
জিজ্ঞাসাবাদ করতেন ভারত ও বাংলাদেশের গোয়েন্দারা
আওয়ামী লীগ আমলে সংঘটিত বেশির ভাগ গুমের খবর জানতেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ডিজিএফআই, র্যাবসহ অন্যান্য গোয়েন্দা সংস্থার কাছে থাকা ভুক্তভোগীদের নির্যাতন এবং ভয়ভীতি দেখিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের তথ্য জানানো হতো তাকে। শুধু তাই নয়, এসব গোয়েন্দা সংস্থায় দায়িত্বরত বিভিন্ন কর্মকর্তার মনোভাব, তাদের আইনবহির্ভূত সরকারি সিদ্ধান্ত মানতে অনীহার বিষয়-সবকিছুই তাকে জানানো হতো। গুমসংক্রান্ত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে বহু সৈনিক ট্রমায় আক্রান্ত হন। দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে ভিন্নমত পোষণকারীদের প্রায় সবাইকেই ব্যক্তিগত ও পেশাগতভাবে ক্ষতির মুখে পড়তে হয়েছে।
সম্প্রতি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে গুম কমিশনের দাখিল করা দ্বিতীয় পর্যায়ের প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে। সোমবার রিপোর্টের কিছু অংশ গণমাধ্যমে প্রচারের জন্য দেওয়া হয়। এর আগেও রিপোর্টের কিছু অংশ গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়।
রিপোর্টে বলা হয়, গুমের ঘটনায় ভারতের সঙ্গে গোপনে বন্দি বিনিময় কার্যক্রম ছিল। দুই দেশের গোয়েন্দারা ভুক্তভোগীদের আটকে রেখে জিজ্ঞাসাবাদ ও নির্যাতন করতেন। প্রতিবেদনে বলা হয়, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের এক সদস্য ৫ আগস্টের পর গণভবনে পরিত্যক্ত কিছু নথিপত্র পর্যালোচনা করে হাতে লেখা দুটি চিঠি পান। র্যাবের দুজন কর্মকর্তা বেআইনি আদেশ মানতে অস্বীকৃতি জানিয়ে বাহিনীর পরিচালক বরাবর সেগুলো লিখেছিলেন। ওই চিঠিগুলো শেখ হাসিনার কাছে পাঠিয়ে দেন বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। ২০১৫ থেকে ২০২৪ সালে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার আগ পর্যন্ত সেসব চিঠি নিজের ফাইলে সংরক্ষণ করে রেখেছিলেন শেখ হাসিনা। চিঠিগুলোর একটিতে লেখা ছিল- ‘আমাকে কোনো অপারেশনে পাঠানো হলে সেখানে বিচারবহির্ভূত কোনো হত্যা করা কিংবা দেশের আইনবিরোধী গুলির নির্দেশনা দেওয়া থাকলে আমি সে কাজ করতে পারব না।’
প্রতিবেদনে বলা হয়, ডিজিএফআইয়ের দায়িত্বে যেসব জেনারেল ছিলেন, গুমের আদেশ দেওয়ার সময় তারা কার্যত সেনাবাহিনী ও রাজনৈতিক নেতৃত্ব বিশেষ করে শেখ হাসিনা ও জেনারেল তারিক সিদ্দিকীর মধ্যবর্তী সংযোগকারীর ভূমিকায় ছিলেন। জেনারেল আকবর কমিশনকে জানান, জয়েন্ট ইন্টিলিজেন্স কমিটি (জেআইসি)-এর ভুক্তভোগী হুমাম কাদের চৌধুরীর বিষয়টি তিনি সরাসরি শেখ হাসিনার সঙ্গে আলোচনা করেছিলেন। ডিজিএফআই’র একজন জুনিয়র কর্মকর্তা কমিশনকে বলেন, তিনি নিজে বাহিনীর পরিচালককে এক বন্দির ভবিষ্যৎ নিয়ে এমনভাবে কথা বলতে শুনেছিলেন, যাতে স্পষ্ট ছিল শেখ হাসিনা ওই বন্দি সম্পর্কে অবগত ছিলেন এবং এ বিষয়ে নিজস্ব মতও প্রকাশ করেছিলেন। অর্থাৎ বাহিনীর সব কার্যক্রমের বিষয়ে শেখ হাসিনা জানতেন। প্রতিবেদনে বলা হয়, আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসবিরোধী বয়ান ভারতের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক নিরাপত্তা সহযোগিতার ক্ষেত্রেও প্রতিফলিত হয়েছে। এই সম্পর্ক যৌথ অভিযানে, আন্তঃসীমান্ত সমন্বয়ে ও আইনবহির্ভূত কার্যক্রমেও রূপ নেয়। একাধিক ভুক্তভোগী কমিশনকে বলেছেন, কীভাবে তাদের ভারতের হেফাজত থেকে বাংলাদেশের গোয়েন্দা সংস্থার কাছে কিংবা বাংলাদেশের হেফাজত থেকে ভারতের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
- ট্যাগ:
- বাংলাদেশ
- গুম
- বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড