
দেশে প্রাকৃতিক গ্যাসের অবৈধ ব্যবহার একটি দীর্ঘদিনের সমস্যা। এ সমস্যা দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতির পথে একটি বড় বাধাও বটে। কারণ, গ্যাসের অবৈধ ব্যবহার শুধু সম্পদের অপচয়ই নয়, এটি শিল্প ও আবাসিক উভয় খাতেই গ্যাস সংকটের কারণ। বর্তমানে তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্নকরণ ও বকেয়া আদায়ে যে অভিযান পরিচালনা করছে, তা নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। মঙ্গলবার যুগান্তরের খবরে প্রকাশ-গত এক বছরে এ অভিযানের ফলে বৃহত্তর ঢাকা ও ময়মনসিংহ অঞ্চলে তিতাস গ্যাস রেকর্ডসংখ্যক তথা ৬২ হাজারেরও বেশি অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক শিল্প ও বাণিজ্যিক সংযোগও রয়েছে। একই সময়ে প্রায় ২৫৮ কিলোমিটার অবৈধ পাইপলাইনও উচ্ছেদ করা হয়েছে। অবৈধ সংযোগ প্রদানকারী চক্রের বিরুদ্ধেও নেওয়া হয়েছে ব্যবস্থা, যার ফলে বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা এবং কিছু ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছে। এছাড়া বিল বকেয়ার কারণে ১৩ হাজারেরও বেশি সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। এ ধরনের জিরো টলারেন্স নীতি গ্যাসের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার জন্য যে অত্যন্ত জরুরি, তা বলাই বাহুল্য।
অবশ্য এ অভিযানকে কেবল একটি সাময়িক পদক্ষেপ হিসাবে না দেখে একটি টেকসই সমাধান হিসাবে প্রতিষ্ঠা করা অপরিহার্য। বস্তুত এ অভিযান তখনই সফল হবে, যখন এর কার্যকারিতা দীর্ঘমেয়াদে বজায় থাকবে। অতীতে দেখা গেছে, অভিযান শেষে পরিস্থিতি আবার আগের অবস্থায় ফিরে গেছে। তাই এই চক্র ভাঙতে হলে প্রয়োজন আরও কঠোর নজরদারি ও আইনের প্রয়োগ। বলা বাহুল্য, দেশের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি হলো শিল্প খাত। নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহ না থাকলে শিল্প উৎপাদন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়। গ্যাসের চাপ কম থাকা বা সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে অনেক কারখানা তাদের উৎপাদন ক্ষমতা অনুযায়ী কাজ করতে পারে না, ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে দেশের রপ্তানি বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ঝুঁকি তৈরি হয়। বিদেশি ক্রেতারা সময়মতো পণ্য না পেলে বা পণ্যের মান নিয়ে অসন্তুষ্ট হলে অর্ডার বাতিল করতে পারেন, যা দেশের অর্থনীতির জন্য একটি বড় ধাক্কা।
আমরা মনে করি, কেবল অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করলেই হবে না, বিদ্যমান বিতরণ নেটওয়ার্কের ত্রুটিও দূর করতে হবে। লিকেজজনিত অপচয় কমানোর জন্য নিয়মিত জরিপ ও মেরামতের কাজ জোরদার করা প্রয়োজন। একই সঙ্গে গ্যাস সংকটের দীর্ঘমেয়াদি সমাধানের জন্য নতুন গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কার ও উত্তোলনকেও অগ্রাধিকার দিতে হবে। দেশের স্থলভাগে এবং সমুদ্রসীমানায় প্রচুর অনাবিষ্কৃত গ্যাসক্ষেত্র রয়েছে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। কিন্তু এগুলোর অনুসন্ধানে তেমন কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে না। সরকারের উচিত গ্যাস অনুসন্ধান কার্যক্রমে আরও বেশি বিনিয়োগ ও মনোযোগ দেওয়া। নিজস্ব উৎস থেকে গ্যাসের সরবরাহ বাড়াতে পারলে একদিকে যেমন আমদানিনির্ভরতা কমবে, তেমনই গ্যাস সংকটও অনেকাংশে দূর হবে। তিতাস গ্যাসের বর্তমান অভিযান একটি ইতিবাচক সূচনা। দেশের প্রাকৃতিক সম্পদের অপচয় রোধ এবং সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত করতে কর্তৃপক্ষ এ কার্যক্রম চলমান রাখবে, এটাই প্রত্যাশা।
- ট্যাগ:
- মতামত
- অবৈধ গ্যাস সংযোগ