উপকূলে বিপর্যস্ত নারীর জীবন
ব্রাজিলের বেলেম শহরে চলছে কপ৩০ জলবায়ু সম্মেলন। জলবায়ুর প্রভাব মোকাবিলায় বাংলাদেশের সবচেয়ে জরুরি প্রয়োজন আর্থিক ক্ষতিপূরণ। পাশাপাশি দরকার বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধির জন্য দায়ী গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণের লাগাম টেনে ধরা। কিন্তু এ দুটো বিষয় নিয়ে বিশ্বনেতারা এখনো একমত হতে পারেননি।
অথচ ধনী দেশগুলোর জীবাশ্ম জ্বালানি পুড়িয়ে উন্নয়নের ফলে সৃষ্টি হয়েছে বৈশ্বিক জলবায়ু সংকট। এর প্রভাবে বাংলাদেশের মানুষ, বিশেষ করে দুর্বিষহ হয়ে উঠছে। দুর্যোগ-দুর্বিপাকে প্রাণ হারানো, মিঠাপানির কষ্ট, স্বাস্থ্য সমস্যা, পারিবারিক সহিংসতাসহ নানা রকম সংকটে কাটছে নারীদের জীবন। এর ভুক্তভোগী হচ্ছে শিশুরাও।
উপকূলীয় এলাকায় গেলে দেখা যায়, বৃষ্টি নামলে নারীদের চোখ খুশিতে চকচক করে ওঠে। তবে বৃষ্টিবিলাসের জন্য নয়। প্লাস্টিকের ট্যাংক, মাটির বড় পাত্র বা মটকা, প্লাস্টিকের নানা আকারের বোতলে বৃষ্টির পানি বা মিষ্টি পানি ভরতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন তাঁরা। এ পানিই সারা বছর পরিবারের সদস্যদের মুখে তুলে দেওয়ার প্রাথমিক দায় নারীরই।
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর থেকে ২০২১ সালে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের জন্য কালো রঙের একটি প্লাস্টিকের ট্যাংক বসেছে রুশিয়া বেগমের উঠানে। তিনি বাগেরহাটের মোংলার চাঁদপাই ইউনিয়নের কানাইনগর গ্রামের বাসিন্দা। ট্যাংকের সঙ্গে লাগানো ট্যাপ থেকে জগে পানি ভরে দেখালেন রুশিয়া বেগম। কিন্তু এই পানি এখন খাবে কে? অপচয় যাতে না হয়, তাই নিজেই মুখে ঢেলে খেলেন। হেসে বললেন, ‘মিষ্টি পানি তো নষ্ট করন যাইব না।’
রুশিয়া বেগমের ট্যাংকের পাশেই আরেকটি কালো রঙের ট্যাংক। জানালেন, ছেলের বউয়ের সঙ্গে পানি নিয়ে ঝগড়া হওয়ায় ছেলের শ্বশুর ট্যাংকটি কিনে দিয়েছেন। কিন্তু ১৪ সদস্যের বড় পরিবারের জন্য এটুকু পানি যথেষ্ট নয়। পুকুর থেকে পানি আনতে প্রায় আধ ঘণ্টা সময় লাগে। তাই তাঁকে ঘরের ভেতরে ও বাইরে বিভিন্ন পাত্রে বৃষ্টির পানি জমিয়ে রাখতে হয়।
এক বছরের বেশি সময় আগে রুশিয়া বেগমের জরায়ু কেটে ফেলতে হয়েছে। এক ছেলে বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাক থেকে ঋণ নিয়ে ৭০ হাজার টাকায় মায়ের অস্ত্রোপচার করিয়েছেন। তবে এত খরচ হওয়ায় গালমন্দও শুনতে হয় রুশিয়া বেগমকে। স্বামী রফিকুল ইসলাম জাহাজের ডকের শ্রমিক ছিলেন। দুর্ঘটনায় পা অচল হয়ে গেছে।