রাজনীতির জট খুলবে কি
মানুষ আমাকে প্রায়ই জিজ্ঞাসা করে, নির্বাচন কি হবে? এতদিন ধরে আমি তাদের বলে এসেছি, নির্বাচন না হওয়ার কোনো কারণ তো আমি দেখি না। আমি তাদের বলতাম, ড. ইউনূস আপাদমস্তক একজন অরাজনৈতিক ব্যক্তি।
তার কোনো রাজনৈতিক অভিলাষ নেই। তার উপদেষ্টা পরিষদে একমাত্র আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া ছাড়া আর কোনো পলিটিক্যাল এলিমেন্ট নেই। এরা কেউই অতীতেও রাজনীতি করেননি, এখনো করেন না এবং ভবিষ্যতেও করবেন না। যেহেতু এরা ক্ষমতালিপ্সু নন, তাই তাদের বরং লক্ষ্য হলো, একটি ভালো এবং সবার কাছে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন দিয়ে বাংলাদেশের ইতিহাসে তাদের নামটি স্মরণীয় হয়ে থাকা।
কিন্তু জুলাই সনদ বাস্তবায়নের সর্বশেষ পরিস্থিতি দেখে আমার সে ধারণা পালটাতে শুরু করেছে। গত ৭ দিনের রাজনৈতিক দিনলিপি দেখলে অকস্মাৎ অনেক পরিবর্তনের বাঁক দেখা যায়। শুধু তাই নয়, এমন কিছু প্রশ্ন রাজনৈতিক অঙ্গনে, এমনকি আইনের অঙ্গনেও উঠছে, যেগুলো শুধু স্পর্শকাতরই নয়, রীতিমতো অনেক কিছুর নাড়ি ধরে টান দিচ্ছে। সেগুলোতে একটু পরে আসছি। প্রথমে ইলেকশনের সর্বশেষ। ১২ নভেম্বর যখন এ কলামটি লিখছি, তখন বিএনপি এবং জামায়াত মুখোমুখি অবস্থানে দাঁড়িয়েছে।
গত ১১ নভেম্বর পুরানা পল্টন মোড়ে জামায়াতে ইসলামীসহ ৮ দল বিশাল জনসমাবেশ করেছে। ওই জনসভায় জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলেছেন, আমাদের দাবি জুলাই বিপ্লবকে স্বীকৃতি দিতে হবে। যারা জুলাই বিপ্লব মানবেন না, তাদের জন্য ২৬ সালের নির্বাচন নেই। ২৬ সালের নির্বাচন দেখতে হলে, আগে জুলাই বিপ্লবের স্বীকৃতি লাগবে। আর জুলাই বিপ্লবের স্বীকৃতি দিতে হলে জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি দিতেই হবে।
এ আইনি ভিত্তি ছাড়া কোনো নির্বাচন হওয়ার সম্ভাবনা নেই। তিনি আরও বলেন, এদেশের মুক্তিকামী মানুষের কথা একটাই, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে গণভোট অনুষ্ঠিত হতে হবে। গণভোটের ব্যাপারে সব দল একমত, তাহলে তারিখ নিয়ে এ বায়নাবাজি কেন? একমত হয়ে যখন স্বাক্ষর করেছি সবাই, তখন গণভোট আগে হওয়াই যুক্তিযুক্ত। এর মধ্য দিয়ে আইনি ভিত্তির পাটাতন তৈরি হবে ইনশাআল্লাহ এবং এর ভিত্তিতেই আগামী জাতীয় সংসদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
পক্ষান্তরে, জুলাই সনদের বাইরে অন্তর্বর্তী সরকার কোনো সিদ্ধান্ত ঘোষণা করলে সনদে স্বাক্ষরকারী কোনো দলের জন্য তা মান্য করার বাধ্যবাধকতা থাকবে না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছে বিএনপি। গত মঙ্গলবার রাজধানীর গুলশানে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন।
খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, আমরা স্পষ্ট ভাষায় বলতে চাই, জুলাই জাতীয় সনদে উল্লিখিত বিষয়ের বাইরে সরকার কোনো সিদ্ধান্ত ঘোষণা করলে সনদে স্বাক্ষরকারী কোনো দলের জন্য তা মান্য করার বাধ্যবাধকতা থাকবে না। সেই ক্ষেত্রে সব দায়-দায়িত্ব সরকারের ওপরই বর্তাবে। এ ব্যাপারে সতর্ক পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য আমরা সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।
ওই একই সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির আরেক নেতা সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, আদেশের বিষয়ে আমরা সুনির্দিষ্ট কোনো প্রস্তাব দেইনি যে, আদেশ কে জারি করবে। আমরা একটা সাংবিধানিকতার মধ্যে আছি। সাংবিধানিকভাবে এ সরকার শপথ নিয়েছে, সবকিছু আইনানুগভাবে চলছে। এখন কোনো অধ্যাদেশ জারি করার ক্ষমতা এ সংবিধান অনুসারে রাষ্ট্রপতির। যদি কোনো আদেশ জারি করতে হয়, সেই আদেশের মর্যাদা যদি আইনি হয়, সেই আদেশ জারি করার মতো কোনো সাংবিধানিক অবস্থা দেশে নেই।
- ট্যাগ:
- মতামত
- রাজনৈতিক সংকট
- জুলাই সনদ