You have reached your daily news limit

Please log in to continue


নারী শ্রমিক বাঁচলে দেশ এগোবে

মে দিবস আসে প্রতিবছর, আসে শ্রমিকের অধিকার ও মর্যাদার কথা মনে করিয়ে দিতে। ১৮৮৬ সালের শিকাগোর হে মার্কেট আন্দোলনের আগুন আজও নিভে যায়নি, বরং সময়ের পরম্পরায় সেই আগুনই আলো হয়ে ছড়িয়ে পড়ে বিশ্বজুড়ে শ্রমিকশ্রেণির অধিকারের প্রশ্নে। বাংলাদেশে মে দিবসের তাৎপর্য গভীর এ কারণে যে এই দেশে অর্থনীতির এক বড় চালিকাশক্তিই গড়ে উঠেছে শ্রমিকদের কাঁধে ভর করে—বিশেষত নারী শ্রমিকদের কাঁধে। পোশাক খাত থেকে শুরু করে কৃষি, ইটভাটা, বাসাবাড়ির গৃহপরিচারিকা, কলকারখানা, চামড়াশিল্প, এমনকি বিদেশে কর্মরত নারী শ্রমিকেরা অর্থনীতির চাকা ঘোরানোর বাস্তব কারিগর। অথচ এই নারী শ্রমিকের জীবনে মে দিবসের আলো কতটা পৌঁছেছে, সেটিই প্রশ্ন।

বাংলাদেশে বর্তমানে পোশাকশিল্পে সরাসরি নিয়োজিত শ্রমিকের সংখ্যা ৪০ লাখের বেশি, যার মধ্যে আনুমানিক ৬০-৬৫ শতাংশ নারী। শ্রম মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, এই খাতেই ২০২৩-২৪ অর্থবছরে রপ্তানি আয় হয়েছে ৪৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা দেশের মোট রপ্তানি আয়ের প্রায় ৮৪ শতাংশ। এত বড় অবদানের পরও নারী শ্রমিকেরা পাচ্ছেন না ন্যায্য মজুরি, নিরাপদ কর্মপরিবেশ, কিংবা সিদ্ধান্ত গ্রহণের পর্যায়ে প্রতিনিধিত্ব। শ্রম আইনে মাতৃত্বকালীন ছুটি, কর্মস্থলে যৌন হয়রানির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা বা ট্রেড ইউনিয়নের অধিকার থাকলেও বাস্তবে তা প্রাপ্তির চিত্র অত্যন্ত সীমিত। এমনকি ২০২২ সালে গণমাধ্যম ও এনজিও সংস্থাগুলোর জরিপে দেখা গেছে, ঢাকার উপশহরগুলোতে কাজ করা নারী শ্রমিকদের মধ্যে ৪৭ শতাংশই জানেন না শ্রমিক হিসেবে তাঁদের কী অধিকার রয়েছে। আবার কারখানায় ট্রেড ইউনিয়ন গঠন করতে গিয়ে চাকরি হারিয়েছেন বা হুমকি পেয়েছেন—এমন ঘটনার সংখ্যাও নেহাত কম নয়।

এতসব প্রতিকূলতার মধ্যেও নারী শ্রমিকেরা তাঁদের জীবন চালিয়ে যাচ্ছেন। একদিকে সংসারের দায়িত্ব, সন্তান লালন, অন্যদিকে কর্মক্ষেত্রে দীর্ঘ সময় ধরে কঠোর পরিশ্রম—এই দ্বৈত ভার সয়ে নেওয়ার শক্তি তাঁরা দেখিয়েছেন, কিন্তু পেয়েছেন অল্প কিছু সম্মান। পুরুষ সহকর্মীদের তুলনায় প্রায় ২০ শতাংশ কম মজুরি পান বহু নারী শ্রমিক, এমনকি একই ধরনের কাজ করেও। কাজ শেষে বাড়ি ফিরে গৃহস্থালি কাজ চালিয়ে যেতে হয় যান্ত্রিক এক নিঃশব্দ জীবনের মতো।



শ্রমিক আন্দোলন বাংলাদেশে অনেক সময়ই রাজনৈতিক দলগুলোর হাতিয়ার হয়ে উঠেছে, যার ফলে আন্দোলনের মূল লক্ষ্য শ্রমিককল্যাণ নয়, বরং ক্ষমতার খেলায় নিজেদের অবস্থান শক্ত করা। এই পদ্ধতিতে সবচেয়ে বড় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে নারী শ্রমিকেরা, কারণ তাঁরা নেতৃত্বে নেই, তাই তাঁদের দাবি কেবল ব্যানার-ফেস্টুনে সীমাবদ্ধ থেকে যায়। বাস্তব উন্নয়ন হয় না। এমন প্রেক্ষাপটে প্রয়োজন ছিল একটি সুস্থ, গণতান্ত্রিক, অংশগ্রহণমূলক শ্রমিক আন্দোলনের, যেখানে নারীর কণ্ঠস্বর থাকবে সামনে, যার নেতৃত্বে নারী থাকবেন, যিনি জানেন একজন নারী শ্রমিকের প্রকৃত প্রয়োজন কী।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে শ্রমিক আন্দোলনের চেহারাও বদলেছে সময়ের সঙ্গে। এখন আন্দোলনের রূপ কেবল রাস্তার বিক্ষোভ নয়, বরং নীতিনির্ধারণে সক্রিয় অংশগ্রহণ, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জনমত গঠন বা শ্রমিক-মালিক-সরকারের মধ্যকার ত্রিপক্ষীয় আলোচনা। দক্ষিণ কোরিয়ায় নারী শ্রমিক সংগঠনগুলোর আন্দোলন শুধু মজুরি বৃদ্ধির জন্য নয়, বরং কর্মস্থলে ডে-কেয়ার সেন্টার প্রতিষ্ঠা, গর্ভকালীন স্বাস্থ্যসেবা ও কর্মক্ষেত্রে হেনস্তার বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা তৈরির জন্য। সুইডেনে ট্রেড ইউনিয়নগুলো সরকারের সঙ্গে চুক্তির মাধ্যমে বছরে একাধিকবার মজুরিকাঠামো ও কর্মঘণ্টা পর্যালোচনা করে। ভারতে সেলফ এমপ্লয়েড উইমেন্স অ্যাসোসিয়েশন (এসইডব্লিউএ) নারী শ্রমিকদের শুধু সংগঠিতই করেনি, বরং জীবনমান উন্নয়নের জন্য বিকল্প অর্থনৈতিক কাঠামো তৈরি করেছে, যেখানে নারীরা নিজেরাই নেতৃত্ব দেয় এবং আয় উৎপাদন করে।

বাংলাদেশেও এমন দু-একটা সংগঠন রয়েছে, যারা চেষ্টা করছে শ্রমিকদের প্রশিক্ষণ, অধিকারসচেতনতা ও আইনি সহায়তা দিতে। তবে এই উদ্যোগগুলো এখনো মূল স্রোতের শ্রমিক রাজনীতিতে খুব বেশি প্রভাব ফেলতে পারেনি। মূল বাধা হলো শ্রমিক রাজনীতির অবকাঠামোতে গণতন্ত্র ও স্বচ্ছতা নেই, নেই প্রকৃত প্রতিনিধিত্ব।

এই মে দিবসে তাই প্রয়োজন স্লোগান নয়, প্রয়োগ। প্রয়োজন নারী শ্রমিকদের মর্যাদার প্রশ্নে একটি সম্মিলিত জাতীয় উদ্যোগ, যা তাঁদের কাজকে কাজ হিসেবে দেখে, দয়া বা করুণার চোখে নয়। শ্রম আইন সংশোধন করে বাস্তববান্ধব ও নারী সহায়ক করে তোলা, ট্রেড ইউনিয়ন গঠনের অধিকার নিশ্চিত করা, কর্মক্ষেত্রে স্বাস্থ্য, নিরাপত্তা ও মাতৃত্বকালীন সুরক্ষা নিশ্চিত করা—এ সবই হতে পারে মে দিবসের যথার্থ শ্রদ্ধাঞ্জলি।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন