
জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আইনশৃঙ্খলাবিষয়ক উচ্চপর্যায়ের দ্বিতীয় সভায় বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সোমবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সিদ্ধান্ত হয়, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতির অংশ হিসাবে সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বরের মধ্যে দেড় লাখ পুলিশ সদস্যকে নির্বাচন বিষয়ে বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। নির্বাচনের সময় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসাবে প্রায় ৬০ হাজার সেনাসদস্য দায়িত্ব পালন করবেন। গুজব ও ভুয়া তথ্য রোধে গঠন করা হবে ‘ন্যাশনাল ইনফরমেশন সেন্টার’। নির্বাচন সামনে রেখে প্রশাসনেও রদবদল করা হবে। এসব সিদ্ধান্তের মধ্য দিয়ে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেছে বলা যেতে পারে। জানা গেছে, নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার জন্য সরকারি সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয় জোরদারেও কাজ চলছে।
যে কোনো নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে সম্পন্ন করার ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টরগুলোর একটি হলো আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি। মানুষ যাতে নির্বিঘ্নে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেন, সে বিষয়টি নিশ্চিত করা জরুরি। জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে সরকার নিরাপত্তা প্রস্তুতি নিচ্ছে এবং সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয় জোরদারে কাজ শুরু করেছে, এটি স্বস্তির বিষয়। অনেকে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, ষড়যন্ত্রকারীদের বাধায় আসন্ন নির্বাচন আদৌ সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করা যাবে কিনা। বোঝা যাচ্ছে, সরকারের সেদিকেও নজর রয়েছে। দেশে বহু বছর সুষ্ঠু নির্বাচন হয়নি। জুলাই অভ্যুত্থানের অন্যতম লক্ষ্য ছিল মানুষের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে আনা এবং গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা। নির্বাচনের মধ্য দিয়ে গঠিত সরকারকে যথাযথ সংস্কারের মাধ্যমে গণতন্ত্রের ভিত সুসংহত করতে হবে, যাতে দেশে আর কখনো স্বৈরাচারের জন্ম না হয়। কাজেই জাতীয় নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে হতে যাচ্ছে দেশের ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। ১৩ জুন লন্ডনে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ওই বৈঠক শেষে যৌথ বিবৃতিতে ঘোষণা দেওয়া হয়, সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা গেলে আগামী বছরের রমজান মাসের আগে অর্থাৎ ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে নির্বাচন হতে পারে। আশা করা হচ্ছে, আগস্টের শুরুতে প্রধান উপদেষ্টা জাতির উদ্দেশে ভাষণে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করবেন। প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি সঠিকভাবে সম্পন্ন করা গেলে আসন্ন নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে, এমন আশা করাই যায়। বলা বাহুল্য, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম কাজটিই হচ্ছে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের পরিবেশ সৃষ্টি করে তা যথাসময়ে সম্পন্ন করা। অন্যথায় রাজনৈতিক সংকট ভিন্নমাত্রা পাওয়ার আশঙ্কা থেকেই যায়। একটি সুন্দর নির্বাচন অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার দেশকে সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক ধারায় ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হবে, এটাই প্রত্যাশা।
- ট্যাগ:
- মতামত
- সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন