ইলিশ কোথায় হারাচ্ছে, প্রকৃতি না মানুষের লোভ, দায় কার
ইলিশ ধরার মৌসুম চলছে। কিন্তু পটুয়াখালীর মহিপুর নদীবন্দরের জেলে সিদ্দিক মাঝি (৫৩) হতাশ। এ বছর সাতবার সমুদ্রে গিয়েও তিনি প্রত্যাশা অনুযায়ী মাছ পাননি। সর্বশেষ ১০ দিনের জন্য মাছ ধরতে গিয়ে তাঁর খরচ হয়েছে প্রায় ছয় লাখ টাকা। মাছ বিক্রি করে লাভ পেয়েছেন সামান্য। এর আগে ছয়বার মাছ ধরতে গিয়ে যে খরচ হয়েছে, সেই টাকা ওঠেনি বলে তিনি জানিয়েছেন।
আগে ভরা মৌসুমে মহিপুর থেকে বঙ্গোপসাগরের মোহনার কাছেই পাওয়া যেত বড় ইলিশ। কিন্তু এখন বড় মাছের খোঁজে অনেক গভীরে যেতে হয়, তাতে জ্বালানিসহ অন্যান্য খরচ বাড়ে। সিদ্দিক মাঝি বলেন, ‘এবারের মতো এমন কম মাছ আগে দেহি নাই। সাত-আষ্ট বছর হইলো মাছের গতিক ভালো না। বড় মাছ পাইতে অনেক দূরে যাইতে অয়।’ ২০-২৫ বছর আগের কথা মনে করে তিনি বলেন, ‘তখন নৌকা ভর্তি হইরে ইলিশ আনতাম। সেই ইলিশ সেই সময়েই ১০ থেকে ১২ লাখ টাকায় বেচা হইতে। মালিক খুশি থাকত, আমরাও থাকতাম।’
সিদ্দিক মাঝির মতো আরও অনেক জেলের কাছে সবকিছু যেন অচেনা হয়ে গেছে। মহিপুর, আলীপুর, ভোলা ও কক্সবাজারের একাধিক জেলের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ইলিশের উৎপাদন কমার পেছনে একাধিক কারণ রয়েছে।
প্রজনন মৌসুমে ইলিশ ধরা বন্ধ, জেলেদের বিকল্প কর্মসংস্থান বা সহায়তা ইত্যাদি নানা উদ্যোগে কয়েক বছর দেশে ইলিশ উৎপাদন বেড়েছিল। সরকারের দেওয়া হিসাবের সঙ্গে অবশ্য বাস্তবের মিল কতটা, তা নিয়ে অনেকেরই সন্দেহ ছিল বা আছে। কিন্তু খোদ মৎস্য অধিদপ্তরের হিসাবেই দেখা গেছে, গত মৌসুমে অর্থাৎ ২০২৩-২৪ অর্থবছরে আগের বছরের চেয়ে অন্তত ৭ শতাংশ উৎপাদন কম হয়েছে।
দেশের মোট মৎস্য উৎপাদনের প্রায় ১২ শতাংশই আসে ইলিশ প্রজাতি থেকে। উপকূলীয় জেলেদের জীবিকা, গ্রামীণ বাজারের প্রাণচাঞ্চল্য, এমনকি বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে এর ভূমিকা অপরিসীম। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ইলিশের উৎপাদন কমে যাচ্ছে, যার পেছনে রয়েছে একাধিক প্রাকৃতিক ও মানবসৃষ্ট কারণ।