
ছবি যেন শুধু ছবি নয়
নির্বাচিত-অনির্বাচিত, মনোনীত-আরোপিত যে কোনো রাষ্ট্রপতিকে সরানোর বহু ব্যবস্থাই আছে। কেবল চেয়ার থেকে নয়, দুনিয়া থেকেও আল বিদা করা যায়। এর কিছু কিছুর দৃষ্টান্ত রয়েছে আমাদের এ বাংলায়ও। দৃষ্টান্ত হিসেবে নতুনত্ব যোগ হয়েছে ছবি সরানো নিয়ে। বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশি মিশন, দূতাবাস ও কনস্যুলেট অফিস থেকে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের ছবি সরানোর নির্দেশনা দিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। নির্দেশনা মতো বহু দেশের বাংলাদেশি দূতাবাস থেকে রাষ্ট্রপতির ছবি সরিয়ে ফেলা হয়েছে। তবে, তা ছিল বেখবরে। এ সংক্রান্ত নির্দেশও কাগজে নয়, ফোনে ফোনে। এক আচানক নজির। তাও আবার কেন বা কি কারণে রাষ্ট্রপতির ছবি সরানোর এই নির্দেশনা, তাও অস্পষ্ট।
অনিয়মকে নিয়ম করার সংস্কৃতিতে বরাবরই আমাদের ভিন্নমাত্রার চর্চা রয়েছে। রাষ্ট্রপতির ছবি তুলতেও আমাদের নিয়ম লাগে না। নামাতেও লাগে না। বিগত সরকার আমলে আইন করা হয়েছিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি টাঙানোর। রাষ্ট্রপতির ছবি রাখার কোনো আইন ছিল না। তারপরও বহু অফিসে সেটা টাঙানো হয়েছে। তা কোন
বাংলাদেশের সংবিধানের চার অনুচ্ছেদে সরকারি, আধা সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, সংবিধিবদ্ধ সরকারি কর্তৃপক্ষের প্রধান ও শাখা কার্যালয়, সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশের দূতাবাস ও মিশনসমূহে প্রয়াত রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি ব্যবহারের আইনি বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এর বাইরে সরকারপ্রধানের ছবি ব্যবহার করা নিয়ে কোনো আইন, বিধি বা সাংবিধানিক নির্দেশনা শেখ হাসিনার শাসনামলে হয়নি।
তবে, ২০০২ সালে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের এক বিজ্ঞপ্তিতে মন্ত্রীদের কার্যালয়, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, অধিদপ্তর, বিদেশে বাংলাদেশের দূতাবাস ও সব স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের কার্যালয়ে সরকারপ্রধান হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর প্রতিকৃতি কিংবা ছবি টাঙানোর নির্দেশ দেওয়া হয়। ওই নির্দেশ মোতাবেক সে সময়কার প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া ও পরবর্তীতে শেখ হাসিনার ছবি ব্যবহার হয়ে আসছিল।
৫ আগস্টের পটপরিবর্তনের পর অবশ্য সরকারপ্রধান হিসেবে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস এ ধরনের কোনো নির্দেশনা দেননি। এটির কোনো প্রাসঙ্গিকতাও ছিল না। এখন ফোনাদেশে রাষ্ট্রপতির ছবি নামানোর হিড়িকের মাঝে জোর গুঞ্জন, রাষ্ট্রপতিকেও কী সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে? শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর রাষ্ট্রপতিকে অপসারণের দাবিতে বিভিন্ন ব্যানারে বিক্ষোভ হলেও সাংবিধানিক সংকটের আশঙ্কা থেকে অধ্যাপক ইউনূসের সরকার সে পথে হাঁটেনি। গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর বিভিন্ন জায়গায় সরকারি দপ্তর বা আদালত থেকে শেখ হাসিনা ও শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি নামিয়ে ফেলা হয়। এ সংক্রান্ত কোনো নির্দেশ লাগেনি।
আসলে গোটা বিষয়টির মধ্যেই এক অস্পষ্টতা। কার ছবি কোথায় টানাতে হবে সেই নির্দেশ কেবিনেট থেকে ইস্যু করা হয়। সরকার যে কোনো সময় যে কোনো সিদ্ধান্ত নিতেই পারে। কিন্তু এবার কেবিনেট বা কোনো দফতর থেকে সেরকম নির্দেশনা আসেনি। ফোনে বা মৌখিকভাবে হঠাৎ এই নির্দেশনা কেন দেওয়া হলো, কোথাও থেকে জবাব নেই। দৃষ্টান্ত হিসেবে এটি একদম নতুন। কিন্তু কোনো ধরনের নির্দেশনা না থাকার পরও রাষ্ট্রপতির ছবি বিভিন্ন দূতাবাস কার্যালয়ে কেন ব্যবহার করা হয়-এর যুক্তিও নেই। তারপরও ধারণা করা হয়, প্রত্যেকটা দেশে রাষ্ট্রদূত বা হাইকমিশনার যারা থাকেন, সেখানে তাদের দেশের রাষ্ট্র প্রধানের ছবি থাকে, এটা একটা কাস্টম। এবং এটা দীর্ঘদিন থেকে চলে আসছে। এবং সেই হিসেবেই হয়তো রাষ্ট্রপতির ছবি ছিল।
- ট্যাগ:
- মতামত
- ছবি সরানোর নির্দেশ