প্রযুক্তির ব্যবহার যেভাবে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবায় পরিবর্তন আনতে পারে

ঢাকা পোষ্ট ড. শাফিউন নাহিন শিমুল প্রকাশিত: ০৫ নভেম্বর ২০২৫, ১০:১০

বাংলাদেশ আজ বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা নেটওয়ার্কের দেশ। সারা দেশে প্রায় প্রতিটি ওয়ার্ডে ১৪,০০০ এর মতো  কমিউনিটি ক্লিনিক গড়ে তোলা হয়েছে। স্বাস্থ্যসেবার ‘ভৌত অবকাঠামো’ দিক বিবেচনা করলে এটা নিঃসন্দেহে ভালো সাফল্য। কিন্তু এই বিশাল আয়োজনের সুফল পাওয়া যাচ্ছে না সেবার নিম্নমান ও দক্ষ মানবসম্পদের অভাবে।


ক্লিনিকগুলোয় রোগীরা গেলে একজন স্বাস্থ্যকর্মীর সাক্ষাৎ পান যিনি অল্প সরঞ্জাম ও সীমিত প্রশিক্ষণ নিয়ে সেবা দিচ্ছেন। তার হাতে থাকে পুরোনো কাগজের রেজিস্টার, থাকে না সঠিক রোগ নির্ণয়ে প্রযুক্তির সহায়তা, না আছে ভালো তদারকি। আর এর ফলে ভুল চিকিৎসা, অপ্রয়োজনীয় রেফারেল, রোগ আরও জটিল হওয়া, আর এমন অনেক ভোগান্তি পোহাতে হয়। অথচ একটু উদ্যোগী হলে এই নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে এই বিস্তৃত নেটওয়ার্কের সুফল পাওয়া যেত।


দীর্ঘদিন ধরে গ্রামীণ স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নতিকল্পে নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। দফায় দফায় প্রশিক্ষণ দেওয়া, নতুন ভবন নির্মাণ, এমনকি ইউনিয়ন পর্যায়ে এমবিবিএস চিকিৎসক নিয়োগ ইত্যাদি উদ্যোগও নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু বাস্তবতা হলো যথেষ্ট সংখ্যক এমবিবিএস চিকিৎসককে গ্রামে ধরে রাখা সম্ভব হয়নি বা হবেও না। তারা ভালো সুযোগের খোঁজে শহরে চলে যান আর এটা ঠেকানোর আপাত কোনো পলিসি খুব একটা সামনে নেই।


এই প্রেক্ষাপটে, প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার ডিজিটাল রূপান্তর হতে পারে বাংলাদেশের জন্য একটি বাস্তবসম্মত ও টেকসই সমাধান। ডিজিটাল স্বাস্থ্যসেবা বলতে বোঝায় প্রযুক্তিনির্ভর ব্যবস্থা, যা চিকিৎসা ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনাকে সহজ, দ্রুত ও নির্ভুল করে তোলে। মোবাইল অ্যাপ, ট্যাবলেট, ক্লাউড ডেটা ও ইন্টারনেটের মাধ্যমে স্বাস্থ্যকর্মী, রোগী ও প্রশাসন সবাই একই সিস্টেমে যুক্ত থাকে। এতে রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা দেওয়া যেমন সহজ হয়, অন্যদিকে ডেটা স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংরক্ষণ হওয়ায় তদারকি ও পরিকল্পনাও উন্নত হয়।


বাংলাদেশে এ ধরনের ডিজিটাল উদ্যোগের একটি সফল উদাহরণ হলো ‘সমন্বিত শিশুস্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা’ (Integrated Management of Childhood Illness – IMCI) ডিজিটাল অ্যাপ্লিকেশন, যা ভবিষ্যতের প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার মডেল হতে পারে।


পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের মধ্যে নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া, জ্বর বা অপুষ্টিজনিত রোগ এখনো মৃত্যুর অন্যতম কারণ। এই রোগগুলো প্রতিরোধ ও চিকিৎসায় আইএমসিআই (IMCI) কৌশল বিশ্বজুড়ে কার্যকর হিসেবে পরিচিত। বাংলাদেশেও এটি বহু বছর ধরে চালু আছে, কিন্তু বিভিন্ন ঘাটতির কারণে এর পূর্ণ সুফল পাওয়া যাচ্ছিল না।


এই সীমাবদ্ধতা কাটাতেই তৈরি হয় আইএমসিআই ডিজিটাল অ্যাপ যা একটি ট্যাবলেট বা স্মার্টফোনভিত্তিক সফটওয়্যার যা ধাপে ধাপে স্বাস্থ্যকর্মীকে শিশুর রোগ নির্ণয়ে সহায়তা করে। শিশুর বয়স, ওজন, উপসর্গ বা তাপমাত্রা ইনপুট দিলে অ্যাপটি বলে দেয় কীভাবে পরীক্ষা করতে হবে, কোন ওষুধ দিতে হবে এবং কখন শিশুকে রেফার করতে হবে।


গুরুতর লক্ষণ দেখা দিলে সঙ্গে সঙ্গে রেফারেল বার্তা দেয় এবং সব তথ্য স্বয়ংক্রিয়ভাবে আপলোড হয় জাতীয় স্বাস্থ্য তথ্য ব্যবস্থায় (DHIS2)। মজার বিষয় হলো, এটি ইন্টারনেট না থাকলেও ব্যবহার করা যায় তবে ইন্টারনেটের আওতায় আসলে ডাটা আপলোড করা যায়। বর্তমানে সিএইচসিপিদের সরকার থেকে ল্যাপটপ দেওয়া আছে এবং প্রত্যেকে মাসে ১৫ গিগাবাইটের মতো ডাটা ব্যবহার করতে পারেন সরকারি খরচে। তাই তেমন কোনো নতুন আয়োজনেরও দরকার নেই। এর জন্য মূলত প্রশিক্ষণই দরকার।


সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা যায়, এই অ্যাপটির ভালো কার্যকারিতা রয়েছে। বরিশাল জেলায় পাইলট প্রকল্পের ফলাফল ছিল আশাব্যঞ্জক। যেমন, এর ফলে—


১) অপ্রয়োজনীয় হাসপাতাল ভর্তি ও পুনঃভর্তি কমেছে, ফলে শিশুরা ঘরের কাছেই সেবা পাচ্ছে,


২) চিকিৎসার মান বেড়েছে, কারণ স্বাস্থ্যকর্মীরা এখন সঠিক গাইডলাইন অনুসরণ করছেন,


এবং ৩) পরিবারের খরচ ও চিকিৎসার পেছনে সময় ব্যয় কমেছে।


বাংলাদেশের বাস্তবতায় প্রতিটি গ্রামে এমবিবিএস ডাক্তার পাঠানো সম্ভব নয় এবং পাঠালেও তাদের দীর্ঘদিন ধরে রাখা প্রায় অসম্ভব। কিন্তু প্রযুক্তি এই সীমাবদ্ধতাকে সুযোগে পরিণত করতে পারে।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও