‘মব’ আমাদের সংস্কৃতির অংশ নয়

www.ajkerpatrika.com অধ্যাপক ড. মো. গোলাম রহমান প্রকাশিত: ১৮ জুন ২০২৫, ১৫:৩৯

সংবাদপত্রের পাতায় প্রতিদিন অসংখ্য সংবাদ ছাপা হয়, পাঠকেরা সেসব পাঠ করেন। বিশ্বে গণমাধ্যম নিয়ে আলোচনায় দেখা যায়, বেশির ভাগ সংবাদ নিয়ে পাঠকেরা তেমন মাথা ঘামান না। তবে হঠাৎ কোনো কোনো সংবাদ তাঁদের মনে দাগ কাটে। শুধু দাগই কাটে না, বেশ প্রতিক্রিয়ার জন্ম দেয়। যে কারণে সংবাদ প্রকাশ একটি দায়িত্বপূর্ণ কাজ। হেলাফেলায় এই কাজটি সমাধা করার কোনো সুযোগ নেই। সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ড কিংবা রাজনীতি, সমাজনীতি, অর্থনীতি—এসব বিষয়ে কমবেশি পাঠকের আগ্রহ থাকে এবং এই আগ্রহের চাহিদা থেকেই তৈরি হয় সংবাদমাধ্যমের দায়বদ্ধতা। সাংবাদিকেরা যথেষ্ট শ্রম ও ঘামে সংবাদ সংগ্রহ করে সেগুলোকে পাঠকের পাঠ করার উপযোগী করে পরিবেশন করে থাকেন। কোনো কোনো সংবাদ সমাজে শুধু প্রতিক্রিয়াই সৃষ্টি করে না, বরং সমাজ প্রগতির অংশ হিসেবে মানব কল্যাণে অবদান রাখে।


যখন দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক ঘটনাবলি পাঠককে নানা চিন্তায় দোলাচলে ফেলে, তখন কোনো কোনো সংবাদ তাঁদেরকে বেশ বিড়ম্বনায়ও ফেলে। এমন একটি সংবাদের প্রতি দৃষ্টি পড়ে গত শনিবার। আজকের পত্রিকার প্রথম পৃষ্ঠায় প্রকাশিত একটি সংবাদ, যার শিরোনাম, ‘মব সৃষ্টি করে ১০ মাসে ১৭২ জনকে হত্যা’। সংবাদটি হচ্ছে: ‘রাজধানীর দারুস সালামের দ্বীপনগর এলাকায় গত ৩১ মে মাইকিং করে তানভীর ও ফাহিম নামের দুই তরুণকে পিটিয়ে হত্যা করে স্থানীয়রা। স্থানীয়সহ পুলিশের দাবি, নিহতরা মাদক কারবারি। এ কারণে এলাকাবাসী ক্ষিপ্ত হয়ে তাঁদের পিটিয়ে হত্যা করে। পরদিন একই এলাকা থেকে রাসেল নামের এক কিশোরের রাস্তায় পড়ে থাকা লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। দারুস সালাম জোনের সহকারী কমিশনার ইমদাদ হোসেন জানিয়েছেন, নিহত তানভীর ও ফাহিম মানুষকে হুমকি-ধমকি দিচ্ছিলেন, স্থানীয়রা ক্ষিপ্ত হয়ে পিটুনি দিলে ঘটনাস্থলেই তাঁরা মারা যান।’


এই সংবাদ থেকে জানা যায়, গত ১০ মাসে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ১৭২ জনকে বিভিন্ন অপবাদ দিয়ে হত্যা করা হয়েছে বলে আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) দাবি করেছে। তাঁরা আরও বলেছে, কোথাও চোর-ছিনতাইকারী-চাঁদাবাজ এবং কোথাও ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের সহযোগী ও দোসর অপবাদ দিয়ে মব সৃষ্টি করে এসব মানুষকে হত্যা করা হয়েছে।



মানবসমাজের কত দূর অপমান ও অবমাননা হলে এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়, তা ভেবে পাই না। সৃষ্টিকর্তার মহান সৃষ্টির এই অধঃপতন কি শুধু বাংলাদেশে? সারা বিশ্বে আজ এমন ঘটনার অনেক উদাহরণ হয়তো পাওয়া যাবে কিন্তু তারপরও আমাদের এই সোনার বাংলায় এমন সামাজিক অধঃপতনের জন্য আমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে, এটা কি ভাবা যায়? আইনের শাসনের চরম অধঃপতনের নজির সৃষ্টি করে চলেছি আমরা। সারা বিশ্ব যখন জ্ঞানবিজ্ঞানের চর্চায় ধাবমান, উন্নত জীবনব্যবস্থার প্রতি অঙ্গীকার নিয়ে নিজেদের এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে, তখন আমরা রাজনীতির হিসাব কষছি, সরকারব্যবস্থার ব্যবস্থাপনা নিয়ে আলোচনা করছি আর মানুষের জীবন নিয়ে ছেলেখেলা করছি। মানুষের কল্যাণে মানবিক আচরণ না করে মানুষ হত্যার খেলা দেখছি। কী দুঃসহ এ জীবন! কী অমানবিক আমাদের আচরণ!


প্রায়ই শোনা যায় কিশোর গ্যাংয়ের কথা। সমাজের এক অধঃপতিত অবস্থারই প্রতিফলন হচ্ছে উঠতি বয়সের ছেলেমেয়েদের দিগ্‌ভ্রান্ত এমন আচরণ। নইলে পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে কিশোরেরা এমন আচরণ কীভাবে করতে পারে? পরিবারের বন্ধন কি শিথিল হয়ে গেল? একটি পরিবারে ছেলেমেয়েরা বয়ঃসন্ধি কাল পেরিয়ে প্রকৃত নাগরিক দায়িত্ব পালন করবে, এটাই তো কাম্য। অথচ আজকাল পিতামাতা কিংবা অভিভাবকেরা তাঁদের সন্তান মানুষ করতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন। তাদের সুপথে চালাতে পারছেন না। যাঁরা পারছেন না, তাঁদের আহাজারি কি আমরা শুনতে পাই না?


মব সৃষ্টি করে মানুষ মারা পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাই সমানভাবে দায়ী হতে পারে এবং এই ইচ্ছাকৃত হত্যার শাস্তি মৃত্যুদণ্ড অথবা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। এটা আমরা জানি।


আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সম্প্রতি বলেছে, আইন নিজের হাতে তুলে না নিতে। কিন্তু প্রকৃত অবস্থা হচ্ছে, পুলিশ ও সরকারের পক্ষ থেকে বারবার অনুরোধ করা হলেও এই সমাজ মব ও গণপিটুনি প্রতিরোধ করতে পারছে না। তবে এবার কঠোর হওয়ার ঘোষণা দিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সেনাবাহিনী। সম্প্রতি কিছু ঘটনা প্রতিহত করেছে পুলিশ, র‍্যাব ও সেনাবাহিনী। সংবাদে প্রকাশ, গত ১৬ মে ধানমন্ডিতে একজন প্রকাশককে ধরার জন্য মব সৃষ্টি করে কয়েকজন যুবক। তাঁকে গ্রেপ্তারের জন্য পুলিশকে চাপ দেয় তারা, তবে ধানমন্ডি থানার ওসির দৃঢ় তৎপরতায় সেই মব প্রতিরোধ করা সম্ভব হয়।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও