অসহিষ্ণুতা ও সন্ত্রাসের লাগাম টানতে হবে

যুগান্তর ড. মাহফুজ পারভেজ প্রকাশিত: ২৬ অক্টোবর ২০২৫, ১১:৪৮

গেল সপ্তাহে আলোচিত এক খবরের রেশ শুধু এ সপ্তাহেই নয়, নির্বাচন যতই এগিয়ে আসবে, ততই বাড়বে। বাংলাদেশের উত্তপ্ত রাজনীতি ও নির্বাচনি আবহে এমন খবরের গুরুত্ব থাকে সবচেয়ে বেশি। ফলে দেশ যতই নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাবে, এসব খবরও তত গুরুত্ব পেতে থাকবে। খবরটি হলো-বাংলাদেশে রাজনৈতিক সহিংসতা, সংঘাত ও বিরোধী মত দমনের কারণে ২০২৪ সালে ১ লাখ ৫৯ হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। তাদের মধ্য ২ হাজার ৮০০ জন অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত হয়েছে বলে নিশ্চিত তথ্য পাওয়া গেছে। বাকিরা দেশে নাকি দেশের বাইরে চলে গেছে, সে বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। ইন্টারন্যাশনাল ডিসপ্লেসমেন্ট মনিটরিং সেন্টার (আইডিএমসি) ও জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) এ তথ্য জানিয়েছে।


বাংলাদেশে নিত্যদিনের রাজনৈতিক সহিংসতা, সংঘাত ও বিরোধী মত দমনের পাশাপাশি নির্বাচনপূর্ব ও উত্তরকালে সংঘাত, উত্তেজনা ও সংঘর্ষের প্রকোপ বৃদ্ধি পায় ব্যাপক হারে। অতীতে এমন কোনো নির্বাচন সম্পন্ন হয়নি রক্তপাত ও প্রাণহানি ছাড়া। সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের সঙ্গে শুধু সুষ্ঠু ভোট প্রদান নয়, ভোটারদের সামগ্রিক নিরাপত্তা, সমাজ ও রাষ্ট্রের সার্বিক শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখার বিষয়গুলোও জড়িত। কিন্তু বাস্তবতা হলো, নির্বাচনি সন্ত্রাস, সংঘাত নিরসনকল্পে প্রশাসন ও রাজনৈতিক দলগুলোর ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা ও ঐকমত্য বলতে বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে কিছুই অবশিষ্ট নেই। বরং যে দল যেখানে শক্তিশালী, সেখানে তাদের তরফে বলপ্রয়োগ ও শক্তি প্রদর্শন করা একটি রাজনৈতিক অভ্যাসে পরিণত হয়েছে।


অতএব, সামনের অতি আলোচিত নির্বাচনকে সফল ও অবিতর্কিত করতে হলে সংঘাত, অসহিষ্ণুতা ও সন্ত্রাসের লাগাম টানতে হবে। তা করা হলে নির্বাচনসহ গণতান্ত্রিক উত্তরণের সব ধরনের আয়োজনই ভন্ডুল হয়ে যেতে পারে। বিদ্যমান পরিস্থিতি দেখে এমন আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। নির্বাচন, এমনকি তফসিল বা প্রার্থী ঘোষণার আগেই দেশের বিভিন্ন স্থানে দলের ভেতরে কিংবা অন্য দলের সঙ্গে প্রাধান্য বিস্তারের লড়াইয়ে রক্তপাত ও প্রাণহানির ঘটনা ঘটছে। এখনই থামানো না গেলে নির্বাচনের আগে এসব দ্বন্দ্ব, সংঘাত, উত্তেজনা বৃদ্ধি পেয়ে দাবানল সৃষ্টি করতে পারে।


বলার অপেক্ষা রাখে না, বাংলাদেশে যুক্তির চেয়ে উগ্রতা অনেক ক্ষেত্রেই প্রাধান্য পায়। রাজনৈতিক অঙ্গনে কোনো কোনো ক্ষেত্রে যুক্তির উপস্থিতি অতি নগণ্য। এর পরিবর্তে সেখানে রয়েছে উগ্রতার প্রাবল্য। বিশেষত প্রতিটি রাজনৈতিক দলেই রয়েছে কিছু অন্ধ ও একরোখা অনুসারী, যারা অল্পতেই সহিষ্ণুতা হারান। যুক্তিপূর্ণ বিতর্কের বদলে বলপ্রয়োগ ও আক্রমণের পন্থা বেছে নেন। সামান্য তর্ক, মামুলি ভিন্নমত, কিঞ্চিৎ বিরোধিতার পরিসরও তারা দিতে অনিচ্ছুক। পক্ষে না থাকলেই তারা সন্ত্রাসের ভাষায় পেশিশক্তি ব্যবহার করেন। প্রতিটি দলের মধ্যে এ উগ্র, অসহিষ্ণু ও উন্মত্ত গোষ্ঠীর উপস্থিতি কমবেশি রয়েছে। রাজনৈতিক উত্তেজনা ও নির্বাচনি প্রতিযোগিতার তুঙ্গ পরিস্থিতিতে এরাই যুক্তিনিষ্ঠ ও শান্তিপূর্ণ পরিস্থিতি বিগড়ে সন্ত্রাস ও রক্তপাত ছড়িয়ে দেয়। পরিশেষে রাষ্ট্র, সমাজ, রাজনীতিতে অসহিষ্ণুতার মহামারি তৈরি করে গণতন্ত্রের ক্ষতি করে।


যদিও পরিমাপের কোনো যন্ত্র বা মানদণ্ড নেই, তবু এ কথা বিলক্ষণ বলা যায়-সর্ব সাম্প্রতিক বাংলাদেশের নানা ক্ষেত্রে, পর্যায়ে ও ইস্যুতে অসহিষ্ণুতার পারদ তরতর করে বাড়ছে। ফলে দেখা যাচ্ছে অস্থিরতা, উত্তেজনা, হামলা, পালটা হামলা। সুস্থিরভাবে কোনো কিছু করার মতো স্বাভাবিক আচরণও অনেক ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে না। এ যেন এক চরম মনস্তাত্ত্বিক ও চারিত্রিক বিপর্যয়। ফলে অসহিষ্ণুতার কুপ্রভাব সমাজ ও রাজনীতিকে বারবার দোলা দিচ্ছে। কোথাও শুরু হচ্ছে মব জাস্টিস বা গণধোলাই বা গণপিটুনি। কোথাও চলছে উত্তেজিত বাগ্বিতণ্ডা। কোথাও হানাহানি ও বিদ্বেষ। পারস্পরিক সন্দেহ, অবিশ্বাসের মতো বিপদ অসহিষ্ণুতার হাত ধরাধরি করে চলে আসছে সমাজ ও মানুষের মধ্যে। ব্যক্তিগত সৌহার্দ, সামাজিক ঐক্য ও রাজনৈতিক সম্প্রীতিতে দেখা দিয়েছে ভাঙন, বিভেদ, ফাটল। যদি এমনটি চলতেই থাকে, তাহলে সামনে দিনগুলোকে ঘিরে অনিশ্চয়তার কালো মেঘ তৈরি হওয়াও অস্বাভাবিক নয়।


একটু তলিয়ে দেখলে দেখা যায়, বাংলা শব্দ ‘অসহিষ্ণুতা’ এসেছে সহিষ্ণুতা (tolerance বা সহনশীলতা) শব্দ থেকে। যখন কারও মধ্যে সহিষ্ণুতা থাকে না, তখন সেটিকে বলা হয় অসহিষ্ণুতা। সহিষ্ণুতা হলো অন্যের ভিন্নমত, ধর্ম, জাতি বা আচরণকে মেনে নেওয়ার ক্ষমতা। আর অসহিষ্ণুতা (intolerance) হলো মেনে নেওয়ার ক্ষমতার অভাব, অর্থাৎ অস্বীকার করা বা বিরূপ হওয়া। কিন্তু একটি বহুত্ববাদী সমাজে শত মত ও শত পথ থাকবেই। সবাই নিজ নিজ মত, পথ, চিন্তা নিয়ে চলবে-এটাই বাস্তবতা। সমাজের সবাই এক ও অভিন্ন মতের হতে পারে একমাত্র রোবটের সমাজে। চিন্তাশীল, সৃজনশীল মানুষের সমাজ বহুত্ববাদী রংধনু সমাজ। এটাই বৈচিত্র্যের বিউটি। এ বাস্তবতাকে মেনে নিয়ে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান করাই হলো সুসভ্য সমাজের গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি।


যখন কোনো দল বা ব্যক্তি সুসভ্য সমাজের গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি থেকে বের হয়ে আসে, তখনই নানারূপ অসভ্যতা ও অসহিষ্ণুতা বৃদ্ধি পেতে থাকে। দেখা দিতে থাকে নানারূপ বিকৃতি ও অনাচার। তখনই মানুষ ও সমাজে বৃদ্ধি পায় বিপদ ও উদ্বেগ। মানুষের স্বাভাবিক, শান্তিপূর্ণ জীবনধারা বিঘ্নিত হয়। আতঙ্ক এসে ভর করে মানুষের মনে এবং সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে। রাজনীতির সব কার্যক্রমেও দেখা যায় সংঘাত, সন্ত্রাস, রক্তপাত ও প্রাণহানির মতো উদ্বেগজনক ঘটনা।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও