তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলমকে ঘিরে কিছুদিন ধরে নানা তর্কবিতর্ক চলছে। এখানে মাহফুজের দায় কতটা, আবার তাঁকে বিতর্কিত করে তুলতে বিভিন্ন পক্ষের তৎপরতাই–বা কতটা, তা আমরা দেখার চেষ্টা করব। সম্প্রতি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলন ঘিরে এই তর্কবিতর্ক ধুমিয়ে উঠেছে।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলের সমস্যা নিয়ে আন্দোলনকারীদের আশ্বস্ত করতে সরকারের পক্ষ থেকে গিয়েছিলেন মাহফুজ আলম। সেখানে তিনি আক্রমণের শিকার হন। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী তাঁকে বোতল ছুড়ে মারেন। পরে ওই শিক্ষার্থীকে ডিবি হেফাজতে নেওয়া হয়, ছেড়েও দেওয়া হয়। কিন্তু মুক্তির পর তাঁর বক্তব্য নিয়ে মাহফুজকে নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়।
ঘটনা মূলত কী ছিল, তার প্রেক্ষাপটই এই লেখার বিষয়বস্তু।
গণ-অভ্যুত্থানের পর ‘মাস্টারমাইন্ড’ তকমার কারণে শুরু থেকে আলোচনায় ছিলেন মাহফুজ আলম। এটিকে কেন্দ্র করে তিনি নানাভাবে টার্গেটে পরিণত হন। তাঁকে ঘিরে ভারতীয় মিডিয়া এবং সদ্য নিষিদ্ধঘোষিত আওয়ামী লীগের লাগাতার অপপ্রচার চলে।
অভ্যুত্থানের পর কিছুদিন যেতে না যেতেই অভ্যুত্থানের শক্তিগুলো বিভক্ত হয়ে যার যার রাজনৈতিক পরিস্থিতির ওপর নিজেদের দখলদারি কায়েমের জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়ে। গণ-অভ্যুত্থানে যারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল, তার একটি পক্ষ ছিল বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ছাত্রসংগঠন বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির এবং তাদের বর্তমান ও সাবেক নেতা-কর্মীরা। তাঁরা দাবি করতে থাকেন, তাঁদের ভূমিকার কারণেই এ গণ-অভ্যুত্থান সংঘটিত হয়েছে।
শিবিরের বর্তমান ও সাবেকদের অনেকে দাবি করেন, মাহফুজ ছিলেন শিবিরেরই জনশক্তি। মাহফুজ আলম গণ-অভ্যুত্থানের মাস্টারমাইন্ড হয়ে থাকলে এ অভ্যুত্থানের পেছনের মূল কারিগর তো তাহলে আসলে শিবিরই।
কিন্তু মাহফুজ এ–জাতীয় দাবিকে বারবারই অস্বীকার করে এসেছেন। তিনি বলে এসেছেন, শিবিরকে বিমানবীকরণের আওয়ামী ফ্যাসিবাদী জুলুমের বিরুদ্ধে বরং তিনি সরব ছিলেন। শিবিরের ওপর জুলুমের প্রতিবাদ করা আর শিবিরের রাজনীতি করা এক কথা নয়। তবে আন্দোলন করতে গিয়ে শিবিরের সঙ্গে তাঁর নানা যোগাযোগ হয়েছে।
এসব তর্কবিতর্কের মধ্যে একাত্তরে জামায়াতের ভূমিকা, চব্বিশ দিয়ে একাত্তরের চেতনাকে ঢেকে ফেলার চেষ্টাসহ নানা গুরুত্বপূর্ণ প্রসঙ্গ হাজির হতে থাকে। একাত্তরের সপক্ষে মাহফুজ আলম যতবারই নিজের অবস্থান স্পষ্ট করেছেন, ততবারই জামায়াত-শিবির মহল থেকে তাঁকে নিয়ে সমালোচনা উঠেছে, নামে–বেনামে আক্রমণ করা হয়েছে।
নতুন বিতর্কের সূত্রপাত
আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে শাহবাগে জমায়েত হলো। সেখানে একদল লোক স্লোগান দিল, ‘গোলাম আযমের বাংলায়, আওয়ামী লীগের ঠাঁই নাই।’ স্লোগানটি নিয়ে দেশজুড়ে ক্ষোভের সঞ্চার ঘটে। সেই তপ্ত সময়ে মাহফুজ ফেসবুকে একটি পোস্ট দেন। সেখানে তিনি বলেন, ‘৭১–এর প্রশ্ন মীমাংসা করতেই হবে। যুদ্ধাপরাধের সহযোগীদের ক্ষমা চাইতে হবে। বাংলাদেশে রাজনীতি করতে হলে পাকিস্তান পন্থা বাদ দিতে হবে। পাকিস্তান এ দেশে গণহত্যা চালিয়েছে।…ইনিয়ে-বিনিয়ে গণহত্যার পক্ষে বয়ান উৎপাদন বন্ধ করতে হবে।’
এই পোস্টের কারণে জামায়াত-শিবির মহল আবারও ভীষণভাবে ক্ষুব্ধ হয়। তারা অভিযোগ করে, মাহফুজ আবারও জামায়াত-শিবিরকে বিমানবীকরণের পথ খুলে দিচ্ছেন। এরপর তাঁর ওপর ভারতীয় চর বা নব্য শাহবাগির তকমা লাগানো শুরু হলো। এমনকি মাহফুজের সাবেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তামিরুল মিল্লাত কামিল মাদ্রাসায় তাঁর নাম লিখে গরু জবাইয়ের মতো রুচিহীন ঘটনাও ঘটল।