ডাকসু নির্বাচন–পরবর্তী পোস্টমর্টেম বা সুরতহাল এখনো চলছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা জয়-পরাজয়ের নানা রকম বিশ্লেষণ করেছেন। বেশ কিছুদিন পত্রিকার শিরোনাম একচেটিয়া ডাকসু ও কিছুটা জাকসু দখল করে রেখেছিল।
ডাকসুর ফলাফল নিয়ে রাজনৈতিক দল কোনোটি বিব্রত, কোনোটি উৎফুল্ল। যারা বিব্রত, তারা তাদের জুনিয়রদের পরাজয়ের হরেক রকম ষড়যন্ত্রতত্ত্ব খুঁজে বের করেছে। রাজনৈতিক দল যারা জিতেছে, তারা জয় নিয়ে উৎসব না করে চুপচাপ হাসছে। ডাকসুতে শিবিরের জয়ের অনেক কারণ সাংবাদিক ও পর্যবেক্ষকেরা বের করেছেন।
এর মধ্যে আছে শিবিরের কোচিং পরিচালনা, প্রার্থীদের বিনম্র ভদ্র আচরণ, দীর্ঘদিনের প্রস্তুতি, সাধারণ শিক্ষার্থীদের সমস্যা নিয়ে কথা বলা, ইত্যাদি। এগুলোর সবই হয়তো সঠিক। যেকোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য এগুলো গুরুত্বপূর্ণ।
জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতির জন্যই শিবিরকে ভোট দিয়েছেন, তা কাউকে তেমনভাবে বলতে শুনলাম না। কারণ, শিবির এবার জামায়াতের রাজনীতিকে ধামাচাপা দিয়ে বা আইডেন্টিটি লুকিয়ে নির্বাচন করেছে।
বিএনপির জন্য শিক্ষা
ডাকসু নির্বাচনের পরপর একটা কলামে স্পষ্টভাবে লিখেছিলাম, ডাকসু নির্বাচনে জামায়াত-শিবির জেতেনি, হেরেছে বিএনপি-ছাত্রদল। এটা ছিল সম্পূর্ণ নেগেটিভ ভোট। তাই ফলাফলেও এত তারতম্য হয়েছে। কেন শিক্ষার্থীরা বিএনপির বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছেন, কারণগুলো আমি স্পষ্ট বলেছি। পুনরুক্তি করতে চাই না। কিন্তু যাঁরা বলবেন, রাজনীতি নিয়ে ডাকসুর নির্বাচন হয়নি, তাঁরা সম্ভবত ডাকসুর ইতিহাস খতিয়ে দেখেননি।
যাঁরা ডাকসুতে জয় পেলেন, তাঁরা নাম-পরিচয় পাল্টিয়ে এবং রাজনীতি লুকিয়ে রাজনীতি করেছেন। অনেকে বলবেন, এটা গুপ্তরাজনীতি। রাজনীতি লুকিয়ে রাজনীতি করা। যাঁরা রাজনীতিকে সামনে এনেছেন, তাঁরা সাধারণ শিক্ষার্থীদের মতের বিরুদ্ধে হলগুলোতে কমিটি দিয়ে গর্বভরে নিজেদের রাজনীতির পরিচয় দিয়েছেন। শিক্ষার্থীরা ‘পরিচিত’ রাজনীতির বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছেন। সুতরাং অন্যরা জিতেছে। তাই বলছিলাম, ডাকসুর নির্বাচন সব সময় রাজনীতি নিয়ে দুই পক্ষই দুভাবে রাজনীতি করেছে।
সংক্ষেপে বলতে গেলে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিএনপির গতানুগতিক রাজনীতির বিরুদ্ধাচরণ করেছেন। তাই বলে জামায়াতের ধর্মভিত্তিক রাজনীতিকেও সমর্থন করেননি। হয়তোবা ডাকসু নির্বাচনের এই ছোট্ট উপসংহার জাতীয় নির্বাচনে দুই পক্ষের জন্যই অর্থবহ হবে।