রাজনৈতিক উত্তাপে কার লাভ, কার ক্ষতি

যুগান্তর জিয়া আহমদ প্রকাশিত: ০২ জুলাই ২০২৫, ১৩:২২

গত মাসে লন্ডনে বিএনপির তারেক রহমান এবং ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ‘আইস ব্রেকিং’ বৈঠকের পর দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে এক ধরনের থমকে যাওয়া ভাব লক্ষ করা যাচ্ছিল। ওই বৈঠককে দেশের কয়েকটি রাজনৈতিক দল ভালোভাবে নিতে পারেনি। গত বছরের জুলাই-আগস্টের সফল গণ-অভ্যুত্থানের পর পাদপ্রদীপের আলোতে আসা এ দলগুলো তাদের অবস্থান ক্ষুণ্ন হওয়ার আশঙ্কা করছিল। এ বৈঠককে ঘিরে এবং তারা এ বৈঠকের ‘কথিত সমঝোতাকে’ কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছিল না। সে কারণে ওই বৈঠকের পর এ রাজনৈতিক দলগুলো নানাভাবে এ নিয়ে তাদের অসন্তোষ প্রকাশ করে আসছিল, যা দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে একটি গুমোটভাবের সৃষ্টি করেছিল। বর্তমানে ওই রাজনৈতিক দলগুলো তাদের কর্মপন্থার বিষয়ে একমত হয়ে মাঠে নেমে রাজনৈতিক অঙ্গনকে উত্তপ্ত করা শুরু করেছে।


নবগঠিত এনসিপি প্রথম থেকেই দেশের পরবর্তী জাতীয় নির্বাচনকে যতটা সম্ভব পিছিয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে আগ্রহী ছিল। সে কারণে তারা প্রথম থেকেই নির্বাচনের পূর্বশর্ত হিসাবে ‘জুলাই সনদ’ প্রকাশ ও তার বাস্তবায়ন, স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বিচার, জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন প্রভৃতি দাবি তুলেছে। বর্তমানে যেহেতু জুলাই সনদ প্রায় প্রস্তুত হয়ে গেছে এবং আগামী কয়েক মাসের মধ্যে আওয়ামী নেতৃত্বের বিচারও দৃশ্যমান হবে বলে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সরকার ঘোষণা করেছে, সেই প্রেক্ষাপটে নির্বাচন পেছানোর জন্য নতুন কোনো দাবি তোলা তাদের জন্য খুবই প্রয়োজন হয়ে দাঁড়িয়েছে। এনসিপির নির্বাচন পেছানোর কারণটা বোঝা যায়। তারা নতুন একটি দল, যারা নির্বাচন কমিশনে তালিকাভুক্তির জন্য আবেদন করেছে মাত্র। তাদের নেতারা এখনো সম্ভাব্য নির্বাচনি এলাকায় তেমন পরিচিত নন। সে কারণে নির্বাচন পিছিয়ে গেলে তারা ভোটযুদ্ধের জন্য আরেকটু প্রস্তুতির সময় পাবে বলে মনে করছে। তা ছাড়া বিভিন্ন শীর্ষ নেতাদের পদত্যাগ, নিয়োগ-বদলি বাণিজ্যের অভিযোগ এবং নানা কেলেঙ্কারিতে জর্জরিত এনসিপির পক্ষে এ মুহূর্তে নির্বাচনে যাওয়া প্রায় অসম্ভব। আর সে কারণেই তারা বর্তমানে জাতীয় নির্বাচনের আগে আবার স্থানীয় সরকার নির্বাচনের দাবি তুলেছে।



বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী এ দেশের একটি বেশ পুরোনো রাজনৈতিক দল। কিন্তু তাদের নির্বাচনে সাফল্যের নজির খুব কম। ১৯৯১ সালে এককভাবে নির্বাচন করে তারা ১৮টি আসনে বিজয়ী হয়েছিল, প্রদত্ত ভোটার ১২.১৩ শতাংশ ভোট পেয়েছিল। ১৯৯৬ সালে তাদের প্রাপ্ত ভোটের হার ও আসন উভয়ই কমে যায়। সে নির্বাচনে তারা ৮.৬১ শতাংশ ভোট পায়, মাত্র ৩টি আসন লাভ করে। ২০০১ সালের নির্বাচনে বিএনপির সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচন করার কারণে তাদের প্রাপ্ত ভোটের হার কমে ৪.২৮ শতাংশে দাঁড়ালেও তাদের প্রাপ্ত আসন সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ১৭টিতে। বস্তুত এটাই বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আজ পর্যন্ত সবচেয়ে বড় নির্বাচনি সাফল্য। পরে বিএনপি সরকার গঠন করলে জোটের শরিক হিসাবে জামায়াতের দুজন নেতা মন্ত্রিসভায় স্থান পান। ’২৪-এর গণ-অভ্যুত্থান-পরবর্তী পরিস্থিতিতে জামায়াতে ইসলামী দেশের প্রধান বিরোধী দল হতে আগ্রহী। তাদের কোনো কোনো নেতা অবশ্য এ স্বপ্নও দেখছে যে, অন্য কোনো জনপ্রিয় রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচন করলে তারা ‘কোয়ালিশন’ সরকারও গঠন করতে পারে। আর সে কারণে তারা দেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দল বিএনপির ভোট কমার অপেক্ষা করছে। তারা শুধু যে অপেক্ষাই করছে তা নয়, তারা তাদের ‘প্রোপাগান্ডা মেশিনে’র মাধ্যমে এ কাজে সক্রিয় ভূমিকাও রাখছে বলে বোদ্ধামহলের ধারণা। গণ-অভ্যুত্থান-পরবর্তী বিএনপির একশ্রেণির নেতাকর্মীর চাঁদাবাজি এবং দখল বাণিজ্যের সবচেয়ে বড় সমালোচকও তারা। তারা বিএনপিসংশ্লিষ্ট কোনো নেতা বা কর্মীর কোনো ত্রুটি আবিষ্কার করতে পারলে, তার পেছনে তাদের ‘বট’ বাহিনী লেলিয়ে দেয় এবং বিষয়টিকে জাতীয় ইস্যুতে পরিণত করার চেষ্টা করে আসছে ’২৪-এর আগস্টের পর থেকেই।


বাংলাদেশ শাসনতন্ত্রী আন্দোলনসহ কট্টর ইসলামী দলগুলোরও রয়েছে সরকারের অংশ হওয়ার বাসনা। ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনের ভোটব্যাংক বাংলাদেশের প্রদত্ত ভোটের এক শতাংশের কাছাকাছি। ২০০১ সালে হেফাজতে ইসলামসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সমন্বয়ে গঠিত ‘ইসলামী জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট’ বিএনপির সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে বেশ ভালো ফলাফল করে। সে কারণে আগামী নির্বাচনের প্রাক্কালে ইসলামী দলগুলোকে কাছে টানার একটা প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। কিন্তু তারা বিভিন্ন ভাগে বিভক্ত হয়ে যাওয়ার দরুন সে প্রয়াস কতটুকু সফলতা বয়ে আনবে তা এখন দেখার বিষয়।


দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কথাবার্তা শুনে এবং তাদের সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ড পর্যালোচনা করে এমনটি মনে হওয়া অস্বাভাবিক নয় যে, এই রাজনৈতিক দলগুলো বিএনপিকে রাজনৈতিকভাবে ‘একঘরে’ করে ফেলার চেষ্টা করছে। বিএনপির জনপ্রিয়তা তাদের ভাবিয়ে তুলেছে যে, এ মুহূর্তে নির্বাচন হলে বিএনপি ক্ষমতায় আসীন হয়ে যাবে, যা তারা হতে দিতে ইচ্ছুক নয়। সে কারণেই ’২৪-এর গণ-অভ্যুত্থানের পর থেকেই দেশের সরব রাজনৈতিক দলগুলো ‘বিএনপি ঠেকাও’ নীতি গ্রহণ করেছে বলে অনেকে অনুমান করছেন। আর এ প্রয়াসকে গতিশীল করে তুলছে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের একটা অংশ, তাদের নির্বাচন পেছানোর নানা কৌশলের মাধ্যমে।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও