জাতির পিতা খেতাবে ভূষিত ব্যক্তির আত্মজীবনী, ভাড়া করা শতাধিক সরকারি কর্মচারীকে উৎকচ, অবৈধ পদোন্নতি এবং নিয়মবহির্ভূতভাবে আবাসিক ও বাণিজ্যিক জমি প্রদানের বিনিময়ে তার নিজেরই লেখা বলে চালিয়ে দেওয়ার ঘৃণ্য অপচেষ্টার কাহিনি তারই সুযোগ্য কন্যা স্বৈরাচার হাসিনাকে উৎখাতের পরই উদ্ঘাটন করা সম্ভব হলো। রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত ব্যক্তির অশুভ ও অনৈতিক ইচ্ছা পূরণের লক্ষ্যে তারই পৃষ্ঠপোষকতায় ডক্টরেটধারী পুলিশপ্রধানের নেতৃত্বে এরকম ন্যক্কারজনক পরিকল্পনা প্রণয়ন ও তা বাস্তবায়ন কেবল সভ্যসমাজ নয়, পৃথিবীর ইতিহাসে নজিরবিহীন বলে আমার বিশ্বাস।
ইতঃপূর্বে একসময়ের জনপ্রিয় ও প্রখ্যাত শিক্ষাবিদ ও সাহিত্যিক ড. জাফর ইকবাল, তার জনপ্রিয়তার আড়ালে পদ, পদবি ও ক্ষমতা আসক্তির কারণে হয়ে উঠেছিলেন বিবেকবর্জিত স্বৈরাচারের চাটুকার ও পদলেহনকারী। স্কুলের পাঠ্যবই রচনায় সম্পাদকের দায়িত্ব পালনকালে রচনা চুরির দায়ে (plagiarism) এই জ্ঞানপাপী হয়েছেন অভিযুক্ত ও দেশব্যাপী ঘৃণিত।
ফ্যাসিস্ট হাসিনাসমেত তার দীর্ঘ ও নির্যাতনমূলক শাসনকালে সরকার ও প্রশাসনের সর্বস্তরে সর্বগ্রাসী এবং বিরামহীন মিথ্যাচার, কুখ্যাত গোয়েবেলসের সব রেকর্ড ভঙ্গ করে শঠতা ও ভণ্ডামির এক নয়া ইতিহাস রচনা করা হয়। রাজনীতিবিদ, সরকার পরিচালনায় নিয়োজিত সিংহভাগ কর্মকর্তা ও কর্মচারী, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, শিক্ষক, সাংবাদিক, ব্যবসায়ী সম্প্রদায়সহ সব শ্রেণির মানুষদের অর্থ, বিলাসিতা ও ক্ষমতা আহরণের এক অশুভ ও তীব্র প্রতিযোগিতায় নিমজ্জিত করে পুরো জাতিকে সুপরিকল্পিতভাবে অন্ধকারের অতল গহ্বরে নিক্ষিপ্ত করাই মনুষ্যত্ববিহীন স্বৈরাচার হাসিনা ও তার বিদেশি প্রভুর মূল লক্ষ্য ছিল বলে তা এখন সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত।
তবে জাতির এ অধঃপতনের জন্য কি কেবল ব্যক্তি হাসিনা আর সীমান্তের ওপারের তার আশ্রয়দাতা ও প্রভুরাই দায়ী, নাকি তা জাতি হিসাবে আমাদের অস্থিমজ্জায় অনুবিদ্ধ প্রতারণা, মিথ্যাচারিতা আর চৌর্যবৃত্তি নামক বিশেষ গুণাবলির পরিণাম?