আমাদের পরে দেনা শোধবার ভার

প্রথম আলো ড. সেলিম জাহান প্রকাশিত: ২৭ নভেম্বর ২০২৫, ১৫:৪৫

বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষ গড়ে বছরে ৭ হাজার ৫০০ টাকার মতো সুদ পরিশোধ করেন। না, এই সুদ পরিশোধের সঙ্গে সম্পৃক্ত ঋণের সঙ্গে তাঁদের কোনো সরাসরি যোগাযোগ নেই। আমরা প্রত‍্যেকেই এই সুদ পরিশোধ করছি দেশে-বিদেশে সরকারের নেওয়া ঋণের জন্য। সুতরাং ওই ৭ হাজার ৫০০ টাকা সংখ‍্যাটি একটি প্রতীকী সংখ‍্যা এবং সরকারি ঋণের পরিপ্রেক্ষিতে এটা হচ্ছে আমাদের প্রত‍্যেকের দায়। আসলে বাংলাদেশের প্রত্যেক নাগরিকই গড়ে ১ লাখ টাকার ঋণভার বহন করছি। কারণ, এ বছর মার্চ নাগাদ বাংলাদেশের মোট ঋণ হচ্ছে ২০ লাখ কোটি ‍টাকা।


গত অর্থবছরে সরকার ঋণের সুদ পরিশোধের জন‍্য ১৩৫ হাজার কোটি টাকা ব‍্যয় করেছে। এই সংখ‍্যাটি সরকারি বার্ষিক বাজেট ব‍্যয়ের ২১ শতাংশ, যার মানে দাঁড়াচ্ছে, সরকারি ঋণের ওপরে সুদ পরিশোধে সরকার বাজেটের এক-পঞ্চমাংশ খেয়ে ফেলে। গত এক দশকে সরকারের ঋণের সুদ পরিশোধের ব‍্যয়ভার ৪ গুণ বেড়েছে। ২০১৫–১৬ অর্থবছরের ৩২ হাজার কোটি টাকা থেকে ২০২৪–২৫ অর্থবছরের ১৩৫ হাজার কোটি টাকায় (১৬ বিলিয়ন ডলার) পৌঁছেছে।


২০২৪-২৫ অর্থবছরে সরকারের সুদ পরিশোধ ব‍্যয়ভারের মধ্যে দেশজ ঋণের সুদ পরিশোধেরই প্রাধান‍্য ছিল। সে বছর দেশজ ঋণের সুদ পরিশোধের ব‍্যয়ভার ছিল ১১৭ হাজার কোটি টাকা (প্রায় ১৪ বিলিয়ন ডলার), ২০২৩-২৪ অর্থবছরের সংশ্লিষ্ট ব‍্যয়ের চেয়ে ১৭ শতাংশ বেশি। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বৈদেশিক ঋণের ওপরে সুদ পরিশোধের ব‍্যয়ভার ছিল ১৮ হাজার কোটি টাকা (২ বিলিয়ন ডলার), ২০২৩-২৪ অর্থবছরের ব‍্যয়ভারের চেয়ে ২৫ শতাংশ বেশি।


এ প্রসঙ্গে দুটি পর্যবেক্ষণ গুরুত্বপূর্ণ। এক. সরকারের ঋণের সুদ পরিশোধ ব‍্যয়ভারের ৮৮ শতাংশই দেশজ ঋণের ওপরে। দুই. বৈদেশিক ঋণের ওপরে সুদ পরিশোধ ব‍্যয়ভার দ্রুত হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। আসলে বাংলাদেশের বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ গত তিন বছরে দ্বিগুণ হয়ে বর্তমানে ৮ লাখ কোটিতে এসে দাঁড়িয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ের ঋণ বজায়ক্ষমতা বিশ্লেষণ নির্দেশ করে যে বাংলাদেশের বৈদেশিক ঋণ-রপ্তানির অনুপাত ১৪০ শতাংশ, যা আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের নির্দেশিত নিরাপদ পরিসীমার মধ‍্যে আছে। তবে বৈদেশিক ঋণবৃদ্ধির দ্রুতগতি চিন্তার বিষয় বটে।


উপর্যুক্ত চালচিত্রের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান সুদ পরিশোধ ব‍্যয়ভার প্রসঙ্গে তিনটি প্রশ্ন প্রাসঙ্গিক।


এক. এই বৃদ্ধি কেন ঘটল, এর সম্ভাব‍্য প্রভাব কী এবং এ ব‍্যাপারে করণীয় কী। সমস‍্যাটির কেন্দ্রবিন্দুতেই রয়েছে ক্রমবর্ধমান সরকারি ব‍্যয় এবং অত‍্যন্ত অতি ধীরগতিতে সরকারি আয়ের বৃদ্ধি। ব‍্যয়ের ক্ষেত্রে বাংলাদেশে সরকারি ব‍্যয় অত‍্যন্ত দ্রুতগতিতে বাড়ছে। যেমন বর্তমান অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে সরকারের ব‍্যয়ভার ছিল ১ লাখ কোটি টাকা, অথচ গত বছরের ওই সময়কালে সরকারি ব‍্যয়ভার ছিল ৯৫ হাজার কোটি টাকা। যদিও সরকারের উন্নয়ন ব‍্যয় ছেঁটে দেওয়া হয়েছে, তবু সরকারি পরিচালন ব‍্যয় অনেক বেড়ে গেছে।


বাজেট-পরবর্তী সময়ে নানা দাবি আর চাহিদার মুখে সরকারি ব‍্যয় বেড়ে গেছে। যেমন সমস‍্যাসংকুল পাঁচটি ইসলামি ব‍্যাংকের একীভূতকরণের পরে নতুন ব্যাংকের মূলধন হিসেবে সরকার ২০ হাজার কোটি টাকা খরচ করবে। তিনটি শিক্ষাসম্পৃক্ত মন্ত্রণালয় ও বিভাগ উন্নয়নবহির্ভূত ব‍্যয় হিসেবে ১৪ হাজার কোটি টাকা খরচ করবে এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর জন‍্য। এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বর্ধিত বাড়িভাড়ার জন‍্য সরকারের অতিরিক্ত ব‍্যয় হবে ৪ হাজার কোটি টাকা। সারের ওপরে ভর্তুকি এবং প্রণোদনার জন‍্য খরচ করা হবে ৮ হাজার কোটি টাকা। আসন্ন নির্বাচনের জন‍্য বরাদ্দ ৩ হাজার কোটি টাকা।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও