এ কাহিনির শেষ কোথায়

www.ajkerpatrika.com মামুনুর রশীদ প্রকাশিত: ০৫ জুলাই ২০২৫, ১৪:১৬

আমি প্রবাসে প্রায় প্রতিদিনই একাধিকবার আমার প্রিয়জনদের ফোন পাই। আবার আমিও ফোন করি। জিজ্ঞেস করি একটি প্রশ্ন—দেশের খবর কী? সবারই একটি উত্তর—‘খুবই ঘোলাটে, নির্বাচন হবে না। মুরাদনগরের সংবাদ দেখেছেন? অথবা এয়ারপোর্টে উপদেষ্টার অস্ত্রবিষয়ক কারবারটা কী দেখলেন?’ ইত্যাদি ইত্যাদি। তথ্য জানা এবং ব্যাখ্যার জন্য তাৎক্ষণিক উপায় হচ্ছে ইউটিউব, ফেসবুক এসব। নানা ধরনের বিশ্লেষণ জানা যায়। কিন্তু বিশ্লেষণের এত অভিনবত্ব যে বিভ্রান্তির জন্য নানা পথ খুলে যায়। কত যে ইউটিউব চ্যানেল খুলে গেছে এবং যাচ্ছে, তারও হিসাব নেই। হিসাব নেই বাংলাদেশে কত রাজনৈতিক দল। সম্ভবত ৫০টি রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন রয়েছে। এবার নতুন করে আবেদন করেছে ১৪৭টি দল। এদের কোনো কোনো রাজনৈতিক দলের অফিসও নেই, হয়তো হোটেল বা রেস্তোরাঁর ঠিকানা দিয়েছে।


আমাদের দেশের মানুষের নিজের প্রতি অদ্ভুত একটা আত্মবিশ্বাস আছে। এই আত্মবিশ্বাস আবার অনেকবার ভ্রান্ত প্রমাণ হওয়ার পরও তারা থামে না। তাই মিথ্যা প্রত্যয় তাদের বাড়তেই থাকে। একসময় রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের সময়ও বেশ কিছু প্রার্থী গজিয়ে যেত, যাঁদেরকে তাঁদের প্রতিবেশীরাও চিনতেন না। তাঁদের জামানত বাজেয়াপ্ত হতো। লোকসমক্ষে হাসির পাত্র হলেও তাঁরা সগর্বে চায়ের দোকানে অথবা অফিস-আদালতে বলতেন—‘আমি প্রেসিডেন্ট ক্যান্ডিডেট’। তাই দল গঠন করা, ইউটিউব চ্যানেল খোলা—এ সবই আমাদের মিথ্যা প্রত্যয়ের বিষয়।


বিষয়টা গড়াতে গড়াতে এমন এক জায়গায় গিয়ে পৌঁছেছে যে, অসংখ্য মন্ত্রীর সঙ্গে সঙ্গে অসংখ্য উপদেষ্টারও জন্ম হচ্ছে। এই উপদেষ্টাদের দেশের জন্য কিছুই করতে হয় না। সবাই মোটা অঙ্কের বেতন পাওয়া সরকারি কর্মকর্তা ও দারিদ্র্যবিমোচনের বিধাতা—ইংরেজিতে পোভার্টি লর্ড। আবার চাকরিজীবন শেষ করে ওয়াশিংটনে (আগে অবশ্য লন্ডনের কোথাও) বা আমেরিকার কোথাও একান্তে জীবনযাপন করছেন। হঠাৎ কোনো শুভাকাঙ্ক্ষীর ডাকে টাইয়ের নটটা বাঁধতে বাঁধতে হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরে নামলেন। তারপর কাজে লেগে গেলেন। যাঁর আশীর্বাদে এখানে আসা, তিনিও এ দেশে তাঁর প্রতিবেশী। এমন সব স্পর্শকাতর বিষয়ে ঝামেলা লাগিয়ে দিলেন যে, তিনি উপদেষ্টা পরিষদের জন্য একটা বোঝা হয়ে দাঁড়ালেন। যেসব অতি বুদ্ধিমান লোক বিদেশে থাকেন, তাঁরা সব সময়ই এ দেশের মানুষকে একেবারেই অজ্ঞ ভাবেন। এবং যা খুশি তা-ই খাওয়াতে পারবেন বলে মনে করেন।



এবারে তো আরও সুবিধা। সবাই সব বোঝেন। অফিস-আদালতে প্রতিশোধ গ্রহণের বড় হাতিয়ার মব। উপদেষ্টামণ্ডলীও মবকে শুধু প্রশ্রয় দেন না, নিজেরাও পোষেন। মব সৃষ্টিকারী হাতেনাতে ধরা পড়লেও তাদের কিছু বলেন না। শিল্পকলা একাডেমিতে যেদিন একটি ক্ষুদ্র মব পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সামনেই অনুষ্ঠানের ওপর হামলা করল, দীর্ঘ সময় হামলা চালাল, তাদের কিছুই বলা হলো না। অনেক মানিগুণী মানুষকে মব অপমান-অপদস্থ করেছে, তার জন্য কোনো ব্যবস্থা নেয়নি অন্তর্বর্তী সরকার। উপদেষ্টামণ্ডলীতে যাঁরা আছেন তাঁদের সুবিধা হচ্ছে, তাঁরা কখনো স্কুল-কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েননি। তাই শিক্ষকদের অপমানে তাঁদের কিছু যায়-আসেনি। মাদ্রাসার ধর্ষক হুজুররাও কোনো মব আক্রমণের সামনে পড়েননি।


প্রধান উপদেষ্টা ছাত্র সমন্বয়কদের প্রতি ভীষণ কৃতজ্ঞ এবং সুযোগ পেলেই বলেন, ‘ওরাই আমাদের ক্ষমতায় বসিয়েছে।’ কথাটি সত্যি। এই ধরনের একটি পরিস্থিতি না হলে কোনো দিনই তাঁরা রাষ্ট্রক্ষমতায় আসতে পারতেন না। লাখো মানুষ বেকার, অর্থনীতির কোনো গতিময়তা নেই, কোটি পরিবার শুধু চরম অনিশ্চয়তায় কালক্ষেপণ করছে। প্রধান উপদেষ্টা বারবার রাষ্ট্রীয় অর্থে বিদেশে যাচ্ছেন। কোনো ধরনের অর্জন তাতে হচ্ছে না। যে পরিমাণ অর্থ তাতে রাষ্ট্রের ব্যয় হচ্ছে, কোনো অবস্থাতেই তা পূরণ হওয়ার কোনো সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। তাঁর ব্যক্তিগত অর্জন হয়তো হচ্ছে। কিন্তু ভবিষ্যতে তা রক্ষা করা সম্ভব কি না, তাতে সন্দেহের অবকাশ আছে।


এই পরিস্থিতিতে দ্রুত নির্বাচন দিয়ে গণতন্ত্রে ফিরে যাওয়ার ব্যবস্থাটা করে দিলেই তো হয়। তা তিনি করবেন না বলে অধিকাংশ মানুষের ধারণা। আর সেখানেই মানুষের উদ্বেগ এবং অনিশ্চয়তা। এই ছোট্ট বিষয়টা উপদেষ্টামণ্ডলী এবং মেধাবী ছাত্র উপদেষ্টারা ধরতে পারছেন না। নির্বাচন পেছালে কার লাভ? নবগঠিত দল এবং তাদের কর্মকাণ্ড দিন দিন প্রশ্নবিদ্ধ হবে। বিএনপিকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তুললেও তাদের যে একটা ভোটব্যাংক আছে, তার কতটা ক্ষতি করতে পারবে? জামায়াতে ইসলামী নানাভাবেই প্রশ্নবিদ্ধ হতে শুরু করেছে। বিশেষ করে ফেসবুকে যেসব বিবৃতি আসছে, তা-ও বেশ ভয়ংকর। ইসলামী দলের সংখ্যাও কম নয়। তারা অনেকেই জামায়াতে ইসলামীর পক্ষের দল নয়। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি থেকে শুরু করে কোনো কিছুই নিয়ন্ত্রণে আনতে পারছে না সরকার। আর সেনাবাহিনীর সঙ্গে দূরত্ব কমিয়ে আনতেও ব্যর্থ হচ্ছে।


চট্টগ্রাম বন্দর বড়ই স্পর্শকাতর বিষয়। তার ওপর যুক্ত হয়েছে করিডর। এসব স্পর্শকাতর বিষয় অন্তর্বর্তী সরকার বিবেচনায় না আনলেই ভালো হতো। এখন এসব সামাল দেওয়া কঠিন থেকে কঠিনতর হয়ে উঠেছে। মানুষ আসলে একটা পরিবর্তনের আশায় বুক বেঁধেছিল। কিন্তু তাদের ভাগ্যে জুটেছে আরও অশান্তি। চাঁদাবাজি কমেনি, মব এসেছে, ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া ভেস্তে গেছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেত্রী উমামার দীর্ঘ বিবৃতিতে জনগণ চূড়ান্ত হতাশায় নিমজ্জিত হয়েছে।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও