
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে সাধারণ রোগীদের পাশাপাশি হাতকড়া পরা আসামিদের চিকিৎসা দেওয়া হয়। আসামিদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরাও থাকেন। ফলে হাসপাতালের ওয়ার্ডগুলোতে সাধারণ রোগীরা একধরনের অস্বস্তিকর পরিস্থিতির মুখে পড়ছেন। অথচ হাসপাতালে বন্দীদের জন্য আলাদা প্রিজন সেল আছে। কিন্তু পাঁচ বছর ধরে সেটি খালি পড়ে আছে। বিষয়টি দুঃখজনক।
প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, চট্টগ্রামের ১১টি কারাগার এবং থানা থেকে আসা অসুস্থ বন্দীদের উন্নত চিকিৎসার জন্য চমেকই ভরসা। যে কারণে চমেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ২০১৯ সালে দ্বিতীয় তলায় নারী ও পুরুষ বন্দীদের জন্য ১৫টি করে মোট ৩০ শয্যার একটি কক্ষ বরাদ্দ দেয়। কিন্তু সরেজমিন দেখা যায়, সে সেলটি অযত্নে পড়ে আছে; ব্যবহারের উপযোগী করার কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।
হাসপাতালের সাধারণ রোগীদের পাশেই কোনো শয্যায় দেখা যায়, হাতকড়া পরা আসামি চিকিৎসা নিচ্ছেন। আর সেই আসামিকে ঘিরে রাত–দিন পাহারায় থাকছেন চারজন কারারক্ষী ও পুলিশ। এই পরিস্থিতির কারণে সাধারণ রোগী ও তাঁদের স্বজনদের অস্বস্তি, নিরাপত্তাঝুঁকি এবং বিব্রতকর পরিবেশ মেনে নিতে হচ্ছে। পুলিশ ও কারারক্ষীর কড়া পাহারার কারণে ওয়ার্ডে চলাফেরা, ঘুমানো কিংবা দৈনন্দিন কাজ করতে সারাক্ষণ বিব্রতবোধ করছেন। হাসপাতাল হলো নিরাময়ের জায়গা, কিন্তু সেখানে বন্দীর উপস্থিতি ও সার্বক্ষণিক কড়া নজরদারি একটি ভীতিকর পরিবেশ তৈরি করছে।
অন্যদিকে প্রিজন সেল চালু না হওয়ায় নিরাপত্তার ঝুঁকিও বাড়ছে। যেমন গত এপ্রিল মাসে অস্ত্র মামলার আসামি হাতকড়াসহ হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। প্রিজন সেল চালু না হওয়ায় পুলিশ ও কারা প্রশাসনের স্বাভাবিক কার্যক্রমেও মারাত্মকভাবে ব্যাঘাত ঘটছে। একজন বন্দীর পাহারায় দৈনিক ছয়জন কারারক্ষী ও চারজন পুলিশ অর্থাৎ মোট ১০ জন জনবল মোতায়েন রাখতে হয়। নগর পুলিশ কর্তৃপক্ষ জানাচ্ছে, প্রিজন সেলটি চালু থাকলে হাসপাতালের নিরাপত্তার জন্য দৈনিক ১৫০ থেকে ২০০ পুলিশের জায়গায় মাত্র ১০ থেকে ১২ জন পুলিশ সদস্যের প্রয়োজন হতো। অতিরিক্ত পুলিশ সদস্য হাসপাতালে মোতায়েন করায় নগরে আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখতে চাপ তৈরি হচ্ছে।
- ট্যাগ:
- মতামত
- প্রিজন সেল