অর্ধেক অর্থনীতি নয়— প্রান্তিক নারীর হাতেই পূর্ণ সম্ভাবনা

বিডি নিউজ ২৪ শোয়েব সাম্য সিদ্দিক প্রকাশিত: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১২:৩৩

এক সময়ের দরিদ্র, এখন আত্মনির্ভর এক সংগ্রামী নারীর নাম রূপা। জয়পুরহাটের আক্কেলপুরে কলেজ শিক্ষক বন্ধু রাসেলের বাড়ি বেড়াতে গিয়ে তার সঙ্গে পরিচয় হয়। রূপার গল্পটি যেন এক জীবন্ত অনুপ্রেরণা।


অল্প বয়সেই পারিবারিক চাপে তাকে বিয়ের পিঁড়িতে বসতে হয়েছিল। বিয়ের এক বছরের মধ্যে কোলে আসে সন্তান। কিন্তু তার কয়েক মাস পর স্বামী ভাগ্যান্বেষণে মধ্যপ্রাচ্যে পাড়ি দেন। প্রথম প্রথম যোগাযোগ বেশ ভালোই ছিল। হঠাৎ করেই যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন রূপার বর। পরে জানা যায়, তিনি সেখানে আরেকটি বিয়ে করে স্থায়ী হয়েছেন। সেই থেকেই সন্তানকে নিয়ে শুরু হয় রূপার একা পথচলার সংগ্রাম।


মাত্র ৫০০ টাকা হাতে নিয়ে তিনি ফেইসবুকের মাধ্যমে মুড়কি বিক্রি শুরু করেন। প্রথমে হাতে হাতে লেনদেন হতো ফলে ব্যবসা বড় হচ্ছিল না। পরে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে সঞ্চয়ী হিসাব খুললেন রূপা এবং মোবাইল ব্যাংকিংয়ের ব্যবহার শুরু করেন। এতে ক্রেতাদের আস্থা বাড়ে, বিক্রিও বেড়ে যায়। কয়েক মাস পর নারী উদ্যোক্তা রিফাইন্যান্স স্কিম থেকে জামানতবিহীন ঋণ পান। সেই অর্থ দিয়ে একটি ছোট প্যাকেজিং মেশিন কেনেন। এখন তার সঙ্গে আরও পাঁচজন নারী কাজ করছেন।


বাংলাদেশের অর্থনীতিতে নারী উদ্যোক্তার অবদান আজ আর বিতর্কের বিষয় নয়। তারা শুধু পরিবারের আয় বাড়াচ্ছেন না বরং সামষ্টিক অর্থনীতির এক অপরিহার্য চালিকাশক্তি হয়ে উঠছেন। বিশ্বব্যাপী নারী উদ্যোক্তার আর্থিক অন্তর্ভুক্তিকে এখন জাতীয় প্রবৃদ্ধির কৌশল হিসেবে দেখা হচ্ছে। বাংলাদেশে এই অন্তর্ভুক্তির প্রক্রিয়া অনেক দূর এগিয়েছে যদিও সামনে এখনও অনেক পথ বাকি।


তথ্য বলছে, ২০২৫ সালে বাংলাদেশে নারী শ্রমশক্তির অংশগ্রহণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ৪৩ শতাংশ। এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে গ্রামীণ নারীদের ব্যাংকিংয়ে অংশগ্রহণ অভাবনীয়ভাবে বেড়েছে। ২০২৪ সালের মাঝামাঝি সময়ে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের ডিপোজিটে নারীদের অবদান প্রায় অর্ধেকের ঘরে পৌঁছেছে। এ ছাড়া নারীদের ডিপোজিট অ্যাকাউন্ট ও ঋণ অ্যাকাউন্ট উভয়ই বছরে ১৭ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু একই সময়ে ব্যাংকিং খাতের মোট কর্মীসংখ্যার মধ্যে নারীর উপস্থিতি মাত্র ১৬ - ১৭ শতাংশ। অর্থাৎ নারীরা গ্রাহক হিসেবে সামনে আসলেও ব্যাংকের ভেতরে সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী ভূমিকায় তাদের উপস্থিতি এখনও সীমিত। এই বৈষম্যের কারণে নারী উদ্যোক্তাদের চাহিদাভিত্তিক আর্থিক সেবা ডিজাইন করতে অনেক ব্যাংকই পিছিয়ে আছে।


আর্থিক অন্তর্ভুক্তির গুরুত্ব এখানে বহুমাত্রিক। প্রথমত, এটি নারীদের আর্থিক স্বাধীনতা নিশ্চিত করে ফলে তারা ব্যবসায়িক সিদ্ধান্তে স্বাবলম্বী হতে পারেন। দ্বিতীয়ত, ঋণ ও অন্যান্য সহায়তা পেলে তারা ব্যবসার পরিধি বাড়াতে পারেন, নতুন বাজার ধরতে পারেন এবং আয়ের সুযোগ তৈরি করতে পারেন। তৃতীয়ত, নারী উদ্যোক্তার অন্তর্ভুক্তি একটি টেকসই প্রবৃদ্ধির পথ তৈরি করে যা দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। একজন নারী যখন আয় করেন তখন সেই আয় কেবল পরিবারের খাদ্য বা পোশাকে ব্যয় হয় না বরং সন্তানের শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা ও ভবিষ্যৎ বিনিয়োগেও কাজে লাগে। তাই অর্থনীতিতে প্রতিটি নারীর অংশগ্রহণ বহুগুণ প্রভাব সৃষ্টি করে।


তবে বাংলাদেশে নারীদের প্রতি পদে পদে সংকট মোকাবেলা করতে হয়। এক্ষেত্রেও ব্যতিক্রম নয় অনেক নারী উদ্যোক্তা। ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থাকলেও নিয়মিত লেনদেন হয় না। অনেক সময় তারা ঋণ পাওয়ার ক্ষেত্রে জামানতের শর্তে আটকে যান। ডিজিটাল ব্যাংকিং ও মোবাইল অ্যাপ ব্যবহার নিয়ে ভীতি কাজ করে, প্রশিক্ষণের অভাব রয়েছে। আবার অনেক ব্যাংক কর্মকর্তা নারী উদ্যোক্তার ব্যবসার সম্ভাবনাকে যথাযথভাবে গুরুত্ব দেন না। সামাজিক মানসিকতার প্রতিবন্ধকতাও বড়। অনেক পরিবার এখনও মনে করে, ব্যবসা বা আর্থিক বিষয়ে নারীর সংশ্লিষ্টতা দরকার নেই। ফলে ব্যাংকের দরজা খোলা থাকলেও বাস্তবে নারীরা ভেতরে ঢুকতে দ্বিধাগ্রস্ত হন।


এই বাস্তবতায় করণীয় হলো কয়েকটি নির্দিষ্ট উদ্যোগ। জামানতবিহীন ঋণের সীমা ধাপে ধাপে বাড়ানো দরকার। নারী উদ্যোক্তারা যেন পাঁচ লাখ থেকে শুরু করে ৫০ লাখ টাকায় পৌঁছাতে পারেন। ছোট অ্যাকাউন্টধারী নারীদের নিয়মিত লেনদেনে উৎসাহিত করার জন্য ব্যাংক ও মোবাইল ওয়ালেট কোম্পানিগুলোকে বিশেষ ইনসেনটিভ দিতে হবে। এজেন্ট ব্যাংকিং আউটলেটগুলোকে শুধু টাকা তোলা বা জমার জায়গা না বানিয়ে ছোট প্রশিক্ষণকেন্দ্র বানাতে হবে যেখানে নারীরা সহজ ভাষায় ব্যাংকিং ও ডিজিটাল সেবা শিখতে পারবেন। নারী-নির্ভর ছোট ব্যবসার জন্য কিউআর পেমেন্টে ফি ছাড় বা প্রাথমিক ভর্তুকি দিলে তারা প্রতিযোগিতায় টিকে যাবেন।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও