গাজায় প্রায় দুই বছর ধরে চলা ফিলিস্তিনি গণহত্যা থামিয়ে যুদ্ধবিরতি ও শান্তি আসবে—এমন কোনো বাস্তব আশার কারণ কি আছে? এ প্রশ্নই অনেকের মনে ঘুরছে।
আগের মতো এবারও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং তাঁর ঘনিষ্ঠ বন্ধু, ব্যবসায়িক অংশীদার ও বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ বলেছেন, গাজায় শান্তি এখন আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে কাছে। কিন্তু প্রশ্ন হলো আগে যেমন তাঁদের আশাবাদ ভুল প্রমাণিত হয়েছিল, এবার তা হবে না, সে নিশ্চয়তা কোথায়?
আমি মনে করি, দুটি বড় ঘটনা এবার বাঁকবদল বিন্দু হতে পারে।
প্রথমটি হলো কাতারে হামাস নেতাদের লক্ষ্য করে ইসরায়েলের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা। যদিও ইসরায়েল হামাস নেতাদের হত্যা করতে ব্যর্থ হয়েছে, কিন্তু এ ঘটনা বড় আকারে আলোচিত হচ্ছে।
পর্যবেক্ষকেরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্র (যারা কাতারের আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থার দায়িত্বে আছে এবং সেখানে তাদের সবচেয়ে বড় সামরিক ঘাঁটি রয়েছে) শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত এ হামলার বিষয়ে কিছু জানত না, এটা বিশ্বাস করা কঠিন। তাঁদের মতে, হামাস নেতাদের হত্যা করতে ব্যর্থ হওয়ার পরই যুক্তরাষ্ট্র ঘটনাটির দায় থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করেছে। যদিও যুক্তরাষ্ট্র তাদের এক মিত্রের ওপর হামলার নিন্দা করেছে, কিন্তু একই সঙ্গে ইসরায়েলের ‘শত্রুদের যেকোনো জায়গায় টার্গেট করার অধিকার’ আছে বলে সাফাই দিয়েছে।
মূলত কাতারে ইসরায়েলি হামলায় আরব বিশ্বের প্রতিক্রিয়া ভয়ংকর রূপ নেয়। উপসাগরীয় দেশগুলো দীর্ঘদিন ধরে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ককে ন্যায্যতা দিত এ যুক্তি দিয়ে যে যুক্তরাষ্ট্র তাদের নিরাপত্তার ঢাল। কিন্তু ইসরায়েল যখন কাতারের ওপর হামলা করল, তখন বিষয়টি পরিষ্কার হলো যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া এ সুরক্ষা আসলে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে নয়। যুক্তরাষ্ট্রের সুরক্ষা মূলত ইরান, ইয়েমেনের মতো প্রতিদ্বন্দ্বী দেশ কিংবা অভ্যন্তরীণ বিদ্রোহ ঠেকানোর জন্য কাজে লাগে। অর্থাৎ ইসরায়েল যদি হামলা করে, সে ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র আরব দেশগুলোকে রক্ষা করবে না। এটাই আরব বিশ্বের চোখে এক ভয়ংকর বাস্তবতা হিসেবে ধরা দিল।
দ্বিতীয় বড় ঘটনা হলো যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান পশ্চিমা মিত্রদের কয়েকটি দেশ (যেমন যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়া) অবশেষে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিয়েছে। এমনকি ইউরোপীয় ইউনিয়ন ইসরায়েলের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরনের নিষেধাজ্ঞার কথাও বলেছে।
প্রথম বড় অগ্রগতি দেখা যায় জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের ফাঁকে ট্রাম্প যখন মিসর, জর্ডান, পাকিস্তান, কাতার, সৌদি আরব, তুরস্ক ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। এর পর থেকেই উইটকফ ও অন্যান্য সূত্র যুদ্ধবিরতি ও বন্দিবিনিময়ের কথা বলতে শুরু করে।
এ বৈঠকের পর থেকেই মার্কিন মধ্যস্থতাকারী উইটকফ এবং অন্যরা যুদ্ধবিরতি ও বন্দিবিনিময় নিয়ে কথা বলতে শুরু করেন। এখানে ‘বন্দিবিনিময়’ বলা হলেও বাস্তবে এটি অসম। কারণ, ইসরায়েল অনেক বেশিসংখ্যক বন্দীকে আটকে রেখেছে, আর অন্য পক্ষের কাছে সংখ্যাটা কম।