ভূমিকম্প মোকাবিলায় মানসিক শক্তিই আসল হাতিয়ার
প্রাকৃতিক দুর্যোগ ভূমিকম্পে মৃত্যু, আহত হওয়ার পাশাপাশি বেঁচে যাওয়া মানুষগুলো মানসিকভাবেও 'ট্রমা' বা আঘাত পায়।
কী সেই অদৃশ্য ট্রমা?
একটু মনোযোগ দিয়ে খেয়াল করলে আতঙ্কিত বা অদৃশ্য উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় আক্রান্ত মানুষটিকে চেনা যায়, শনাক্ত করাও যায়। প্রাথমিক আঘাতে মানুষ অনুভূতিশূন্য বা হতবাক, হতবিহ্বল, নির্বাক হয়ে যেতে পারে। সংবিৎ ফিরে পেলে অনিশ্চয়তায় ডুবে যেতে পারে। এই অবস্থাকে মনস্তত্ত্বের ভাষায় বলে, 'একিউট স্ট্রেস ডিসঅর্ডার অথবা তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া বা রিঅ্যাকশন'।
কম্পন থেমে গেলেও শারীরিক প্রতিক্রিয়া যেমন মাথাঘোরা, দুলে ওঠা বা দুলুনির অনুভূতি আতঙ্কিত করে তুলতে পারে। এ ধরনের শারীরিক ও মানসিক সমস্যাকে বলে 'পোস্ট-আর্থকোয়েক ডিজিনেস সিনড্রোম (PEDS)'।
'প্যানিক অ্যাটাক' বা অ্যাংজাইটি অ্যাটাক ঘটতে পারে। হঠাৎ সৃষ্ট ভয়, দ্রুত শ্বাস নেওয়া, শ্বাসরোধ হয়ে আসা, হার্টবিট দ্রুত থেকে দ্রুততর হওয়া--এসব উপসর্গের বহিঃপ্রকাশের মাধ্যমে তার প্রকাশ দেখা যেতে পারে। অনিয়ন্ত্রিত আতঙ্কও জেগে উঠতে পারে- 'এখনই মরে যাচ্ছি'-এমন এক ভয়ংকর আতঙ্কিত অবস্থাও ভুক্তভোগীকে আকস্মিক বিভ্রান্ত করে ফেলতে পারে। তবে সাধারণত ১০ থেকে ৩০ মিনিটের মধ্যে উপর্যুক্ত উপসর্গের জোয়ার থেমে যায়। আবারও ওই ধরনের আতঙ্কে আক্রান্ত হওয়ার ভয়ে ভীত থাকতে পারে রোগী। অর্থাৎ 'আবার প্রবল কম্পন হতে পারে'- এমন চিন্তা থেকে মানুষ নিজেকে অনিরাপদ ভাবতে পারে, গভীর অসহায়ত্ব জেগে উঠতে পারে আক্রান্ত অবস্থায়। টিভিতে বারবার সংবাদ দেখা কিংবা সোশ্যাল মিডিয়ার গুজব, অতিরঞ্জন কিংবা ভুল ব্যাখ্যা আতঙ্ক চক্রবৃদ্ধি হারে বাড়িয়ে তুলতে পারে।
অনিদ্রা বা দুঃস্বপ্নে জেগে ওঠা খুব সাধারণ উপসর্গ
প্রাথমিক অবস্থায় ট্রমা সঠিকভাবে মোকাবিলা করা না-গেলে মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা দীর্ঘ মেয়াদী যাতনার কারণ হয়ে উঠতে পারে। ২৮ দিনের মধ্যে যদি সমস্যার সমাধান না হয় তবে 'পোস্ট ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিসঅর্ডার (PTSD)' তৈরি হয়ে যেতে পারে। অনেকেই ভয় বা দুশ্চিন্তার কারণে দৈনন্দিন কাজ থেকে পিছিয়ে যেতে পারে অথবা কাজ করা থেকে বিরত থাকতে পারে। সামাজিক মিথস্ক্রিয়া কমে যেতে পারে, পারিবারিক বা কর্মজীবন তখন প্রভাবিত হতে থাকে। এই অবস্থায় মানসিক চাপ আরও বাড়ে।
ভূমিকম্পের পর যারা মানসিকভাবে ট্রমা অনুভব করছেন, তারা কী করবেন?
নিরাপদ স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা জরুরি। নিজের ও পরিবারের নিরাপত্তার দিকে নজর দিতে হবে প্রথমেই।
ভূমিকম্পের পর নিরাপদ জায়গা কোথায়? ঢাকা শহরে উঁচু উঁচু বিল্ডিংগুলো থেকে বেরিয়ে রাস্তায় গেলে কি আমরা নিরাপদ? দু’পাশের সরু রাস্তা আর উঁচু ভবন দেখতে মাথা তুলে উপরের দিকে তাকালে আতঙ্ক বেড়ে যাবে তখন, এবার তার প্রমাণ পেয়েছি। তাই ফুটপাতে না দাঁড়িয়ে খোলা কোনো স্পেস যদি পাওয়া যায়, সেখানে আশ্রয় নিতে হবে। তবে ভূমিকম্পের সময় পরিবারের সদস্যরা কে কোথায় থাকবে তার হদিস থাকে না। এবারের ভূমিকম্প আমাদের সেটা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়ে গেছে। মানুষ বাসা থেকে রাস্তায় বেরিয়েছে ঠিকই কিন্তু সবাই দাঁড়িয়েছিল ফুটপাতে। পরিবারের সদস্যরা ছিল একেক জন একেক জায়গায়।
- ট্যাগ:
- মতামত
- প্রাকৃতিক দুর্যোগ
- ট্রমাটাইজড