
জামায়াত এগিয়ে, বিএনপি কেন পিছিয়ে
আনুপাতিক হারে ভোটের (পিআর) দাবি সামনে এনে জামায়াতে ইসলামী মাঠে আন্দোলনে নেমে বিএনপি নেতাদের ব্যস্ত রাখলেও নিজেরা বর্তমান পদ্ধতিতেই নির্বাচনী প্রস্তুতিতে এগিয়ে আছে। দেশের নির্বাচনী আসনের প্রায় সব কটিতে তারা সম্ভাব্য প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছে। তাদের পোস্টারও টানানো হচ্ছে কোথাও কোথাও। স্থানীয় নেতা–কর্মীরা সেটি সানন্দে মেনে নিয়েছেন এবং সম্ভাব্য প্রার্থীর পক্ষে জোর প্রচারও চালাচ্ছেন।
প্রার্থী বাছাইয়ের বিষয়েও তাঁরা আগের মতো—যিনি যত প্রবীণ, তিনি বড় হকদার; এই নীতির ব্যতিক্রম ঘটিয়ে দলটি বেশ কিছু আসনে তরুণ নেতাদের বেছে নিয়েছে। এ কারণে প্রবীণ কয়েকজন নেতা বাদ পড়লেও কোনো প্রতিবাদ বা আপত্তি ওঠেনি। এটাই হচ্ছে দলটির সাংগঠনিক শৃঙ্খলা। একসময় বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টিতেও এই শৃঙ্খলা বজায় ছিল। এখন সেখানেও গ্রুপিং, ভাগাভাগি।
অন্যদিকে দেশের বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবতায় অপ্রতিদ্বন্দ্বী দল হিসেবে পরিচিত বিএনপি প্রার্থী মনোনয়ন করার আগে দলীয় সংঘাত মেটাতেই হিমশিম খাচ্ছে। কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব থেকে বলা হলো, এ পর্যন্ত সাত হাজার নেতা–কর্মীর বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কতটি সংঘাতের ঘটনায় কতজনের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, সেই হিসাব দিয়ে বিএনপি নেতৃত্ব আত্মতৃপ্তি পেতে পারেন; কিন্তু মানুষ দেখতে চায় দলের নেতা–কর্মীদের সংঘাত বন্ধ হচ্ছে কি না। শৃঙ্খলা আনা যাচ্ছে কি না।
মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্রের তথ্যমতে, গত বছরের আগস্ট থেকে এ বছরের মার্চ মাস পর্যন্ত আট মাসে ৭৬ জন নিহত হয়েছেন, যার মধ্যে কেবল বিএনপির অভ্যন্তরীণ সহিংসতায় মারা গেছেন ৫৮ জন। মার্চ থেকে সেপ্টেম্বর হিসাব করলে এই সংখ্যা শতকের ঘর ছাড়িয়ে যাবে।
এ ক্ষেত্রে বিএনপির নেতারা যেসব দোহাই দেন, সেটি ক্ষমতায় থাকতে আওয়ামী লীগের নেতারাও দিতেন। তঁাদের বড় দল, বিশাল কর্মী বাহিনী। দু–চারটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটতেই পারে; কিন্তু ভুক্তভোগী পরিবারগুলোর কী হবে? তারা কার কাছে প্রতিকার চাইবে? এখানে বলার সুযোগ নেই যে অনুপ্রবেশকারীরা এসে এ ঘটনা ঘটিয়েছে।
এখানে তিনটি উদাহরণ দিই। প্রথম আলোর খবর অনুযায়ী, ২৯ সেপ্টেম্বর নরসিংদী সদরের চরাঞ্চলে আবারও বিএনপির দুই পক্ষের সংঘর্ষ হয়েছে। এতে গুলিবিদ্ধ হয়ে যুবদলের স্থানীয় এক নেতা নিহত হয়েছেন। সেপ্টেম্বর মাসে ওই এলাকায় এ নিয়ে বিএনপির দুই পক্ষের সংঘর্ষে অন্তত তিনজন গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়েছেন। ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ আমলে বিএনপি যখন নির্যাতন–নিপীড়নের শিকার, তখনো অভ্যন্তরীণ কোন্দলে নরসিংদীতে দলীয় নেতা–কর্মী মারা গেছেন।
নরসিংদীর পাশের জেলা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পরিস্থিতিও কম উদ্বেগজনক নয়। ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল-আশুগঞ্জ) আসনে বিএনপি নেত্রী রুমিন ফারহানাকে ‘বহিরাগত’ উল্লেখ করে তাঁকে ঠেকাতে একজোট হয়েছেন দলটির মনোনয়নপ্রত্যাশী সাত নেতা। আগামী নির্বাচনে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে প্রার্থী হতে চান বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সহসম্পাদক রুমিন ফারহানা।