ফুরিয়ে যাচ্ছে কার্যকর অ্যান্টিবায়োটিক, এখন উপায় কী

প্রথম আলো ড. মুনীরউদ্দিন আহমদ প্রকাশিত: ১৬ নভেম্বর ২০২৫, ২১:১৪

গত ১৩ অক্টোবর যুক্তরাজ্যের দ্য গার্ডিয়ান পত্রিকা ‘শার্প গ্লোবাল রেইজ ইন অ্যান্টিবায়োটিক-রেজিস্ট্যান্ট ইনফেকশন ইন হসপিটালস, ডব্লিউএইচও ফাইন্ডস’ (বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এক অনুসন্ধানে দেখতে পেয়েছে, বিশ্বব্যাপী হাসপাতালগুলোতে অ্যান্টিবায়োটিক-রেজিস্ট্যান্ট সংক্রামক রোগ তীব্রভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে) শীর্ষক এক উদ্বেগজনক সংবাদ প্রচার করে। প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশ্বব্যাপী যেসব সাধারণ সংক্রামক রোগ প্রচলিত অ্যান্টিবায়োটিকে সহজে সারানো যেত, তা এখন আর সারানো যাচ্ছে না। চিকিৎসকেরা আতঙ্কের সঙ্গে বলছেন, সামনের দিনগুলোতে অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স বৃদ্ধির ফলে সাধারণ সংক্রামক রোগের চিকিৎসায় মারাত্মক সমস্যার মুখোমুখি হতে হবে।


২০২৩ সালের এক জরিপে বলা হয়, পরীক্ষাগারে নিশ্চিত হওয়া ছয়টির মধ্যে একটি সংক্রামক রোগ অ্যান্টিবায়োটিকে সারানো যাচ্ছে না। রক্ত, অন্ত্র, মূত্রনালি এবং যৌন সংক্রমণের মতো সাধারণ সংক্রামক রোগে ৪০ শতাংশ অ্যান্টিবায়োটিক অকার্যকর। সবচেয়ে উদ্বেগের কারণ হলো, গ্রাম নেগেটিভ ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে বেশির ভাগ অ্যান্টিবায়োটিক কার্যকারিতা দেখাচ্ছে না। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, ২০৫০ সাল নাগাদ অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স ৭০ শতাংশে পৌঁছাবে।


২০১৭ সালের ২০ সেপ্টেম্বর অ্যান্টিবায়োটিক সম্পর্কে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা একইভাবে উদ্বেগজনক সংবাদ প্রচার করেছিল। ‘দ্য ওয়ার্ল্ড ইজ রানিং আউট অব অ্যান্টিবায়োটিকস’ শিরোনামের খবরে বলা হয়, অতি দ্রুত পৃথিবী থেকে কার্যকর অ্যান্টিবায়োটিক নিঃশেষ হচ্ছে। ‘অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল এজেন্টস ইন ক্লিনিক্যাল ডেভেলপমেন্ট পাইপলাইন ইনক্লুডিং টিউবারকিউলোসিস’ শীর্ষক বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক রিপোর্টে বলা হয়, বাজারে নতুন অ্যান্টিবায়োটিক আসা স্থবির হয়ে গেছে।


বাজারে যেসব অ্যান্টিবায়োটিক প্রচলিত আছে, তার বেশির ভাগই এখন অকার্যকর হয়ে পড়েছে। যে হারে জীবাণুর বিরুদ্ধে অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্ট হচ্ছে, সে হারে নতুন অ্যান্টিবায়োটিক আবিষ্কৃত হচ্ছে না। যে গতিতে পৃথিবী থেকে কার্যকর অ্যান্টিবায়োটিক নিঃশেষ হচ্ছে, তাতে অচিরেই চিকিৎসকদের সংক্রামক রোগ চিকিৎসায় হাত গুটিয়ে বসে থাকতে হবে।


রেজিস্ট্যান্ট জীবাণু সংক্রমণের ভয়ে অতি ছোট সার্জারি করতেও চিকিৎসকেরা সাহস পাবেন না। বর্তমানে বাজারে যেসব অ্যান্টিবায়োটিক পাওয়া যাচ্ছে, তা পুরোনো বা প্রচলিত অ্যান্টিবায়োটিকের সংক্ষিপ্ত রাসায়নিক রূপান্তরমাত্র। এসব অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারে সাময়িক সুবিধা পাওয়া গেলেও দীর্ঘস্থায়ী সমস্যা সমাধানে কোনো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারছে না বা পারবে না।


বর্তমান বিশ্বে কয়েকটি জীবাণু ভয়ংকর রূপ নিয়েছে। এসব জীবাণুর মধ্যে রয়েছে ই. কোলাই ও মাইকোব্যাকটেরিয়াম টিউবারকিউলোসিস। মূত্রনালি সংক্রমণ ও যক্ষ্মার জন্য এই দুটো জীবাণু দায়ী। মাল্টিড্রাগ রেজিস্ট্যান্ট টিউবারকিউলোসিসের জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ১২ প্রজাতির জীবাণু শনাক্ত করেছে। এর কয়েকটি অতি সাধারণ নিউমোনিয়া ও মূত্রনালি সংক্রমণের জন্য দায়ী। এসব জীবাণুর বিরুদ্ধে ইদানীং কোনো অ্যান্টিবায়োটিক কাজ করছে না।


অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স বিশ্বব্যাপী এক মহাসংকট সৃষ্টি করেছে, যা আধুনিক ওষুধ ও চিকিৎসাব্যবস্থাকে বিপন্ন করে তুলছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক জানান, অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স ঠেকানোর জন্য নতুন নতুন কার্যকর ওষুধ আবিষ্কারে পর্যাপ্ত অর্থ বিনিয়োগ জরুরি হয়ে পড়েছে। নয়তো নতুন নতুন জীবাণু সংক্রমণ থেকে মানবসভ্যতাকে রক্ষা করা দুরূহ হয়ে পড়বে।


বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ৫১টি পরীক্ষাধীন অ্যান্টিবায়োটিক চিহ্নিত করেছে, যা অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স ও যক্ষ্মার বিরুদ্ধে কার্যকর হবে বলে দাবি করা হচ্ছে। এর মধ্যে মাত্র আটটি সংক্রামক রোগ চিকিৎসায় উল্লেখযোগ্য অবদান রাখবে বলে মনে করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। মাল্টিড্রাগ রেজিস্ট্যান্ট মাইকোব্যাকটেরিয়াম টিউবারকিউলোসিস, গ্রাম নেগেটিভ প্যাথেজেন ক্লেবসিলা ও ই. কোলাই চিকিৎসায় কার্যকর কোনো অপশন চিকিৎসকদের হাতে নেই।


এসব জীবাণু সংক্রমণ অনেক সময় হাসপাতাল ও নার্সিং হোমগুলোতে মানুষের মৃত্যু ডেকে আনতে পারে। পাইপলাইনে খুব বেশি ওরাল বা মুখে খাওয়ার অ্যান্টিবায়োটিক নেই। ওষুধ কোম্পানি ও গবেষকদের প্রাণঘাতী সংক্রামক রোগ চিকিৎসায় নতুন অ্যান্টিবায়োটিক আবিষ্কারের আহ্বান জানিয়েছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অত্যাবশ্যকীয় ওষুধ বিভাগের পরিচালক ড. সুজান হিল। তিনি বলেন, ‘এসব ভয়াবহ সংক্রামক রোগের হাত থেকে মানুষকে রক্ষা করার মতো আমাদের তেমন কোনো প্রতিরক্ষাব্যূহ নেই।’


যক্ষ্মার গবেষণায় খুব বেশি বিনিয়োগ হচ্ছে না। ড্রাগ রেজিস্ট্যান্ট যক্ষ্মার চিকিৎসায় গত ৭০ বছরে মাত্র দুটো ওষুধ বাজারে এসেছে। যক্ষ্মাকে সমূল বিনাশ করার জন্য এবং যক্ষ্মার চিকিৎসার ওষুধ উদ্ভাবনে অন্তত ৮০০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ দরকার। অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্ট মোকাবিলায় নতুন ওষুধ বা চিকিৎসা এককভাবে কার্যকর হবে না। চিকিৎসার সঙ্গে সংক্রামক রোগ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে। তারপর রয়েছে অ্যান্টিবায়োটিকের যুক্তিসংগত ব্যবহার। যুক্তিসংগত ব্যবহার শুধু মানুষের ক্ষেত্রে নয়, এটি পশু ও কৃষিক্ষেত্রেও নিশ্চিত করতে হবে।


বিশ্বখ্যাত ল্যানসেট জার্নালে ‘অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স—নিড ফর গ্লোবাল সলিউশন’ শীর্ষক একটি বিশ্লেষণধর্মী দীর্ঘ বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধ ছাপা হয় কিছুদিন আগে। বিশ্বের ২৬ জন বিজ্ঞানী, চিকিৎসক ও ওষুধবিশেষজ্ঞ প্রবন্ধে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স যে হারে বাড়ছে, তাতে হয়তো দুই থেকে তিন দশকের মধ্যে মানুষ সংক্রামক রোগে অসহায় মৃত্যুবরণ করবে।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও