মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ অত্যন্ত জরুরি

যুগান্তর ড. আনোয়ারউল্লাহ চৌধুরী প্রকাশিত: ০৭ অক্টোবর ২০২৫, ১২:৫২

তিন বছরেরও বেশি সময় ধরে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ অর্থনীতিতে উচ্চ মূল্যস্ফীতি বিরাজ করছে। কোনোভাবেই এ মূল্যস্ফীতি সহনীয় পর্যায়ে নামিয়ে আনা যাচ্ছে না। করোনা-উত্তর বিশ্ব অর্থনীতি যখন উত্তরণের পর্যায়ে ছিল, ঠিক তখনই শুরু হয় রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। এ অনাকাঙ্ক্ষিত যুদ্ধের কারণে বিশ্বব্যাপী সাপ্লাই চেইন বিপর্যস্ত হয়। বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশেই উচ্চ মূল্যস্ফীতি প্রবণতা দেখা দেয়। ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়ার বিরুদ্ধে নজিরবিহীন অর্থনৈতিক ও সামরিক অবরোধ আরোপ করে। এর পালটা ব্যবস্থা হিসাবে রাশিয়া বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেল রপ্তানি বন্ধ করে দেয় অথবা কমিয়ে দেয়। ফলে পণ্য পরিবহণ ব্যয় অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যায়। প্রতিটি দেশই উচ্চ মূল্যস্ফীতির অভিঘাতে জর্জরিত হয়ে পড়ে। এমনকি বিশ্বের এক নম্বর অর্থনৈতিক ও সামরিক শক্তি যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বাজারে মূল্যস্ফীতির হার আগের ৪০ বছরের রেকর্ড অতিক্রম করে ৯ দশমিক ১ শতাংশে উন্নীত হয়। ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব আমেরিকা (ফেড) ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগ মন্থরতার ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও পলিসি রেট (কেন্দ্রীয় ব্যাংক স্বল্পকালীন চাহিদা মেটানোর জন্য শিডিউল ব্যাংকগুলোকে যে ঋণ প্রদান করে, তার ওপর আরোপিত সুদ হার) ব্যাপকভাবে বাড়িয়ে দেয়। পলিসি রেট বৃদ্ধির ফলে ব্যাংক ঋণের সুদের হার (ব্যাংক উদ্যোক্তা ও গ্রাহক পর্যায়ে ঋণদানের সময় যে সুদ আরোপ করে) আনুপাতিক হারে বেড়ে যায়। ফলে গ্রাহকদের মাঝে ব্যাংক থেকে ঋণ গ্রহণের আগ্রহ ও সামর্থ্য হ্রাস পায়। এতে বাজারে অর্থের জোগান কমে যায়। এছাড়া আরও কিছু প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। এতে মূল্যস্ফীতি ধীরে ধীরে নিয়ন্ত্রণে চলে আসে।


ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব আমেরিকার দৃষ্টান্ত অনুসরণ করে বাংলাদেশসহ বিশ্বের অন্তত ৭৭টি দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক পলিসি রেট বাড়িয়ে দেয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের পলিসি রেট আগে ছিল ৫ শতাংশ। পর্যায়ক্রমে বাড়তে বাড়তে এখন তা ১০ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। পলিসি রেট বৃদ্ধির পাশাপাশি আরও কিছু ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে অধিকাংশ দেশই তাদের অভ্যন্তরীণ অর্থনীতিতে বিরাজমান উচ্চ মূল্যস্ফীতি কমিয়ে সহনীয় পর্যায়ে নামিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে। যেমন, যুক্তরাষ্ট্রের মূল্যস্ফীতির হার গত আগস্টে ছিল ২ দশমিক ৭০ শতাংশ। এখন যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক পলিসি রেট ২৫ ভিত্তি পয়েন্ট কমিয়ে ৪ শতাংশ থেকে ৪ দশমিক ২৫ শতাংশে নির্ধারণের উদ্যোগ নিয়েছে। ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব আমেরিকার চেয়ারম্যান জেরোম পাওয়েল এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন, চলতি অক্টোবর এবং আগামী ডিসেম্বরে তারা পলিসি রেট আরও কমানোর উদ্যোগ নেবেন। বছর শেষে যুক্তরাষ্ট্রের মূল্যস্ফীতির হার ২ শতাংশে নামিয়ে আনার পরিকল্পনা রয়েছে। দেশটির অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার কিছুটা বাড়িয়ে ১ দশমিক ৬ শতাংশ এবং বেকারত্বের হার ৪ দশমিক ৫ শতাংশে স্থির রাখা হবে। যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ অর্থনীতিতে উচ্চ মূল্যস্ফীতির হার ৯ দশমিক ১ শতাংশ থেকে ২ দশমিক ৭০ শতাংশে নেমে আসার পেছনে পলিসি রেট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।


শুধু যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষেত্রেই নয়, পলিসি রেট বৃদ্ধির প্রভাবে অন্যান্য দেশের অর্থনীতিতেও মূল্যস্ফীতি সহনীয় পর্যায়ে নেমে এসেছে। এক্ষেত্রে অর্থনৈতিক সমস্যাগ্রস্ত দ্বীপরাষ্ট্র শ্রীলংকার দৃষ্টান্ত উল্লেখ করা যেতে পারে। কয়েক বছর আগে শ্রীলংকা অর্থনৈতিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। দেশটি আন্তর্জাতিকভাবে ঋণখেলাপি দেশে পরিণত হয়। শ্রীলংকার তৎকালীন প্রেসিডেন্ট বিভিন্ন মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নের নামে বিভিন্ন দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থা থেকে ঢালাওভাবে ঋণ গ্রহণ করেন। একপর্যায়ে দেশটি গৃহীত ঋণের কিস্তি পরিশোধে অপারগ হয়ে পড়ে। শ্রীলংকার ভঙ্গুর অর্থনৈতিক অবস্থা এবং ক্ষমতাসীনদের ব্যাপক লুটপাটের কারণে দেশব্যাপী ব্যাপক বিক্ষোভ শুরু হলে একপর্যায়ে দেশটির প্রেসিডেন্ট পদত্যাগ করে পালিয়ে যেতে বাধ্য হন। পরবর্তীকালে নতুন প্রেসিডেন্ট দায়িত্ব গ্রহণের পর অর্থনৈতিক অবস্থা পুনরুদ্ধারে সচেষ্ট হন। অল্প কিছুদিনের মধ্যেই দেশটি সাফল্যের মুখ দেখতে শুরু করে। একপর্যায়ে শ্রীলংকার মূল্যস্ফীতি ৭৫ শতাংশে উন্নীত হয়েছিল। এখন তা ১ দশমিক ৫ শতাংশে নেমে এসেছে। শ্রীলংকা এ বছর ৭ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি প্রত্যাশা করছে।


দক্ষিণ এশিয়ার অধিকাংশ দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক পলিসি রেট বৃদ্ধির পাশাপাশি অন্য কিছু ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে উচ্চ মূল্যস্ফীতি সহনীয় পর্যায়ে নামিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে। চীনের মূল্যস্ফীতির হার গত আগস্টে ছিল শূন্য দশমিক ৪১ শতাংশ। আগস্টে অন্যান্য দেশের মধ্যে হংকংয়ের ১ দশমিক ১ শতাংশ, ভারতের ২ দশমিক ০৭ শতাংশ, জাপানের ২ দশমিক ৭ শতাংশ, ইন্দোনেশিয়ার ২ দশমিক ৩ শতাংশ, ভুটানের ৩ দশমিক ৬৪ শতাংশ, মালদ্বীপের ৪ শতাংশ, ভিয়েতনামের ৩ দশমিক ২৪ শতাংশ, নেপালের ১ দশমিক ৬৮ শতাংশ, দক্ষিণ কোরিয়ার ১ দশমিক ৭ শতাংশ এবং ফিলিপাইনের মূল্যস্ফীতির হার ছিল ১ দশমিক ৫ শতাংশ। কিন্তু বাংলাদেশে গত আগস্টে সার্বিক মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৮ দশমিক ৫৫ শতাংশ। এর অর্থ হচ্ছে, দক্ষিণ এশিয়ার প্রায় সব দেশই তাদের অর্থনীতিতে সৃষ্ট উচ্চ মূল্যস্ফীতি কমিয়ে সহনীয় পর্যায়ে নিয়ে আসতে সক্ষম হলেও আমরা এক্ষেত্রে ব্যর্থ হয়েছি। আমরা উচ্চ মূল্যস্ফীতি কমাতে পারছি না।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও