অকস্মাৎ কোন চাপে পড়ল সরকার
গত শুক্রবার যুগান্তরের এ কলামে আমি কথা দিয়েছিলাম, ২৫ দল স্বাক্ষরিত জুলাই সনদে কীভাবে শেখ মুজিবকে স্বাধীনতার ঘোষণাকারী হিসাবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে, সেই বিষয়টি চোখে আঙুল দিয়ে আমি দেখাব। বিএনপি সব সময় দাবি করে এসেছে, শেখ মুজিব কোনোদিন স্বাধীনতার ঘোষণা দেননি।
স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছেন শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্র থেকে তৎকালীন মেজর জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। পরদিন অর্থাৎ ১৯৭১ সালের ২৭ মার্চ তৎকালীন মেজর জিয়া ওই ঘোষণার পুনরাবৃত্তি করেন। ২৫ মার্চের মাত্র একদিন পর যেহেতু মুক্তিবাহিনী গঠিত হয়নি, তাই আমি বিভিন্ন সেক্টর কমান্ডারদের কথা উল্লেখ করলাম না। উল্লেখ করা প্রয়োজন, মুক্তিযুদ্ধে শহীদ জিয়াউর রহমান জেড ফোর্সের অধিনায়ক ছিলেন। সেটি পরে গঠিত হয়েছে বলে স্বাধীনতার ঘোষক হিসাবে আমি শহীদ জিয়ার নামের আগে ‘জেড ফোর্সের অধিনাক’ শব্দগুলো প্রয়োগ করা থেকে বিরত রইলাম।
জুলাই সনদে কীভাবে শেখ মুজিবকে স্বাধীনতার ঘোষক হিসাবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে, সেটি এখন আলোচনা করছি। তবে এ আলোচনাটি ব্যাপক পরিসরে করা সম্ভব হবে না। কারণ গত শুক্রবারের পর থেকে এ শুক্রবার পর্যন্ত অনেক সিরিয়াস ঘটনা ঘটে গেছে। যেমন বুধবার দুপুরে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এমন মন্তব্য করেছেন, যেটি শুনলে বা পড়লে শুধু উদ্বিগ্ন নয়, রীতিমতো আতঙ্কিত না হয়ে পারা যায় না। যাই হোক, এখন স্বাধীনতার ঘোষণা প্রসঙ্গ।
জুলাই সনদ শুরু হয়েছে, ‘সংবিধান সংশোধনসাপেক্ষে সংস্কারের বিষয়সমূহ’, এ শিরোনাম দিয়ে। সনদের ৪ পৃষ্ঠায় ৫ নম্বর অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘ক্রান্তিকালীন ও অস্থায়ী বিধানাবলি : সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১৫০(২) সংশোধন করা হবে এবং এ সংশ্লিষ্ট ৫ম এবং ৬ষ্ঠ তফসিল সংবিধানে রাখা হবে না।’ এ প্রস্তাবে ২২টি রাজনৈতিক দল ও জোট একমত হয়েছেন। ৮টি রাজনৈতিক দল একমত নয়। এ ৮টি রাজনৈতিক দল হলো-জাকের পার্টি, জাতীয় গণফ্রন্ট, বাংলাদেশ জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদ, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল বাসদ (মার্ক্সবাদী), বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল বাসদ, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক পার্টি (বিএসপি), বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি ও ভাসানী জনশক্তি পার্টি।
উল্লেখিত ক্রান্তিকালীন বিধানে অর্থাৎ সংবিধানের ১৫০ অনুচ্ছেদের ২ উপ-অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ তারিখ হইতে ১৯৭২ সালের ১৬ই ডিসেম্বর তারিখে এই সংবিধান প্রবর্তন হইবার অব্যবহিত পূর্ব পর্যন্ত সময়কালের মধ্যে সংবিধানের পঞ্চম তফসিলে বর্ণিত ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ তারিখে ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে দেওয়া জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ভাষণ, ষষ্ঠ তফসিলে বর্ণিত ১৯৭১ সালের ২৬ শে মার্চ তারিখে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণার টেলিগ্রাম এবং সপ্তম তফসিলে বর্ণিত ১৯৭১ সালের ১০ই এপ্রিল তারিখে মুজিবনগর সরকারের জারিকৃত স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র হইল বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মুক্তি সংগ্রামের ঐতিহাসিক ভাষণ ও দলিল, যাহা উক্ত সময়কালের জন্য ক্রান্তিকালীন ও অস্থায়ী বিধানাবলী বলিয়া গণ্য হইবে।’ (বাংলাদেশের সংবিধান, পৃষ্ঠা-৫৯)।
২.
আগেই বলেছি, সনদের প্রস্তাব ছিল সংবিধানের ১৫০ (২) অনুচ্ছেদ সংশোধন করা হবে এবং এ সংশ্লিষ্ট ৫ম ও ৬ষ্ঠ তফসিল সংবিধানে রাখা হবে না। দেখা যাচ্ছে, ৫ম তফসিলে রয়েছে শেখ মুজিবের ৭ মার্চের ভাষণ। ৬ষ্ঠ তফসিলে রয়েছে শেখ মুজিবের স্বাধীনতা ঘোষণাসংক্রান্ত টেলিগ্রাম এবং ৭ম তফসিলে রয়েছে ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল পঠিত বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র।
এখন দেখা যাক, ৫ম, ৬ষ্ঠ ও ৭ম তফসিলে কী লেখা আছে। আগেই বলেছি, ৫ম তফসিলে ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে শেখ মুজিবের ভাষণ।
- ট্যাগ:
- মতামত
- স্বাধীনতার ঘোষণা
- জুলাই সনদ