চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে স্থানীয় গ্রামবাসীর বিরোধ ও সংঘর্ষ নতুন নয়। তবে গত রোববার (৩১ আগস্ট, ২০২৫) দুই পক্ষের মধ্যে স্মরণকালের ভয়াবহ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটল। আবাসিক হলে স্থান না হওয়া অনেক শিক্ষার্থী ক্যাম্পাসের আশপাশেই স্থানীয়দের বাড়ি ভাড়া করে থাকেন। শনিবার দিবাগত রাতে এক ছাত্রীর বাসায় ফেরা নিয়ে ভবনের দারোয়ানের খারাপ আচরণ থেকে এ ঘটনার শুরু।
বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন ঘটনার ক্ষেত্রে সব সময় যেমনটি ঘটে, শিক্ষার্থীদের একটি দল ঘটনাস্থলে ছুটে যায়। যদিও অভিযোগ, কেন তারা শুরুতে ক্যাম্পাস কর্তৃপক্ষের দ্বারস্থ হয়নি, কেন এত রাতে তারা গ্রামে ছুটে গেল?
আবার এ বিষয়ও সামনে এসেছে, প্রক্টরিয়াল টিমের সঙ্গে যোগাযোগ করে আশানুরূপ সাড়া না পাওয়ায় ওই মুহূর্তে আক্রান্ত ছাত্রীর পাশে দাঁড়াতে শিক্ষার্থীরা ছুটে গিয়েছিলেন। সেখানে গিয়ে গ্রামবাসীর সঙ্গে শিক্ষার্থীদের বাগ্বিতণ্ডা থেকে এক পর্যায়ে সংঘর্ষ বেধে যায়। রাতেই অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী আহত হন, কয়েকজনকে ভয়াবহভাবে কুপিয়ে জখম করা হয়। গ্রামবাসীও হতাহত ও ক্ষতির শিকার হন।
রাতে গ্রামের ভেতরে গ্রামবাসীর সঙ্গে বড় সংঘর্ষে জড়ানো শিক্ষার্থীদের দিক থেকে বড় ভুলই ছিল। কারণ, গ্রামের ভেতরে ঢুকে অন্ধকারে মারামারিতে তাঁদেরই আক্রান্ত হওয়ার সুযোগ বেশি। কিন্তু উত্তেজিত শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন দলে ভাগ হয়ে একেকভাবে ঘটনায় জড়িয়ে যাওয়ায় কেউ কাউকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি। এতে তাঁরা নিজেরাও যেমন আহত হয়েছেন, গ্রামে বিভিন্ন বাসাবাড়িতে অবস্থান করা ছাত্রছাত্রীরাও আক্রান্ত হয়েছেন।
রাত প্রায় সাড়ে তিনটার পর সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে উপস্থিত হলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। তবে গ্রামে বাসাবাড়িতে অনেক শিক্ষার্থী আটকে পড়েন। বিশেষ করে চরম নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে পড়ে যান অনেক ছাত্রী। অনেক ছাত্র যেভাবে পারেন পালিয়ে বেঁচেছেন, অনেকে নানাভাবে লুকিয়ে ছিলেন। ছাত্র–ছাত্রীদের অনেকে অল্পের জন্য বেঁচেছেন। সব মিলিয়ে এটা ছিল এক বিভীষিকাময় রাত।
কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, শুরু থেকেই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও প্রক্টরিয়াল টিম দ্রুত তৎপরতা দেখালে এমন ভয়াবহ রাতের স্বাক্ষী হতে হতো কি শিক্ষার্থীদের?