশ করে। ওই ওয়েবসাইটে গত বছর প্রকাশিত মোট ভিডিওর ৬২ শতাংশই সরবরাহ করেছেন এই দুজন।


মানুষ বাসাবাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করে মূলত নিরাপত্তা জোরদারের জন্য। এসব আইপি ক্যামেরা বাসাবাড়ির কিংবা ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের ইন্টারনেট নেটওয়ার্কে যুক্ত থাকে। কিন্তু সে ক্যামেরাই এখন নিরাপত্তা হুমকি তৈরি করছে। এ ক্ষেত্রে জর্জ অরওয়েলের নাইনটিন এইটিফোর উপন্যাসের একটি লাইন উল্লেখ না করলেই নয়—‘বিগ ব্রাদার ইজ ওয়াচিং ইউ’ (অর্থাৎ বড় ভাই আপনাকে দেখছেন)। এই উপন্যাসের বিষয়বস্তু অবশ্য কাল্পনিক স্বৈরতান্ত্রিক একটি দেশ। তবে যেভাবে সাইবার জগতে আমাদের নিরাপত্তাজনিত হুমকি বাড়ছে, তাতে এ ক্ষেত্রেও উপন্যাসের ওই কথার সঙ্গে মিলিয়ে বলাই যায়—‘সামওয়ান ইজ ওয়াচিং ইউ (কেউ আপনাকে দেখছে)। এবং সেই দেখার সুযোগটা আমরাই করে দিচ্ছি নানাভাবে।


প্রথমত, আমরা যেসব ডিভাইস কিংবা সেবা ব্যবহার করি সেগুলোর টার্মস অ্যান্ড কন্ডিশন (শর্তাবলি) না পড়েই গ্রহণ করি। আপনার-আমার মুঠোফোনে এমনও অ্যাপ্লিকেশন থাকতে পারে, যে চুপিসারে আমাদের কললিস্ট, ফোনবুকে চোখ রাখছে। কিছুদিন আগে ফেসবুক নিয়ে একটি সংবাদ হয়েছিল। তাতে বলা হয়েছিল, ব্যবহারকারীর ফোনের ক্যামেরা ও গ্যালারি দেখতে চায় ফেসবুক। প্রতিষ্ঠানটি তাও বলে-কয়ে, ঘোষণা দিয়ে আমাদের অন্দরমহলে ঢুকতে চাইছে। কিন্তু অনেক অ্যাপ আছে, যারা কিছু না বলেই আমাদের ফোনে চোখ-কান দুটোই পাতছে।


আমাদের অনেকের আরেকটি বড় সমস্যা হলো, দুর্বল পাসওয়ার্ড ব্যবহার করি। পাসওয়ার্ড মনে রাখার ঝামেলা এড়াতে এই কাজ করি আমরা। কিন্তু এতে আমরা নিজেদের বিপদ নিজেরাই ডেকে আনছি। এর সবচেয়ে বড় উদাহরণ দক্ষিণ কোরিয়ার ওই সিসিটিভি ক্যামেরা হ্যাকের ঘটনা। তা ছাড়া ব্যাংক ও মুঠোফোনে আর্থিক সেবাদাতা প্ল্যাটফর্মগুলোর অ্যাপেও হ্যাকের ঘটনা অহরহ ঘটে। আবার কেউ কেউ প্রলোভনে পড়ে কিংবা কথার মারপ্যাঁচে পড়ে অন্যকে পাসওয়ার্ড দিয়ে বিপদে পড়ি।


পাশাপাশি আমরা অনেকেই সামাজিকমাধ্যমে প্রচুর ছবি-ভিডিও প্রকাশ করি। আপাতদৃশ্যে নির্দোষ এই কাজের পরিণতি হতে পারে ভয়াবহ। প্রতিটা ছবি ও ভিডিওর ভেতরে লুকানো থাকে কিছু মেটাডেটা। সেসব মেটাডেটা বিশ্লেষণ করে দুর্বৃত্তরা সহজেই আমাদের অবস্থান, ছবি তোলার স্থান-কাল বের করে ফেলতে পারে। আমরা সবচেয়ে বড় যে ভুলটি প্রায়ই করি, তা হলো কোনো চিন্তাভাবনা না করেই শিশুদের ছবি-ভিডিও প্রকাশ করে দিই। এতে শিশুটির জন্য যে কী বিপদ আসতে পারে, তা কখনোই ভাবি না আমরা। ইন্টারনেটে আমরা যেটুকু ঘুরে বেড়াতে পারি, ইন্টারনেট তার চেয়ে অনেক বড়। আর সেই বড় জায়গাটার বিশাল অংশই হলো ডার্কওয়েব।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও