
আওয়ামী সমর্থকেরা কাকে ভোট দেবে
লন্ডনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের একান্ত বৈঠকের পর প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দীন জানিয়েছিলেন, সরকারের কাছ থেকে নির্দেশনা পাওয়ার পর তাঁরা নির্বাচনের তারিখ ঠিক করবেন।
বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় তিনি প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের একটি সূত্রের বরাত দিয়ে প্রথম আলো জানিয়েছে, দুজনের মধ্যে ‘ওয়ান টু ওয়ান (একান্ত)’ বৈঠক হয়েছে। এর ফলে সেখানে কী আলোচনা হয়েছে, সে সম্পর্কে কিছু জানা যায়নি।
ধারণা করা যায়, নির্বাচন কমিশন সরকারের কাছ থেকে নির্দেশনা পেয়ে গেছে। এর আগে প্রধান উপদেষ্টা জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে এপ্রিলের প্রথমার্ধে নির্বাচনের ঘোষণা দিলে বিএনপিসহ বেশির ভাগ দল তার বিরোধিতা করেছিল।
এদিকে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের জন্য প্রয়োজনীয় সব নির্বাচনী উপকরণ কেনা সম্পন্ন করতে চায় তারা। ইসি সচিব আখতার আহমেদ জানান, ‘জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ২১ ধরনের ফরম, ১৭ ধরনের প্যাকেট, পাঁচ ধরনের পরিচয়পত্র, আচরণবিধি, প্রতীকের পোস্টার, নির্বাচন পরিচালনা ম্যানুয়াল, প্রশিক্ষণ ম্যানুয়েল ও নির্দেশিকা ইত্যাদি ছাপানোর কার্যক্রম দ্রুত শুরু করা প্রয়োজন।’
আগামী ফেব্রুয়ারির মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ইসি ডিসেম্বরে তফসিল ঘোষণা করার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
অন্তর্বর্তী সরকার চাইছে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্যের ভিত্তিতে নির্বাচন হোক। এই লক্ষ্যে প্রধান উপদেষ্টাকে প্রধান করে একটি জাতীয় ঐকমত্য কমিশনও গঠন করা হয়েছে। কিন্তু তারা দফায় দফায় বৈঠক করেও মৌলিক বিষয়ে একমত হতে পারছে না। সংবিধানের মৌলিক নীতি, জাতীয় সাংবিধানিক কমিটি, রাষ্ট্রপতি ও উচ্চকক্ষের নির্বাচন পদ্ধতি নিয়ে একমত হতে পারছে না। বিএনপি সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রস্তাব অনুযায়ী এক ব্যক্তির সর্বোচ্চ ১০ বছর প্রধানমন্ত্রী পদে থাকা মেনে নিয়েছে শর্ত সাপেক্ষে। তারা বলেছে, জাতীয় সাংবিধানিক কমিটি থাকতে পারবে না। রাষ্ট্রের মৌলিক নীতি বদলের বিপক্ষে বাম দলগুলো। ইসলামি দলগুলো বহুত্ববাদের বিপক্ষে। বিএনপি চায় পঞ্চদশ সংশোধনীর আগের অবস্থায় যেতে। তবে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য, সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ পরিবর্তনসহ কিছু কিছু বিষয়ে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
অধিকাংশ রাজনৈতিক দলের মতের মিল না থাকায় জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিলের (এনসিসি) পরিবর্তে ‘সাংবিধানিক ও সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানের নিয়োগ কমিটি’ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। কমিটি শুধু সাংবিধানিক ও সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানগুলোর নিয়োগ কার্যক্রম পরিচালনা করবে। অ্যাটর্নি জেনারেল ও তিন বাহিনীর প্রধানের নিয়োগ এই কমিটির অন্তর্ভুক্ত হবে না। বিএনপি এটাও মানতে চাইছে না। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বৃহস্পতিবার এক সভায় অভিযোগ করেছেন, জাতীয় ঐকমত্য কমিশন নির্বাহী বিভাগকে দুর্বল করতে চায়।
সাংবিধানিক সংস্কারের বিষয়ে বিতর্ক সত্ত্বেও সব দলই তলেতলে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে এবং সেটি জাতীয় সংসদেরই। এখন সংবিধান সভা, নতুন সংবিধান প্রণয়ন, গণভোটের কথা জোরালোভাবে শোনা যায় না। আবার কে কতটি আসন পাবে, তার আগাম ঘোষণাও দিচ্ছে। এনসিপির এক নেতা বলেছেন, ৪০০ আসনের মধ্যে ৩০০ আসন তাঁরা পাবেন। জবাবে বিএনপির কোনো কোনো নেতা বলছেন, এনসিপির জামানতই থাকবে না।
নিবন্ধন পাওয়ার পর জামায়াতে ইসলামীর নেতারা খোশমেজাজে আছেন। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে তাদের নিবন্ধন বাতিল করা হয়েছিল। এখন আওয়ামী লীগের নিবন্ধন বাতিল। আর জামায়াতের নিবন্ধন পুনর্বহাল হয়েছে। নির্বাচনের প্রস্তুতিতে জামায়াতই এগিয়ে আছে। বিভিন্ন পত্রিকায় এলাকাভিত্তিক যে চিত্র দেখা যায়, তাতে বেশির ভাগ আসনে বিএনপির একাধিক প্রার্থী। বিপরীতে জামায়াতের একক প্রার্থী। একটি পত্রিকায় দেখলাম, জামায়াত ৩০০ আসনের মধ্যে ২৯৬টিতে তাদের সম্ভাব্য প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছে।
সমকাল বিএনপির বিপরীতে তিন শক্তির সমঝোতা শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। তাদের নির্বাচনী সমীকরণটা হলো: জামায়াতে ইসলামী বিএনপির মতো এককভাবে নির্বাচন করবে। চরমোনাই পীরের নেতৃত্বাধীন ইসলামী আন্দোলন সামনে রেখে ধর্মভিত্তিক দলগুলো একটা প্ল্যাটফর্ম গঠন করতে পারে। তবে সংস্কার আলোচনায় বিএনপির বিপরীতে অবস্থান নেওয়া দলগুলো নিয়ে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) যে আলাদা মোর্চা করতে চাইছে, তার রূপ কী নেবে, এখনো পরিষ্কার নয়।