বাংলাদেশের পুলিশ সদ্য অপসারিত শাসনকালে আরও সামরিকায়ন হয়েছে। এর শিকড় সেই ঔপনিবেশিক আমলে প্রোথিত। এখনো পুলিশ ১৮৫৭ সালের সিপাহি বিদ্রোহ–পরবর্তী ১৮৬১ সালের আইন অনুযায়ী চলছে। ব্রিটিশরা উত্তর আয়ারল্যান্ডের ‘রয়্যাল আইরিশ কন্সট্যাবুলারি’র আদলে একটি কেন্দ্রীভূত, সশস্ত্র ও আধা সামরিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে পুলিশকে সাজিয়েছিল। পুলিশের জন্মই হয়েছিল দমন-পীড়নের জন্য। কখনোই নাগরিকদের রক্ষা করার লক্ষ্যে নয়; বরং নিয়ন্ত্রণের জন্যই গড়ে তোলা হয়েছিল পুলিশ।
ক্ষমতাচ্যুত হাসিনা সরকার পুলিশকে জনগণের সেবক হিসেবে নয়, ক্ষমতা আঁকড়ে থাকার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে। জুলাইয়ের গণ-অভ্যুত্থানে পুলিশি নিষ্পেষণের ভয়ংকর চিত্র দেখা গেছে। নিরস্ত্র বিক্ষোভকারীদের ওপর তারা সেমি–অটোমেটিক রাইফেল, সাবমেশিনগান ও যুদ্ধক্ষেত্রের গোলাবারুদ ব্যবহার করেছে। ফলে পতিত শাসকের সহযোগী হিসেবে পুলিশের শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিরা দলবলসহ পালিয়ে যেতে বাধ্য হন।
অস্ত্রের পাহাড় ও রক্তের বন্যা
দ্য ডেইলি স্টার–এর ১০ আগস্টের এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে থেকে জানা যায়, গণ-অভ্যুত্থানের আগের বছরগুলোতে পুলিশ কীভাবে মারণাস্ত্রের বিশাল মজুত গড়ে তুলেছিল। ২০২১ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে প্রায় ২৪০ কোটি টাকা খরচ করে সাবমেশিনগান ও সেমি-অটোমেটিক রাইফেলের মতো মারণাস্ত্র কেনা হয়েছিল। অপ্রাণঘাতী সরঞ্জামের তুলনায় মারণাস্ত্র কেনার পেছনে ব্যয়িত অর্থের পরিমাণ ছিল সাত গুণ।
জুলাই অভ্যুত্থানে নিরস্ত্র মানুষের ওপর সেমি-অটোমেটিক রাইফেল থেকে গুলি ছোড়া হয়েছিল। এতে হারিয়ে যায় শত শত তরুণ প্রাণ। এক প্রজন্ম ক্ষতবিক্ষত হয়েছে। জাতি আবার স্মরণ করে পুলিশ এখনো এক দমনযন্ত্র, বলপ্রয়োগের বাহিনী; সেবামূলক প্রতিষ্ঠান নয়।
সমাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত পুলিশ
ইতিহাসের পাতা ওলটালে ভিন্ন পথ দেখা যায়। এ পুরোনো পদ্ধতির জন্মস্থান উত্তর আয়ারল্যান্ডে ১৯৯৮ সালের ‘গুড ফ্রাইডে চুক্তি’র পর প্যাটেন কমিশন পুলিশের ব্যবস্থাপনাকে একেবারে ঢেলে সাজিয়েছে। পুলিশিংকে বিকেন্দ্রীকরণ করে জবাবদিহি নিশ্চিত করার জন্য পুলিশিং বোর্ড গঠন করা হয় এবং পুলিশকে কমিউনিটি বা সমাজের সঙ্গে সম্পৃক্ততাকে কেন্দ্রবিন্দুতে আনা হয়েছে।
ব্রিটেনে কোনো জাতীয় পুলিশ সার্ভিস নেই। ৪৩টি আলাদা আঞ্চলিক পুলিশকে তদারক করেন স্থানীয়ভাবে নির্বাচিত পুলিশ ও অপরাধ কমিশনাররা। বাজেট আর প্রধান কর্মকর্তার নিয়োগ নিয়ন্ত্রণ করেন নির্বাচিত কমিশনার। পুলিশ তাই বৈধতা পায় জনগণের সম্মতি থেকে, কেবল রাষ্ট্রের শক্তি থেকে নয়।