একীভূত ব্যাংক ও লুণ্ঠনের দায়মুক্তি

প্রথম আলো ফারুক মঈনউদ্দীন প্রকাশিত: ০৬ নভেম্বর ২০২৫, ১২:১৪

বাংলাদেশের গণমাধ্যমে রাজনীতির পর সবচেয়ে বেশি আলোচিত বিষয় হিসেবে উঠে আসা প্রসঙ্গ বোধকরি ব্যাংক খাত। কারণ, রাজনীতিতে সাধারণ মানুষের আগ্রহ থাকলেও ব্যাংকের সঙ্গে অনেকাংশে জড়িত তাদের জীবন, জীবিকা ও আয়-ব্যয়।


২০২৪-এর আগস্টে হাসিনা সরকার পতনের পর সংস্কার ইত্যাদির বিষয়ে মানুষের আগ্রহ ফিকে হয়ে এসেছে। তবে ব্যাংক হিসাবধারী কিছু মানুষের কাছে জীবন-মরণ সমস্যা হয়ে উঠেছে, বিশেষ কয়েকটি ব্যাংক। গণমাধ্যমের কল্যাণে সেসব ব্যাংকের অতীত কীর্তিকলাপ ও বর্তমান অবস্থা দেশের মানুষের কাছে অজানা নেই।


কয়েকটি ব্যাংকে ঘটানো অবিশ্বাস্য কিছু লুটপাটের ঘটনা সিনেমা ও গল্প-উপন্যাসের কাহিনিকেও হার মানিয়েছে। এসব অবিশ্বাস্য ঘটনা তুলে ধরে মূলধারার পত্রিকাগুলো বিভিন্ন সময়ে প্রতিবেদনও প্রকাশ করেছে। সেসব প্রতিবেদন কেবল উপেক্ষাই করেনি সরকার, নজিরবিহীনভাবে উচ্চ আদালতের সহায়তায় এ ধরনের কোনো প্রতিবেদন প্রকাশের জন্য অনুসন্ধানও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল।


সাধারণ পাঠকের স্মৃতিকে উসকে দেওয়ার জন্য এখানে উল্লেখ করা দরকার ২০২৩ সালের আগস্ট মাসে ইংরেজি দৈনিক ডেইলি স্টার ‘এস আলমের আলাদিনের প্রদীপ’ শিরোনামে এক প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এ প্রতিবেদনে তথ্যপ্রমাণসহ তুলে ধরা হয়েছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কোনো অনুমোদন ছাড়াই এস আলম গ্রুপের মালিকের সিঙ্গাপুরে ১০০ কোটি ডলার বিনিয়োগ করার খবর।


প্রতিবেদনটির ভিত্তিতে এই গ্রুপের বিরুদ্ধে বিদেশে অর্থ পাচারের অভিযোগ অনুসন্ধান করে দ্রুত প্রতিবেদন জমা দিতে নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। কিন্তু এ আদেশের বিরুদ্ধে এস আলমের করা আপিলের জবাবে হাইকোর্টের রুল খারিজ করে গ্রুপটির বিরুদ্ধে অর্থ পাচারের সব ধরনের অনুসন্ধান চালানো বন্ধ করে দিয়েছিলেন আপিল বেঞ্চ। তবে কেবল দুদক, বিএফআইইউসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ চাইলে অনুসন্ধান করতে পারবে বলে উল্লেখ ছিল রায়ে। বলাবাহুল্য, বোধগম্য কারণে সে সময় কেউই এই গ্রুপের বিষয়ে আর কোনো অনুসন্ধান চালানোর সাহস করেনি।


সরকার পতনের পর গ্রুপটির নিজ মালিকানাধীন বিভিন্ন ব্যাংক থেকে লোপাট করা এবং অবৈধভাবে বিদেশে পাচার করা অর্থ অনুসন্ধানে নামে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এবং অ্যাকাউন্ট জব্দ করাসহ বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করে। তারপর বিষয়টা আর বাংলাদেশের আদালতে সীমাবদ্ধ থাকেনি। সরকারের পদক্ষেপের কারণে তাদের পরিবারের ব্যবসায় ‘শত শত মিলিয়ন’ ডলার ক্ষতি হয়েছে উল্লেখ করে আন্তর্জাতিক সালিসি আদালতে মামলা ঠুকে দিয়েছেন গ্রুপটির চেয়ারম্যান সাইফুল আলম। এই গ্রুপ–সম্পর্কিত বিভিন্ন অবিশ্বাস্য বিষয়ের মতো এটিও এক নজিরবিহীন ঘটনা।


পাঠকের জানা আছে, বর্তমানে দেশের ব্যাংক খাতের সবচেয়ে আলোচিত প্রসঙ্গ হচ্ছে পাঁচটি ব্যাংকের একত্রীকরণ। এই ব্যাংকগুলোর মধ্যে চারটির মালিকানাই ছিল এস আলম গোষ্ঠীর হাতে, যার কর্মীসংখ্যা প্রায় সাড়ে ১৪ হাজার। এই বিশাল কর্মীবাহিনী পালন করতে চারটি ব্যাংকের বার্ষিক ব্যয় হয় প্রায় ১ হাজার ৬০০ কোটি টাকার মতো। এগুলোর পরিচালন ব্যয় নির্বাহের জন্যও দরকার হয় বিশাল অঙ্কের অর্থ। এই ব্যাংকগুলোর কোনোটি গ্রাহকদের ১০ হাজার টাকার চেকও পরিশোধ করতে পারেন না। অথচ তাদের কর্মচারীদের বিশাল অঙ্কের ব্যয় কোথা থেকে মেটানো হচ্ছে, সেটি এক বিস্ময়।ৎ


এস আলমের মালিকানাধীন চারটিসহ মোট পাঁচটি ইসলামি ধারার ব্যাংককে একীভূত করার রোডম্যাপ ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এই ব্যাংকগুলোকে সরকারি মালিকানায় নিয়ে এসে নতুন নাম দেওয়া হবে ইউনাইটেড ইসলামি ব্যাংক। পরবর্তী সময়ে এই ব্যাংককে আবার বেসরকারি মালিকানায় দিয়ে দেওয়া হবে বলেও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সেই ফিরিয়ে দেওয়ার প্রক্রিয়াটা কী হবে কিংবা কাকে বা কাদের হাতে তুলে দেওয়া হবে, সে বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।


উল্লেখ্য, পাঁচটির মধ্যে চারটি ব্যাংকের মালিক সাইফুল আলম, একটির মালিক নজরুল ইসলাম মজুমদার। সরকারীকরণ ও পাঁচ বছর পর কোনো এক সময় বেসরকারীকরণের প্রক্রিয়ায় বহু ধরনের সম্ভাব্য জটিলতার বিষয়টিও বিবেচনায় নেওয়া হয়নি এখনো। একীভূত ব্যাংকটি সরকারি মালিকানায় গেলে সেটির কর্মচারীদের বেতন–ভাতা অন্য রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের সমান করে দেওয়া হবে কি না, সেটি এখনো নিশ্চিত নয়। তবে সমান করে দেওয়াই হবে যৌক্তিক।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও