
ফ্যাসিস্ট পতনের বর্ষপূর্তি : কী পেলাম কী পেলাম না
পতন আর বিদায় এক নয়। ফ্যাসিস্ট শাসনের পতনের এক বছর পূর্তিতে তা আবার প্রমাণিত। এক বছর সময়ের ব্যবধানে মূল্যায়ন করা একটু জটিল হলেও অসম্ভব নয়। ফ্যাসিবাদী শাসনের অবসান স্বস্তির বিষয়। আবার ফ্যাসিস্ট শাসনের পরবর্তীসময়ে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে স্থিতিশীলতা অর্জন, গণতন্ত্রের ভিত্তি পুনর্নির্মাণ কঠিন ও চ্যালেজ্ঞিং। ফ্যাসিস্ট শাসনের অবসানের পর রাজনৈতিক স্বাধীনতা ফিরে আসে, বাংলাদেশেও বেশ এসেছে। জনগণ তাদের মতামত প্রকাশের সুযোগ পায়, যতদূর হোক সেটাও মিলেছে। প্রশ্ন ভিন্নখানে। রাজনৈতিক স্বাধীনতার ব্যবহারটি অপব্যবহারে চলে যাচ্ছে কি না? মতপ্রকাশের স্বাধীনতার নামে যা ইচ্ছা বলা হচ্ছে কি না? মর্যাদা থাকছে স্বাধীনতা শব্দটির?
ফ্যাসিবাদ পতনের পর অর্থনৈতিক-সামাজিক পরিবর্তনের একটা সুযোগ আসে। তা বিশ্বের দেশে দেশে দেখা গেছে। ফ্যাসিবাদী অর্থনীতির পরিবর্তে মুক্তবাজার অর্থনীতি বা মিশ্র অর্থনীতির দিকে যাত্রা শুরু হতে পারে, যা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়নে সহায়ক হয়। সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে তৈরি হয় সংস্কার ও পরিবর্তনের সুযোগ। বিপরীতে কিছু চ্যালেঞ্জও দেখা দেয়। ফ্যাসিস্ট শাসনের পতনের পর রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা দেখা যেতে পারে। দেখা দেয় অর্থনৈতিক সংকট। সামাজিক বিভাজনও ভর করে। সম্ভাবনা ও শঙ্কার এ দুই সন্ধিক্ষণেই এখন বাংলাদেশ।
ফ্যাসিবাদী মতাদর্শের ইতিহাস দীর্ঘ এবং এটি অনেক উৎস থেকে আকৃষ্ট। ফ্যাসিস্টরা আরও অনেককে নিয়ে-দিয়েই ফ্যাসিস্ট হন। অল্প বা দীর্ঘসময় জনপ্রিয়তাও পান। সমর্থন আদায়ের নানান কৌশল নেন। তাদের অনেক ল্যাসপেন্সার-অলিগার্ক তৈরি হয়। ওই বেনিফিশিয়ারিরা তাদের টিকিয়ে রাখতে বিস্তর অবদান রাখেন। ক্ষমতা অর্জন এবং বজায় রাখার জন্য ঐতিহ্যবাহী রক্ষণশীল শক্তির সাথে বাস্তববাদী কৌশলগত জোটও করে। ফ্যাসিবাদীরা উদারনীতিকে মানুষকে আধ্যাত্মিকতা থেকে মুক্ত করে এবং তাদের বস্তুবাদী সত্তায় রূপান্তরিত করার জন্য অভিযুক্ত করে যাদের সর্বোচ্চ আদর্শ অর্থ উপার্জন। হিটলার-মুসোলিনি থেকে সাদ্দাম-হাসিনা পর্যন্ত ঘটনা প্রায় কাছাকাছি। বিদায়ের পথপরিক্রমাও হয় দুঃখজনক। তাদের পতনের পর দেশে দেশে যা ঘটে বাংলাদেশেও এখন সেই দৃশ্যপট।
৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতনের মধ্য দিয়ে যে নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন পুরো বাংলাদেশের মানুষ দেখেছিল, সেই স্বপ্ন পূরণের প্রথম ধাপ ছিল অন্তর্বর্তী সরকার গঠন। সরকারটি দিন পার করছে নানান তাপে ও তোপে। কেউ সংস্কার কমিশনগুলোকে সরকারের সাফল্য হিসেবে দেখছে। কেউ দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধি, চাঁদাবাজি পুরোপুরি বন্ধ না হওয়াকে অন্তর্বর্তী সরকারের নেতিবাচক দিক হিসেবে দেখছে। উভয় দেখাই সঠিক। বাংলাদেশে ফ্যাসিস্ট উৎখাতের আন্দোলন শুরু হয়েছিল শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কারের দাবি নিয়ে। পরে এটি রূপ নেয় বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে। এক পর্যায়ে এটি ঠেকে সরকার পতনের এক দফায়।
বর্তমান সরকার ফ্যাসিবাদী কাঠামো বিলোপের জন্য নিশ্চিতভাবেই কাজ করছে কিংবা ভবিষ্যতে করবে। সরকারপ্রধান পরিষ্কারভাবেই বলেছেন, ছাত্ররা তাকে চাকরি দিয়েছেন। দীর্ঘ ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে রাজনৈতিক দলগুলোরও ভূমিকা ছিল, যারা এর আগে শত চেষ্টার পরও স্বৈরাচারী সরকার পতনে ব্যর্থ হয়। ফ্যাসিবাদী শক্তির সঙ্গে তারা কুলিয়েও উঠতে পারেনি। এখন তারাও নিজেদের মতো কৃতিত্ব নিতে চাইছে, চাইবে-এটাই স্বাভাবিক। রাজনৈতিক দলগুলোর বিশাল ভূমিকা ছিল এই আন্দোলনকে সফল করতে।
- ট্যাগ:
- মতামত
- জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবস